shono
Advertisement
Char Dham

তিনটিতে বিষ্ণুর অবতার, একটিতে পূজিত হন মহাদেব, চারযুগের প্রতীক ভারতের চারধাম

পুজো দিয়ে স্বপ্নপূরণ হয়েছে অগণিত ভক্তের।
Published By: Subhankar PatraPosted: 04:17 PM Jul 08, 2025Updated: 04:45 PM Jul 08, 2025

শুভঙ্কর পাত্র: দেশের চার প্রান্তে চার মন্দির। চার রূপে বিরাজমান দুই দেবতা। যাঁরা চার যুগের প্রতীক! সব মিলিয়েই ভারতের চারধাম।

Advertisement

পূর্ব বঙ্গোপসাগরের তীরে পুরী। মান্নার উপসাগরের তীরে দেশের দক্ষিণে রামেশ্বরম। আরব সাগর ও গোমতী নদীর তীরে দ্বারকা। উত্তরের হিমালয়ে বদ্রীনাথ। এই চার মন্দির ভারতের চারধাম। চারদিকের তিনটি ধামে নারায়ণের অবতার ও একটিতে দেবাদিদেব মহাদেব পূজিত। তবে চারটির সঙ্গেই যুক্ত বিষ্ণু।

গীতার শ্লোকে রয়েছে, 'যদা যদা হি ধর্মস্য/ গ্লানির্ভবতি ভারত/ অভ্যুত্থানম অধর্মস্য/ তদাত্মানং সৃজম্যাহম….।' অর্থাৎ ভারতে ধর্ম বিপদে পড়লে তিনি যুগে যুগে জন্ম নেবেন। চারধাম সেই চার যুগেরই প্রতীক! তার একমেবাদ্বিতীয়ম সাক্ষ্যবহনকারী দেশের চারকোণে চারটি মন্দির।

হিন্দুশাস্ত্র অনুযায়ী, বদ্রীনাথে পূজিত নারায়ণ। তিনি সেখানে সত্যযুগের প্রতীক। রামেশ্বরমে মহাদেব রামের হাতে প্রতিষ্ঠিত ও পূজিত। রাম ত্রেতাযুগে বিষ্ণুর অবতার। কৃষ্ণ দ্বারকা স্থাপন করেছিলেন দ্বাপরযুগে। কলিতে বিষ্ণু জগন্নাথ রূপে। আদি শঙ্করাচার্যও দেশের চার কোণায় এই চারটি মন্দিরকেই চারধাম হিসাবে মেনেছেন। 

বদ্রীনাথ

রাজা ভগীরথের তপস্যায় মর্ত্যে নামেন মা গঙ্গা। কিন্তু তাঁর শক্তি সহন করতে পারেনি ধরত্রী। দুই ভাগে ভাগ হয়ে যায় গঙ্গা। অলকানন্দা তার একটি। উত্তরাখণ্ডের এই অলকানন্দা থেকেই আদি শঙ্করাচার্য শালিগ্রাম পাথরের কালো বদ্রীনারায়ণের একটি মূর্তি পেয়েছিলেন। সেই শালিগ্রাম শিলা একটি গুহায় স্থাপন করেছিলেন তিনি। ষোড়শ শতাব্দীতে, গাড়োয়ালের রাজা মূর্তিটি বর্তমান মন্দিরে স্থানান্তরিত করেন। হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বদ্রীনাথ অঞ্চলকে বদরী বা বদ্রিকাশ্রম বলা হয়েছে।

এটি বিষ্ণুর নর-নারায়ণের দ্বৈত রূপের পবিত্র স্থানও। মনে করা হয় এই স্থানে দুই ঋষি ভাতৃদ্বয় নর ও নারায়ণ দিনের পর দিন তপস্যা করেছিলেন। নর ও নারায়ণ নাকি বিষ্ণুরই অবতার! মহাভারতেও এর উল্লেখ রয়েছে। ভগবান কৃষ্ণ অর্জুনকে বলেছিলেন, "তুমি পূর্বে জন্মে নর ছিলে। এবং তোমার সঙ্গী ছিলেন নারায়ণ। আরেকটি পৌরাণিক কাহিনী অনুসারে, এই অঞ্চলটি বন্য বেরি ও বাদারিতে পূর্ণ ছিল। এখানে বিষ্ণু ধ্যানে মগ্ন। দেবী লক্ষ্মী রোদ থেকে তাঁকে ছায়া দেওয়ার জন্য বাদারি গাছের রূপ ধারণ করেছিলেন বলেও জনশ্রুতি রয়েছে। 

বদ্রীনাথ।

দ্বারকা

গুজরাটের দেবভূমি। চারধামের একটি। যা সপ্তপুরী নামেও পরিচিত। ভারতের সাতটি প্রাচীনতম শহরের অন্যতম হল দ্বারকা। এখানেই দ্বারকাধীশ মন্দির। পূজিত স্বয়ং কৃষ্ণ। কৃষ্ণের অপর নাম দ্বারকাধীশ বা দ্বারকেশ্বর। ভগবত পুরাণে দ্বারকাকে কৃষ্ণের রাজধানী বলা হয়েছে। বিশ্বাস এটি গুজরাটের প্রথম রাজধানী।

দেবকীনন্দন ভগবান বিষ্ণুর দ্বাপরযুগের অবতার। সেই হিসাবেই মনে করা হয় এই মন্দির আজও দ্বাপরযুগের প্রতিনিধিত্ব করছে। কৃষ্ণ মথুরায় তাঁর মামা কংসকে পরাজিত করেন।এরপর কংসের শ্বশুর জরাসন্ধ বারবার মথুরা আক্রমণ করতে থাকেন। প্রতিবারই তিনি পরাজিত হন। এইভাবে সতেরোবার মথুরা আক্রমণ করেন তিনি। জরাসন্ধ আঠারোতম আক্রমণের প্রস্তুতি নিচ্ছেন একথা জানতে পেরে কৃষ্ণ ক্লান্ত মথুরাবাসীকে রক্ষা করতে সেখান থেকে আরব সাগর ও গোমতী নদীর তীরে দ্বাকরায় নিজের শহর স্থাপন করেন বলেই জানা যায়। সেখানে তাঁকে উৎসর্গ করা দ্বারকাধীশ মন্দির চারধামের একটি।

দ্বারকাধীশ মন্দির।

রামেশ্বরাম

রামেশ্বরাম তামিলনাড়ুর রামনাথপুরমের একটি শহর। যা পামবান দ্বীপে অবস্থিত। একটি চ্যানেল দ্বারা ভারতের মূল ভূ-খণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। এই রামেশ্বরাম শ্রীলঙ্কার কাছাকাছি ভারতের শেষ অংশ। এখানেই রয়েছে রামেশ্বরাম মন্দির। চারধামের একমাত্র মন্দির যেখানে দেবাদিদেব মহাদেব পূজিত। হিন্দু পুরাণ হিসাবে ত্রেতাযুগের বিষ্ণুর অবতার রাম এই মন্দির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

সিতাকে উদ্ধার করতে রাবণকে হত্যা করেন রাম। একথা সবার জানা। কিন্তু রাবণ ছিলেন ব্রাহ্মণ। রাম ক্ষত্রিয়। ব্রাহ্মণ হত্যার দায় থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ভারতে ফিরে রাম রামেশ্বরামেই মহাদেবের লিঙ্গ স্থাপন করে পুজো করেন। শঙ্কারাচার্য একে চারধামের এক ধাম বলেছেন।

রামেশ্বরাম মন্দির।

পুরী

বঙ্গোপসাগরের তীরে চারধামের একটি শ্রীক্ষেত্র পুরীর জগন্নাথ মন্দির। এখানে মহাপ্রভু জগন্নাথ পূজিত। যাকে নারায়ণের কলি যুগের অবতার বলা হয়। রাজা ইন্দ্রদ্যুম্ন জগন্নাথদেবের স্বপ্নাদেশ পেয়ে তাঁকে মন্দিরে নিয়ে আসেন। কিন্তু তাঁকে মহাপ্রভুর দেখা পেতে বহু কাঠখড় পোড়াতে হয়েছিল। সে আলাদা ইতিহাস। জগন্নাথ এখানে দাদা বলরাম ও বোন সুভদ্রার সঙ্গে পূজিত হন। একমাত্র কলিযুগেই বিষ্ণু দাদা, বোনের সঙ্গে পূজিত। দেশে একমাত্র পুরীই সেই জায়গা। (এখন বাংলার দিঘা-সহ কয়েকটি জায়গায় জগন্নাথ মন্দির স্থাপন করা হয়েছে। সঙ্গে ইসকনের মন্দিরও রয়েছে।)

পুরীর জগন্নাথ মন্দির।

দেশের চারকোনায় এই চারমন্দির নিয়েই চারধাম। পুরীর জগন্নাথ দেবের দর্শন করে শুরু হয় এই যাত্রা। শেষ হয় বদ্রীনাথে। মনে করা হয় ভগবান বিষ্ণু সারাদিনের ভিন্ন সময়ে এই চারধামেই বিরাজমান। বদ্রীনাথে তিনি স্নান করেন। দ্বারকায় বস্ত্র পরেন। পুরীতে আহার গ্রহণ করেন। রামেশ্বরাম তাঁর বিশ্রামের জায়গা।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

হাইলাইটস

Highlights Heading
  • দেশের চার প্রান্তে চার মন্দির।
  • চার রূপে বিরাজমান দুই দেবতা।
  • যাঁরা চার যুগের প্রতীক! সব মিলিয়েই ভারতের চারমাধ।
Advertisement