shono
Advertisement

Breaking News

শ্মশানে মহিলাদের যাওয়া বারণ কেন?

পাঁচটি যুক্তির কোনওটা অমোঘ, কোনওটা আংশিক সত্যি, কয়েকটা আদ্যন্ত অর্থহীন। The post শ্মশানে মহিলাদের যাওয়া বারণ কেন? appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:28 PM Aug 06, 2016Updated: 04:22 PM Jun 11, 2018

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: শ্মশানে না কি মহিলাদের যেতে নেই!
কিছু কিছু সামাজিক নিয়ম থাকে যা একটা সময়ের পর অগ্রাহ্য করলে কোনও অসুবিধা হয় না। স্পষ্ট বোঝা যায় যুক্তিবুদ্ধি দিয়ে, সেগুলো না মানলে তেমন কোনও সমস্যা নেই। মহিলাদের শ্মশানে যাওয়ার বারণ সংক্রান্ত যে সব কারণ রয়েছে, সেগুলোও তাই বর্তমান শহুরে সমাজে চলে গিয়েছে অগ্রাহ্যের খাতে।
তবে, ভারতের অনেক অঞ্চলে এখনও কঠোর ভাবে মেনে চলা হয় মহিলাদের অন্ত্যেষ্টি যোগ না দেওয়ার নেপথ্য কারণগুলো! যার শুরুটা হয়েছিল রক্ষণশীলতার হাত ধরে।
বর্তমান সময়ে শবদেহ বহন করার জন্য গাড়ি পাওয়া গেলেও বছর কয়েক আগে পর্যন্ত শ্মশানবন্ধুরা দেহ নিয়ে যেতেন কাঁধে করে। পথ দিয়ে মিছিল করে তাঁরা পৌঁছতেন শ্মশানে। এটাই ছিল শবদাহের প্রথম ধাপ। শেষ সময়ে পাওয়া পরিজনের শেষ সেবা।
কিন্তু রক্ষণশীলতা নারীকে পথে বেরনোর অনুমতি দেয় না। দিলেও, মিছিলে হাঁটার প্রশ্নই নেই। সেই জন্যই মূলত নারীর শ্মশানে যাওয়া বারণ।
তবে, এই সামাজিক প্রসঙ্গ বাদ দিলেও দেখানো হয় আরও পাঁচটি যুক্তি। তার মধ্যে কোনওটা অমোঘ, কোনওটা আংশিক সত্যি, কয়েকটা আদ্যন্ত অর্থহীন। কী কী, এবার এগোনো যাক সেই দিকে।

Advertisement

• ঘর পরিষ্কার রাখা:


এই কারণটা অনেকটাই যুক্তিযুক্ত। দেহ অন্ত্যেষ্টির জন্য শ্মশানের দিকে চলে গেলে ঘর পরিষ্কার করাটা একটা বেশ বড়সড় কাজ। কেন না, মৃতদেহ থেকে জীবাণু সংক্রমণের ভয় থাকে। তাই ঘর-দোর ভাল ভাবে ধুতে-মুছতে হয়। এখন, এই ঘর পরিষ্কার রাখা, বলাই বাহুল্য, বরাবরই থেকে গিয়েছে নারীদের খাতে। সেই জন্যই তাঁরা শ্মশানে যান না। বাড়ি পরিষ্কার করে যতটা সম্ভব দূর করে দিতে চান শোকের আবহ।
তাছাড়া, হিন্দু অন্ত্যেষ্টি প্রথা অনুসারে শ্মশানযাত্রীরা বাড়ি ফিরলে তাঁদের দিকে এগিয়ে দিতে হয় লোহা-আগুন-নিমপাতা। শ্মশানবন্ধুদের আপ্যায়ন করতে হয় মিষ্টি দিয়ে। সেই সব কাজের জন্যও বাড়িতে কারও একটা থাকা দরকার!

• শ্মশানের ভীতিকর পারিপার্শ্বিক:


বলাই বাহুল্য, শ্মশানের পারিপার্শ্বিক দৃশ্য আদপেই মধুর হয় না। বরং, তা রীতিমতো ভয়াবহ। একের পর এক দাহের অপেক্ষায় থাকা দেহ, মৃতের পরিজনের কান্না, শোকাতুর মুখ, ডোম আর শ্মশান-পুরোহিতের দেহ সৎকারের নির্লিপ্তি- চোখের সামনে দেখা খুব একটা সহজ নয়। বিশেষ করে যাঁর প্রিয়জন দেহত্যাগ করেছেন, তাঁর পক্ষে তো বটেই! এই জায়গা থেকেই বারণ হয়েছে মহিলাদের শ্মশানে যাওয়া!
আসলে, সবাই ধরে নেন, মহিলা মাত্রেই কোমল হৃদয়ের অধিকারিণী। শ্মশানের ভয়াবহতা দেখে যদি সংবেনশীল মনে আঘাত লাগে, যদি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন- এসব ভাবনা-চিন্তা থেকেই জারি হয়েছিল নিষেধাজ্ঞা।
এছাড়া আরও একটা গুরুতর কারণ রয়েছে। যে সময় থেকে এই নিয়মের প্রচলন, তখন দাহ হত কাঠের চিতায়। অনেক সময়েই চিতায় দাহর সময় শব আগুনের উত্তাপে দুমড়ে-মুচড়ে যায়। কখনও বা উত্তাপে দেহ উঠে যায় কিছুটা। ঠিক যেন মনে হয়, শব চিতায় উঠে বসেছে। সেই সময় বাঁশের আঘাতে টুকরো করে দিতে হয় মৃতদেহ। এই দৃশ্য পুরুষদের পক্ষেও সহ্য করা কঠিন! নারীদের পক্ষে তো হবেই!

• লম্বা চুল:


হিন্দু সমাজের একাংশে বিধান রয়েছে, সমস্ত শ্মশানযাত্রীকে মস্তক মুণ্ডন করতে হবে। যুক্তি হিসাবে বলা হয়, চুলের শিকড় পথেই আত্মা প্রবেশ করে শরীরে। এ দিকে প্রচলিত ধারণা, শ্মশানে ঘুরে বেড়ায় অনেক আত্মাই! তার মধ্যে কোনও দুষ্ট আত্মা যদি শরীরে প্রবেশের চেষ্টা করে, তা রোধ করার জন্যই মস্তক মুণ্ডন!
এই কুসংস্কার বাদ দিয়ে ব্যাপারটাকে দেখা যায় অন্য ভাবেও। মস্তক মুণ্ডনকে যদি মৃত ব্যক্তির প্রতি শেষ সম্মানজ্ঞাপন বলে ধরা হয়, তাহলেও সমস্যা রয়েছে। কেন না, যে সময় থেকে এই নিয়মের উদ্ভব, তখন নারী সন্ন্যাসিনী না হলে তাঁর মস্তক মুণ্ডনের প্রশ্নই উঠত না। তাই নারীর শ্মশানে যাওয়ার প্রশ্নটি এই যুক্তিতে খারিজ হয়ে যায়!

• দুষ্ট আত্মাকে আকর্ষণ:


এও আরেকটা কুসংস্কার! পুরুষমানুষ হোক বা আত্মা- সবাই না কি নারীকে দেখলেই আকর্ষিত হয়। বিশেষ করে কুমারী মেয়েকে দেখলে!
বলা মুশকিল, ঠিক কী কারণে জন্ম নিয়েছিল এমন কুসংস্কার। বেশির ভাগ কুসংস্কার রটানোর ক্ষেত্রেই কিছু মন্দ উদ্দেশ্য থাকে। এক্ষেত্রে উদ্দেশ্যটা বোধহয় নারীকে গৃহবন্দি রাখা! তাকে বাইরের পৃথিবীতে স্বতন্ত্র পরিচিতি তৈরি করতে না দেওয়া!
সেই জন্যই নারীর শ্মশানযাত্রার ব্যাপারে একটা দ্বিমত রয়েছে। অনেকে বলেন, বিবাহিতা নারীরা শ্মশানে যেতে পারেন। কিন্তু, কুমারীদের যাওয়া কখনই চলবে না!
সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন উঠবে- দুষ্ট আত্মা কি কুমারী আর বিবাহিতার তফাত করবে?
করুক আর না-ই করুক- দীর্ঘ দিন ধরে এই বিশ্বাস লোকের মনে গেঁথে ছিল। এখনও যে নেই, তেমনটা জোর দিয়ে বলা যায় না।

• শেষ যাত্রার শান্তি:


সব দেশেই সামাজিক প্রথা বলে, বিদায় দিতে হয় হাসিমুখে! সেটা সম্ভব না হলে নীরব থাকাই শ্রেয়। তা বিদায় নেওয়া ব্যক্তিটি জীবিত হোন বা মৃত!
এ দিকে ওই যে সামাজিক ধারণা- কোমল হৃদয়ের নারীরা আবেগ সংবরণ করতে পারেন না। বিশেষ করে প্রিয়জনের মৃত্যুতে তাঁদের চোখের জল বাধা মানে না।
অন্য পিঠে লোকবিশ্বাস বলে, শেষযাত্রার সময় কেউ কান্নাকাটি করলে বিচলিত হয় আত্মা। তখন আর তার পৃথিবী ছেড়ে যাওয়া হয়ে ওঠে না। মায়ায় আবদ্ধ হয়ে সে পৃথিবীতেই থেকে যায়। এবং, মুক্তি না পাওয়ার কষ্ট থেকে জীবিতের ক্ষতি করার চেষ্টা করে। এরকমটা যাতে না হয়, সেই জন্য না কি মহিলাদের শ্মশানে যাওয়া বারণ!

অনেক দিন পর্যন্ত এই সমস্ত যুক্তিতে ভর দিয়ে চলেছে সমাজ। প্রিয়জনের অন্ত্যেষ্টিতে শ্মশানে যাননি নারীরা। এখন যদিও ছবিটা বদলেছে অনেকটাই। তবে তা শহরাঞ্চলেই! গ্রাম কিন্তু এখনও পুরনো, ক্ষয়ে আসা এই লোকাচার সঙ্গে করে পথ হাঁটছে।
ছবিটা কি আদৌ বদলাবে?

The post শ্মশানে মহিলাদের যাওয়া বারণ কেন? appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement