shono
Advertisement

কলকাতার প্রাচীন কালীবাড়ি গুলির অজানা ইতিহাস, আজ শেষ পর্ব

ঠাকুর রামকৃষ্ণ কাকে মাসি বলে ডাকতেন জানেন? The post কলকাতার প্রাচীন কালীবাড়ি গুলির অজানা ইতিহাস, আজ শেষ পর্ব appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 06:25 PM Oct 26, 2019Updated: 06:27 PM Oct 26, 2019

রাত পোহালেই রাজ্যজুড়ে শক্তির আরাধনায় মাতবে বাঙালি। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের প্রাচীন কালীমন্দির গুলিতে এনিয়ে ধুমধাম শুরু হয়েছে। পিছিয়ে নেই শহর কলকাতাও। এখানে রইল শহরের বেশকিছু প্রাচীন কালীপুজোর খবর। ঘুরে লিখলেন ইন্দ্রজিৎ দাস। আজ শেষ পর্ব।

Advertisement

সিদ্ধেশ্বরী কালী, ঠনঠনিয়া

ঠনঠনিয়া তখন ছিল হোগলা ও লতাগুল্মে ভরা নির্জন অরণ্য। পাশ দিয়ে বয়ে চলে গঙ্গা। এই নির্জনে পঞ্চমুন্ডির আসনে বসে তন্ত্রসাধনা করতেন উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী। তিনি ঘটে মায়ের আরাধনা করতেন। একদিন উদয়নারায়ণ ব্রহ্মচারী রামশংকর ঘোষ বা শংকর ঘোষের হাতে মায়ের পুজোর দায়িত্ব দিয়ে বিদায় নিলেন। ১১১০ বঙ্গাব্দে শংকর ঘোষ ঠনঠনিয়ায় কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করলেন। তৈরি করলেন মাটির সিদ্ধেশ্বরী কালীর মূর্তি। দেবী সিদ্ধেশ্বরীর সেই মৃন্ময়ী মূর্তি আর সাধকের সেই ঘট এখনও নিত্যপুজো হচ্ছে ঠনঠনিয়ার মন্দিরে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ প্রায়ই আসতেন ঠনঠনিয়া সিদ্ধেশ্বরী মায়ের কাছে। অসুস্থ কেশব সেনের অসুখ ভাল হওয়ার জন্য তিনি ডাব-চিনি দিয়ে মাকে পুজো দিয়েছিলেন। প্রতিবছর মৃন্ময়ী মূর্তির অঙ্গরাগ হয় দীপান্বিতা কালীপুজোর আগে। কালীপুজোয় মা সিদ্ধেশ্বরীকে সাজানো হয় রাজরাজেশ্বরী রূপে। কানপাশা, বালা, কঙ্কণ, মানতাসা, সীতাহার, মাথার মুকুট ও নানা গয়নার সঙ্গে বেনারসি শাড়িতে সজ্জিতা হন দেবী সিদ্ধেশ্বরী। কালীপুজোর রাতে মায়ের ভোগে থাকে লুচি, আলুভাজা, পটলভাজা, আলুর দম, গজা, খাস্তা, লেডিকেনি। পরদিন সকালে অন্নভোগ দেওয়া হয়। ভাতের সঙ্গে থাকে তরকারি, মাছ, চাটনি, পায়েস। দীপান্বিতা কালীপুজোয় দু’টি ছাগবলি দেওয়া হয়। এছাড়াও ভক্তদের মানত করা ছাগলবলি দেওয়া হয়। যত রাত অবধি পুজো চলে, মন্দির ততক্ষণই খোলা থাকে।

ঠনঠনিয়ার সিদ্ধেশ্বরী কালী।

[কলকাতার এইসব কালীবাড়ির ইতিহাস জানেন? আজ প্রথম পর্ব]

কৃপাময়ী কালী, বরানগর কুঠিঘাট

বরানগরের কুঠিঘাট থেকে গঙ্গার ধার ধরে একটু হাঁটলেই জয় মিত্রের কৃপাময়ী কালীর মন্দির। ১৮৫০ খ্রিস্টাব্দে শোভাবাজার অঞ্চলের বাসিন্দা জয়নারায়ণ মিত্র বারোটি শিবমন্দির-সহ কৃপাময়ী কালীর নবরত্ন মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। গঙ্গার ধারে এক অপূর্ব পরিবেশে এই মন্দিরটি। মন্দির চত্বরে প্রবেশের মুখে বিশাল ফটক। ফটকের দু’দিকে দু’টি স্তম্ভের মাথায় সিংহমূর্তি। ফটক পেরিয়ে ডান ও বাঁয়ে ছ’টি করে বারোটি শিবমন্দির। বিশাল বড় নাটমন্দির সংলগ্ন নবরত্ন মন্দিরে দেবীর অবস্থান। কাঠের সিংহাসনে অধিষ্ঠিতা দেবী কৃপাময়ী। পাথরের মূর্তি। নানা স্বর্ণালংকারে ভূষিতা। মন্দিরের দেওয়ালে টাঙানো রয়েছে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ ও মা সারদামণির ছবি। বরানগর থেকে দক্ষিণেশ্বর যাওয়ার পথে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ অনেকবার এসেছেন এই মন্দিরে। তিনি দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণীকে ‘মা’ বলে আর জয় মিত্র প্রতিষ্ঠিত কৃপাময়ীকে ‘মাসি’ বলে ডাকতেন। প্রত্যেকদিন মন্দির সকাল ছ’টা থেকে ১২.৩০ মিনিট ও বিকেল চারটে থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা থাকে। দীপান্বিতা কালীপুজোর দিন পুজো শেষ না হওয়া পর্যন্ত মন্দির খোলাই থাকে। সারাদিন ভক্তরা পুজো দেন, নাটমন্দিরে বসে সারা রাত মায়ের পুজো দেখেন। মাকে এখানে অন্নভোগ দেওয়া হয় না। মায়ের ভোগে থাকে লুচি, ডাল, নানারকম সবজির ভাজা, সুজি ও মিষ্টি। অনেক আগে এখানে বলি হলেও এখন হয় না।

বরানগরের কৃপাময়ী কালী।

[ভাঙন রুখতেই পাগলি কালীর আরাধনায় মাতেন মালদহবাসীরা]

করুণাময়ী কালী, টালিগঞ্জ

বড়িশার সাবর্ণ রায়চৌধুরি পরিবারের নন্দদুলাল রায়চৌধুরির কন্যা করুণাময়ীর অকাল বিয়োগ ঘটে। শোকে পাগল নন্দদুলালকে একদিন রাতে মেয়ে করুণাময়ী স্বপ্নে একটি কষ্টিপাথর দেখিয়ে দেন, বলেন এই কষ্টিপাথরেই ‘আমি তোমার কাছে থাকব।’ নন্দদুলাল ওই কষ্টিপাথর কেটে তৈরি করালেন কালীমূর্তি। ১৭৬০ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ ১১৬৭ বঙ্গাব্দে বারোটি শিবমন্দির সমেত টালিগঞ্জের পশ্চিম পুটিয়ারিতে আদিগঙ্গার পশ্চিমপাড়ে মন্দির তৈরি করে কষ্টিপাথরের কালীমূর্তিকে প্রতিষ্ঠা করলেন। কন্যার নামে মায়ের নাম রাখলেন ‘মা করুণাময়ী’। কালের নিয়মে মন্দির ধ্বংসের কবলে পড়ে। তৈরি হয় নতুন মন্দির। দেবী করুণাময়ী যেখানে ছিলেন, সেখানে আজও বিরাজ করছেন। অপূর্ব সিংহাসনে দেবী করুণাময়ী প্রতিষ্ঠিতা। একই কষ্টিপাথরে তৈরি বলে মা করুণাময়ী ও মায়ের তলায় শায়িত মহাদেব উভয়েই কালো। বেনারসি শাড়ি ও গয়নায় সজ্জিতা দেবী যেন এক ছোট্ট বালিকা। দীপান্বিতা কালীপুজোয় এখানে কুমারী পুজো হয়। কালীপুজোর দিন মায়ের ভোগে থাকে লুচি, ছোলার ডাল, নানারকম সবজির তরকারি, পোলাও, খিচুড়ি, পায়েস, চাটনি। এছাড়া করুণাময়ী বাজারে ওইদিন যতরকম মাছ আসে, প্রায় ১০ রকম মাছের পদ মাকে নিবেদন করা হয়। ভক্তরা কালীপুজোর দিন সারা রাত মন্দিরে বসে পুজো দেখেন। আগে বলি হলেও এখন বলি হয় না।

The post কলকাতার প্রাচীন কালীবাড়ি গুলির অজানা ইতিহাস, আজ শেষ পর্ব appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement