সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইন্দোনেশিয়ার গুনুং ব্রোমো অঞ্চল। এখানকার মানুষেরা 'টেংগেরিজ' নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে পূর্ব জাভার এক জীবন্ত আগ্নেয়গিরি। মাঝেমধ্যেই সেই আগ্নেয়গিরির মুখ থেকে জ্বলন্ত লাভা ও ছাই বেরিয়ে আসে। তবে কোনও বড় অগ্নুৎপাতের ঘটনায় এখনও অবধি বিপর্যয় দেখেননি স্থানীয়রা। আর এখানেই ঘনীভূত রহস্য! এই আগ্নেয়গিরি সক্রিয় থাকলেও গত ৭০০ বছর ধরে কোনরকম বিপদ ব্যতিরেকেই দিব্বি জীবন কাটাচ্ছেন স্থানীয় টেঙ্গার সম্প্রদায়।
নেপথ্যে রয়েছে মাউন্ট ব্রোমো আগ্নেয়গিরির উপরে অবস্থিত একটি গণেশ মূর্তি। এটি ৭০০ বছরের বেশি পুরনো বলে বিশ্বাস করেন এখানকার মানুষেরা। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন গুনুং ব্রোমো অঞ্চলকে সাতশো বছর ধরে রক্ষা করে আসছেন গণেশ। আর সেজন্যই তাঁদের রক্ষাকারী এই দেবতার কাছে প্রতিদিন পুজো দেন তাঁরা।
হিন্দু দেব-দেবীর মধ্যে গণেশ হলেন বিঘ্ননাশক। তাঁর আশীর্বাদে জীবনের সমস্ত বাধা দূর হয়। একই সঙ্গে তিনি বুদ্ধি, প্রজ্ঞা, শিল্প ও বিজ্ঞানের দেবতা। তিনি ভক্তের সকল বিপদ হরণ করে জ্ঞান ও সাফল্যের পথ দেখান। মাউন্ট ব্রোমোর এই প্রাচীন মূর্তি এক ঐশ্বরিক সুরক্ষার প্রতীক। একই সঙ্গে প্রাকৃতিক সুরক্ষার ঢাল হয়ে রক্ষা করেন সকলকে। ভক্তের বিশ্বাস ও ভরসায় মূর্তিটিও কয়েকশো বছর যাবৎ অক্ষুণ্ণ রয়েছে। অনেকে মনে করেন এই আগ্নেয়গিরির নামটি পরম প্রজাপতি ব্রহ্মার নাম অনুসারে করা হয়েছিল।
টেংগার ম্যাসিফ উপজাতিরা প্রায় ৭০০ বছর আগে এই মূর্তিটি স্থাপন করেছিল বলে জানা যায়। আগ্নেয়গিরির কাছে বাসস্থান হওয়ায় নিজেদের সুরক্ষার জন্য ভগবান গণেশের মূর্তিটি তারা সেখানে স্থাপন করে। এই মূর্তিতে তারা নিয়মিত পুজো দিত। এমনকী আজও প্রচীন ঐতিহ্য বজায় রেখে নানা আচার ও নিষ্ঠার সঙ্গে এখানে পুজো দেওয়ার চল রয়েছে। গণেশ চতুর্থীতে বহু ভক্তের ঢল নামে এখানে। এমনকী দর্শনীয় স্থান হিসেবেও মাউন্ট ব্রমোর খ্যাতি রয়েছে।
ইন্দোনেশিয়ায় রয়েছে মোট ১৪১টি আগ্নেয়গিরি। এর মধ্যে ১৩০টি জীবন্ত। এখানে বহু স্থানেই হিন্দু দেবতা গণেশের পুজো প্রচলন রয়েছে। এই সব মন্দিরগুলোতে নিয়মিত পূজা-অর্চনা হয়ে থাকে। একই ভাবে ৭০০ বছর আগের এই গণেশ মূর্তিটি আজও পুজো হয়। স্থানীয়দের বিশ্বাস, মাউন্ট ব্রোমো এলাকাটি তিনিই রক্ষা করে আসছেন। মানুষের ভক্তি ও বিশ্বাসের এমন সহাবস্থান সত্যিই বিরল!
