সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আগেকার দিনে জমিদার বাড়িতেই দুর্গাপুজোর চল ছিল। বঙ্গে তখনও সেভাবে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয়নি। পরে শুরু হল বারোয়ারি পুজো। চাঁদা তুলে পুজো হত হাতে গোনা কিছু। গ্রামের মানুষজন তখন পুজো বলতে জমিদার বাড়ির পুজোই বুঝতেন। আজ থেকে প্রায় ৩০০ বছর আগে হুগলির গঙ্গাপাড়ে রিষড়ার শ্রীমানি বাড়ির পুজো এমনই এক দৃষ্টান্ত। আজও শ্রীমানি পরিবারের সদস্যরা এই পুজো দায়িত্বের সঙ্গে উদযাপন করে আসছেন। জানা যায়, প্রায় তিনশো বছর আগে কৃষ্ণচন্দ্র শ্রীমানির আমলে এই পুজো শুরু হয়েছিল।
এই পরিবারে দেবীদুর্গা মেয়ে হিসেবে পূজিতা হন। জন্মাষ্টমীতে কাঠামো পুজোর পরেই শুরু হয় প্রতিমা তৈরির কাজ। দেবীর চক্ষুদান করা হয় পঞ্চমীর বিকেলে। বাড়িতেই তৈরি হয় দেবীর পুজোর মিষ্টান্ন ও অন্যান্য ভোগ। এমনকী সারারাত ধরে দেবীকে সাজানোর রীতি রয়েছে এ বাড়িতে। প্রতিদিন পুজোর আগে বোধন ঘরে মহাদেবের আরাধনা করা হয়। এই পুজোয় সকালের দাঁতন থেকে শুরু করে মুখ ধোওয়া, এমনকী তারপরে মায়ের জন্য পানপাতা— সবই পরিপাটি করে আয়োজন করেন শ্রীমানি বাড়ির সদস্যরা। কিন্তু এ বাড়ির পুজোয় রয়েছে নজরকাড়া এক ঘটনা। প্রতিদিন আড়াই কিলো চাল দেবীকে নৈবেদ্য হিসেবে নিবেদন করা হয়।
দেবীকে নৈবেদ্য প্রদানের ভিন্ন ক্রিয়াপদ্ধতি রয়েছে। এই সাবেকি রীতি সকলেই মেনে চলেন। দেবীদুর্গার প্রার্থনা করে নৈবেদ্য নিবেদনের সংকল্প ভক্তের মনে আগে থেকে তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয়। এরপর দেবীর সামনে মেঝেতে একটি মণ্ডল আঁকা হয়। নৈবেদ্য ধারণকারী কলাপাতা এই মণ্ডলের উপর রেখে পাতার ডাঁটা দেবতার দিকে ঘুরিয়ে রাখাই দস্তুর। ধর্মীয় আচারে চাল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। দেবী দুর্গার কাছে 'অক্ষত' চাল নিবেদনের মধ্যমে ভক্তের জীবনে সমৃদ্ধি, উর্বরতা এবং অফুরন্ত প্রাচুর্য কামনা করা হয়। দেবতাকে সম্পূর্ণ ও অখণ্ড চাল নিবেদন করাই নৈবেদ্যের একমাত্র শর্ত। তাই যেমন তেমন করে চাল দিলেই হল না। দেবী আরাধনায় সমৃদ্ধি ও উর্বরতায় নিবেদিত শস্যদানা মানেই লালাবাবা রাইস। এবারের পুজো হয়ে উঠুক স্বাদে ও আনন্দে ভরপুর।
