shono
Advertisement

ফের বাদ সাধল করোনা, এবারও শান্তিপুরের ভাঙারাসের শোভাযাত্রা শুধুই নিয়মরক্ষার

মনখারাপ রাসপুজোর উদ্যোক্তাদের।
Posted: 09:43 PM Nov 19, 2021Updated: 10:25 PM Nov 19, 2021

বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: ফের বাদ সাধল করোনা। গত বছরের পর এবারও জাঁকজমকহীন নদিয়ার শান্তিপুর ও নবদ্বীপের ঐতিহ্যমণ্ডিত রাস উৎসব। শান্তিপুরের ভাঙা রাসের শোভাযাত্রা এবার শুধুই নিয়মরক্ষার। নবদ্বীপে এবারও বন্ধ আড়ং-সহ নবমীর শোভাযাত্রা। বাজনার ক্ষেত্রেও রয়েছে প্রশাসনিক নিষেধাজ্ঞা। যদিও রাসপুজোর উদ্যোক্তারা এই সিদ্ধান্তে যথেষ্ট অসন্তুষ্ট। তাঁর বক্তব্য, “কালী ও জগদ্ধাত্রী পুজোয় জেলার অন্যত্র যা হয়েছে, তারপর এরকম নিষেধাজ্ঞার কোনও মানেই হয় না।” 

Advertisement

কীভাবে রাসের প্রচলন হয়েছিল তা নিয়ে রয়েছে পৌরাণিক কাহিনী। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বৃন্দাবনের গোপিনীদের সঙ্গে রাসলীলা করতেন। সেই রাসলীলায় গোপিনীবেশে অংশ নিতেন যোগমায়াও। রাস অঙ্গনে শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া অন্য পুরুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। কিন্তু সেই রাস দর্শন করার একবার ইচ্ছা হয়েছিল মহাদেবের। তিনি ছদ্মবেশে গিয়েছিলেন রাসমঞ্চের কাছে। কিন্তু তাঁর উপস্থিতি অনুভব করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। রাসলীলায় দ্বিতীয় পুরুষের উপস্থিতি বোঝাতে পেরেছিলেন গোপিনীরাও। ইতিমধ্যে যোগমায়াই তাঁর স্বামীকে চিনতে পেরে ভর্ৎসনা করেন এবং রাস অঙ্গন ছেড়ে চলে যেতে বলেন। মহাদেব ক্ষুব্ধ হয়ে কলিযুগে বিশ্ববাসীকে সেই রাস দর্শন করার সুযোগ করে দেবেন বলে মনস্থ করেন।

[আরও পড়ুন: বদলির প্রতিবাদে বিষপান করা ৫ শিক্ষিকাই যোগ দিলেন তৃণমূলে, তালিকায় শিক্ষক নেতা মইদুলও]

বৈষ্ণব ধর্মালবম্বীদের বিশ্বাস, দ্বাপর যুগের সেই মহাদেবই কলিতে অবতীর্ণ হয়েছিলেন অদ্বৈতাচার্যের রূপে। অদ্বৈতাচার্যই শান্তিপুরে রাস উৎসব শুরু করেন। তিনি নেপালের গণ্ডকী নদী থেকে একটি নারায়ণ শিলা পেয়েছিলেন। প্রথমে সেই নারায়ণ শিলা দিয়েই রাস পুজো শুরু হয়। তারপর বৃন্দাবন থেকে রাধার সখী বিশাখা নির্মিত একটি শ্রীকৃষ্ণের চিত্রপট তিনি শান্তিপুর নিয়ে আসেন। কথিত আছে, শান্তিপুরের বিখ্যাত মদনগোপাল বিগ্রহের রূপদান করা হয়। অদ্বৈতাচার্যের রাস উৎসবের বিশেষ প্রচার শুরু হয়। এরপর সব অদ্বৈত অনুগামী অন্য গোস্বামী বাড়িতেও এই উৎসব পালিত হতে থাকে। রাস পূর্ণিমা তিথিতে শ্রীকৃষ্ণ বিগ্রহকে ঘিরে নাম সংকীর্তণ এবং রাতে বিশেষ পুজো হত। বড় গোস্বামীর সেই রাধারমণ আগে একা পূজিত হতেন। প্রায় ৩৫০ বছর আগে রাধারমণের এই বিগ্রহ একবার অন্তর্হিত হয়।

সকলে বিশ্বাস করেন, শ্রীকৃষ্ণ একা আছেন বলেই হয় তো অন্তর্হিত হয়েছেন। এরপর অষ্টধাতু দিয়ে রাধার মূর্তি নির্মাণ করা হয় বড় গোস্বামী বাড়িতে। এবং রাস পূর্ণিমার পুণ্যতিথিতে শ্রীরাধারমনের সেই যুগল মূর্তি রাসমঞ্চে বসানো হয়। তখন রাধার নাম হয় শ্রীমতী।রাধারমণ ও শ্রীমতীর যুগল বিগ্রহ নিয়ে নগর পরিক্রমা করাই হল ভাঙারাসের শোভাযাত্রা। সোনার গয়নায় যুগল মূর্তিকে সাজিয়ে মখমলের কাপড়ে মোড়া হাওদায় তোলা হয়। আতরদানি, পিকদানি, ফুল দিয়ে সাজানো সেই ‘হাওদা’ নিয়ে নগর পরিক্রমা করা হয়।

রাস উৎসব মূলত তিনদিনের। রাস, মধ্যরাস ও ভাঙারাস। তৃতীয় দিনেই হয়ে থাকে ভাঙারাসের শোভাযাত্রা। করোনা পরিস্থিতির শোভাযাত্রা জৌলুস হারিয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, শোভাযাত্রার পর যুগল বিগ্রহ মন্দিরেই এনে রাখা হয়। ভক্তরা দর্শন করার পর যার যার মন্দিরে নিয়ে যাওয়া হয়। রাসকুঞ্জ ভেঙে দিয়ে রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহের এই ঘরে ফেরার অনুষ্ঠানকেই ‘কুঞ্জভঙ্গের ঠাকুর নাচ’ উৎসব বলা হয়। গোস্বামী বাড়ি থেকে এই রাস উৎসবের প্রথা ছড়িয়ে পড়ে গোটা শান্তিপুরে। বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীরা জানিয়েছেন, শান্তিপুরের পরেই হয় নবদ্বীপের রাস। এছাড়াও রাজ্যের বিভিন্ন জায়গাতে রাস উৎসব পালন করা হয়ে থাকে। রাস মূলত বৈষ্ণবীয় উৎসব হলেও নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্রের প্রভাবে প্রায় পৌনে ৩০০ বছর আগে নবদ্বীপে শুরু হয়েছিল রাস পুজো।  পরে অবশ্য রাসে বৈষ্ণব, শাক্ত, শৈব এই তিন ধারার ব্যতিক্রমী মিলন ঘটে।

গত বছর থেকেই করোনা শান্তিপুর ও নবদ্বীপের রাসের জৌলুস কেড়েছে। এবছরেও শান্তিপুরের রাসের পুজোতে করোনা পরিস্থিতির কারণে রয়েছে একাধিক বিধিনিষেধ। ভাঙারাসের শোভাযাত্রায় সেই আড়ম্বর এবারও দেখা যাবে না। প্রশাসনিক নির্দেশ রয়েছে, বিগ্রহ নিয়ে শোভাযাত্রা করা যাবে। সঙ্গে থাকবে সামান্য কয়েকটি বাজানো। অতিরিক্ত লোকসমাগম করা যাবে না। বারোয়ারি পুুজো কমিটিগুলি তাদের প্রতিমা নিয়ে বেরোতে পারবে। নবদ্বীপেও জারি রয়েছে প্রশাসনিক বিধিনিষেধের কড়াকড়ি। যদিও রাসের উদ্যোক্তারা অনেকেই তা মেনে নিয়েছেন।তাদের দাবি, শুধু বাজনার অনুমতি দিতে হবে।কারণ, ব্যাঞ্জো, তাসা রাসের অন্যতম অঙ্গ। নবদ্বীপের কেন্দ্রীয় রাস উৎসব কমিটি এবং পুরপ্রশাসকের পক্ষ থেকে বাজনার অনুমতি চেয়ে প্রশাসনের কাছে আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি।

[আরও পড়ুন: শান্তিনিকেতনে পৌষমেলার মাঠে বৃক্ষরোপণ, মেলা বন্ধ করতেই কি এই পদক্ষেপ? শুরু নয়া বিতর্ক]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement