shono
Advertisement
Lord Shiva

এই মন্দিরে শিবলিঙ্গের শরীরে থাকে তুলসীর গন্ধ!

এই শিবলিঙ্গকে 'চিকনা মহাদেব' নামেও ডেকে থাকেন অনেকেই।
Published By: Biswadip DeyPosted: 06:21 PM Feb 25, 2025Updated: 06:21 PM Feb 25, 2025

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ছত্তিশগড়ের মহাসমুদ্রগড় জেলায় শিরপুর অঞ্চলে মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা এক প্রাচীন ক্ষেত্র। চিত্রোৎপলা নদী তীরে ভূমিতলের বেশ অনেকটাই নীচে জায়গাটির অবস্থান। সম্প্রতি সেখানে খনন কাজ চালানো হলে, খননে প্রাচীনকালের বিভিন্ন রকম নিদর্শনের সঙ্গে এক বহু প্রাচীন শিবক্ষেত্রের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। সেই ধ্বংসাবশেষের থেকে সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় এক বিশালাকার শিবলিঙ্গেরও নবোদয় ঘটে। প্রত্নতাত্ত্বিক বিশেষজ্ঞেরা বলেছেন, শিবলিঙ্গটি বহু প্রাচীনকালের এবং এর সঙ্গে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কিছু মিল রয়েছে।

Advertisement

বড়ই আশ্চর্যের এই শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গের শরীর থেকে সারাক্ষণ আপনা থেকেই তুলসীর গন্ধ বের হতে থাকে। যেদিন থেকে কথাটা কানে এসেছে, সেদিন থেকেই শৈব এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থীদের কাছে শিবলিঙ্গটি সমান আদরণীয় হয়ে উঠেছে। শিবলিঙ্গটিকে একবার চোখের দেখা আর একটুখানি ছুঁয়ে দেখবার জন্যে মানুষের কৌতূহল ও উৎসাহের যেন শেষ নেই।

গর্ভে প্রাচীন সভ্যতার খোঁজে বিগত কয়েক বছর ধরে ছত্তিশগড় ভগ রাজ্যের মহাসমুদ্রগড় জেলায় অনেক জায়গায় পুরাতত্ত্ব দ্বারা খনন কাজ চালানো হচ্ছে। খননে বহু জায়গা থেকেই প্রাচীনকালের বিভিন্ন আসবাব, গহনা, মুদ্রা, তাম্রপত্র, বাসন, প্রতিমা, প্রভৃতি বহু রকম নিদর্শন পাওয়া গেছে। বহু জায়গায় মাটি খুঁড়ে প্রাচীনকালের বেশ কিছু শিবলিঙ্গও আবিষ্কার করা হয়েছে।

অতি সম্প্রতি মহাসমুদ্রগড় জেলার মুখ্য কার্যালয় থেকে কমবেশি চল্লিশ কিলোমিটার দূরে শিরপুর নামে জায়গার কাছে চিত্রোৎপলা নদীর তীরে ভূমিতলের বেশ অনেকটাই নীচে খননের ফলে বহু প্রাচীনকালের এক শিব মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মিলেছে। সেই ধ্বংসাবশেষ থেকে অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গেই সম্পূর্ণ অক্ষত অবস্থায় এক বিশালাকার শিবলিঙ্গেরও যেন নতুন ভাবে উদয় ঘটেছে। শিবলিঙ্গটির সঙ্গে দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের কিছু কিছু মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রত্নতাত্বিক বিশেষজ্ঞদের মতে শিবলিঙ্গটি বহু প্রাচীনকালের। মাটির নীচে চাপা পড়ে থাকা মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ পরীক্ষা করে তাঁরা বলেছেন মন্দিরটির স্থাপনা দুই হাজার বছর আগে হয়ে থাকবে। ছত্তিশগড়ের পুরাতত্ত্ব পরামর্শ দাতাদের অনেকে জানিয়েছেন কয়েক বছরের খনন কার্যে এখনও পর্যন্ত অনেক শিবলিঙ্গ আবিষ্কার হয়েছে। কিন্তু তার মধ্যে এই প্রথমবার কোনও বিশেষ ও বিশালাকার শিবলিঙ্গের সাক্ষাৎ মিলেছে। ছত্তিশগড় রাজ্যে পাওয়া প্রাচীন শিবলিঙ্গদের মধ্যেও এটি সবচেয়ে উপরে জায়গা করে নিয়েছে। তাদের দাবি শিবলিঙ্গটি শুধুই প্রাচীন নয়-রাজ্যের মধ্যে বিশালাকার শিবলিঙ্গ মধ্যেও অন্যতম। যেদিন থেকে কথাটা কানে গেছে সেদিন থেকেই শিবলিঙ্গটিকে একবার চোখের দেখা, আর একটুখানি ছুঁয়ে দেখবার জন্যে মানুষের কৌতূহল আর উৎসাহের শেষ নেই। শৈব এবং বৈষ্ণব উভয় সম্প্রদায়ের কাছেই ইতিমধ্যেই শিবলিঙ্গটি সমান আদরণীয় হয়ে উঠেছে। এটি এমন একটি বিশেষ শিবলিঙ্গ, যার শরীর থেকে সারাক্ষণ আপনা থেকেই শুধু তুলসীর গন্ধ বেরিয়ে আসছে। এই বৈশিষ্টের কারণে বিশেষজ্ঞগণ এটিকে গন্ধেশ্বর শিবলিঙ্গ আখ্যা দিয়েছেন। এবং ভাঙা দেবালয়টির গন্ধেশ্বর মন্দির নাম রাখা হয়েছে। এই শিবলিঙ্গ শৈব ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষের মিলনের প্রতীক।

কাশীর বিশ্বনাথ বা উজ্জয়িনীর মহাকালেশ্বর যে ধরনের পাথরে তৈরি, গন্ধেশ্বর শিবলিঙ্গ তেমনই কোনও উন্নত শ্রেণীর পাথরে সৃষ্ট। উভয় জ্যোতির্লিঙ্গের ন্যায় গন্ধেশ্বর শিবলিঙ্গও সম মসৃণ, উজ্জ্বল ও চাকচিক্যে ভরা এবং তেমনই বিশালাকার। এর মসৃণতা ও চাকচিক্যে মোহিত হয়ে স্থানীয় মানুষ ভালোবেসে এই শিবলিঙ্গকে 'চিকনা মহাদেব' নামেও ডেকে থাকেন। বিপুলায়তন শিবলিঙ্গটি লম্বায় চার ফুট এবং এর গোলাকার ভাব আড়াই ফুট। শিবলিঙ্গে একই সাথে বিষ্ণুসূত্র আর শিবধারা মিলিত রয়েছে। উদ্ভাবিত মন্দিরটি পুরোপুরি ভগ্ন অবস্থায় উদ্ধার হয়েছে। এই অঞ্চলে পাওয়া শিলালেখন থেকে অনুমান করা হয়, বিশাল এলাকা জুড়ে আবিষ্কৃত ধ্বংসস্তূপাকার মন্দিরটি প্রথম শতকে বানানো হয়েছিল। মনে করা হয় এটির নির্মাণ সরভপুরি রাজারা করেছিলেন।

শোনা যায়, বারো শতকের আশেপাশে এ অঞ্চলে একবার প্রবল ভূমিকম্প হয়েছিল। আর সেই ভূমিকম্প সঙ্গে সঙ্গে চিত্রোৎপলা মহানদীতে সর্বনাশা মহাপ্লাবন ডেকে নিয়ে এসেছিল। বলা হয়ে থাকে সেই সময়ে মহাসমুদ্রগড় এলাকায় উন্নত সভ্যতা বিরাজ করত। সঙ্গে সঙ্গে অঞ্চলটি বৌদ্ধ, বৈষ্ণব এবং শৈব সম্প্রদায়ের মিলন ভূমিও ছিল। প্রাচীনকালে শিরপুর বৌদ্ধ ও শৈব নগরী নামে প্রসিদ্ধিও পেয়েছিল।

বারো শতকে এ অঞ্চলে মঠ, মন্দির ও বিহারের অভাব ছিল না। শিরপুরের গন্ধেশ্বর মহাদেব মন্দির এ সময়ে এলাকার সর্ববৃহৎ মন্দির রূপে প্রতিষ্ঠা পেয়েও থাকতে পারে। মনে করা হয় পুরাণের হারিয়ে যাওয়া কোনও তীর্থের সঙ্গেও এর সম্পর্ক থাকা অসম্ভব নয়। পুরাতত্ত্ববিদগণ ধারণা করছেন বারো শতাব্দীর সর্বনাশা ভূমিকম্প ও মহাপ্লাবন শিরপুর ও গন্ধেশ্বর মন্দিরকে সর্বতোভাবে ধ্বংস ও ধূলিসাৎ করেছিল। তাতেই সবকিছু মাটি ও নদীর পলির বহু নীচে চলে যায়। শিরপুরে কয়েক বছরের খননে অনেক কিছুর সঙ্গে প্রাচীন শহরের সংরচনা ও গন্ধেশ্বর মন্দিরের ধ্বংসস্তূপও উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। চিলোৎপলা নদীর তট থেকে উঠে এসেছে মন্দিরের স্তম্ভ। যত খনন এগিয়ে চলেছে ততই প্রাচীনকালের নিদর্শন বেশি বেশি করে ধরা দিচ্ছে। বারো শতকের আগে শিরপুর ভীষণ সুন্দর ও সমৃদ্ধপূর্ণ নগরী ছিল। যদি ওই সময় ভূমিকম্প ও মহাপ্লাবন না ঘটত, তাহলে আমরা ভারতে আর একটা উন্নত প্রসিদ্ধ নগরীর পাশাপাশি শৈব ও বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের সংমিলিত ধারার বিখ্যাত এক মন্দিরের বিদ্যমান অবস্থা দেখতে পেতাম।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • বড়ই আশ্চর্যের শিরপুর অঞ্চলের এই শিবলিঙ্গ।
  • শিবলিঙ্গের শরীর থেকে সারাক্ষণ আপনা থেকেই তুলসীর গন্ধ বের হতে থাকে।
  • যেদিন থেকে কথাটা কানে এসেছে, সেদিন থেকেই শৈব এবং বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের পুণ্যার্থীদের কাছে শিবলিঙ্গটি সমান আদরণীয় হয়ে উঠেছে।
Advertisement