গৌতম ব্রহ্ম ও ব্রতদীপ ভট্টাচার্য: যাদবপুরের রমনা কালীমন্দির। টিআইডি নম্বর-৩২৮৫০১০২। QR কোডের নিচে জ্বলজ্বল করছে লাইন দু’টি। পেমেন্ট ওয়ালেট বোর্ডের নিচে লাল রঙের প্রণামী বাক্স। কেউ সরাসরি বাক্সে টাকা ফেলছেন, তো কেউ বা আবার মোবাইলে QR কোড স্ক্যান করে মন্দিরের অ্যাকাউন্টে টাকা জমা করছেন। প্রণামী দেওয়ার দু’রকম ব্যবস্থাই মজুত যাদবপুর ৮বি বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া ফুটপাথের রমনা কালীমন্দিরে।
ডিজিট্যাল জাদুতে বাক্সেও জোয়ার এসেছে। আয় বেড়েছে কয়েকগুণ। আগে মাসে মেরেকেটে সাত-আটশো টাকা জমা পড়ত। তবে QR কোডের দৌলতে এখন শুধু অ্যাকাউন্টেই সরাসরি জমা পড়ছে দু’-তিন হাজার। মন্দির সমিতির সদস্য বীরবাহাদুর সিং এমনটাই জানাচ্ছেন। মন্দিরের পাশেই বীরবাহাদুরের পান-সিগারেটের দোকান। আগে বাবা হরি সিং দোকান চালাতেন। মাঝবয়সি বীরবাহাদুরের কথায়, “বাবা এক সময় বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জে থাকতেন। ওঁর মুখে শুনেছি, এখানকার প্রতিমার আদল ঢাকার রমনা কালীমূর্তির আদলে। তাই এই নাম। “অনেকের কাছে নগদ টাকা থাকে না। খুচরোর সমস্যা হয়। ওয়ালেট পেমেন্ট হওয়ায় ভক্তদের যেমন মুশকিল আসান, আয় বাড়ায় আমাদেরও মন্দির চালাতে সুবিধা হচ্ছে।”
১৭-১৮ বছরের পুরনো মন্দিরটি সংস্কারের কাজে অনেকে অর্থসাহায্য করেছেন। তাঁদের নাম খোদাই করা আছে টাইলস বসানো দেওয়ালে। মন্দিরের পিছনে ঝাঁকড়া পলাশগাছটি কাটার পরিকল্পনা করেছিলেন এক প্রোমোটার। সেই উদ্দেশ্য বানচাল করতে স্থানীয় কাউন্সিলর মালা মহলানবিশের বুদ্ধিতে মন্দিরের পরিসর বাড়ানো হয়। সেসময়ে এগিয়ে আসেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও কিছু বাসিন্দা। বীরবাহাদুর সিং, বিমল দত্ত, বাবুয়া সিং, বিন্ধ্যেশ্বর রায়, প্রবীরকুমার ঘোষ। এগিয়ে আসেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ কেমিক্যাল বায়োলজির বিজ্ঞানী ডা. নিরুপবিকাশ মণ্ডলও, যিনি বর্তমান মন্দির সমিতির সভাপতি।
[আরও পড়ুন: স্কুল শিক্ষক নিয়োগে আর থাকছে না ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া, বিজ্ঞপ্তি জারি রাজ্যের]
নিরুপবিকাশবাবুর ভাগ্নে প্রশান্ত মণ্ডলই পাথরের প্রতিমাটি গড়েছেন। বীরবাহাদুর জানালেন, ২০১১ সালের আগে মাটির মূর্তি ছিল। দু’-তিন বছর অন্তর প্রতিমা বদলাতে হত। এক পুরোহিতের পরামর্শে পাথরের প্রতিমা বানানো হয়। আর একজন চিকিৎসকের পরামর্শে প্রণামী বাক্সের ডিজিটাইজেশন হয়। মন্দিরের নিজস্ব ব্যাংক অ্যাকাউন্টও রয়েছে। তার সঙ্গে যুক্ত করেই এই বারকোড।
কালীপুজোর সময় প্রণামীর বহর বেশ বেড়ে যায়। এমন অনেকেই আছেন, যারা বেতন পেয়েই এখানে টাকা ট্রান্সফার করেন। পুরোহিত অজয় ত্রিপাঠীও জানালেন, অনেক মানুষ মোবাইলে QR কোড স্ক্যান করে টাকা ট্রান্সফার করেন। মন্দির পরিচালনার কাজেই তা লাগানো হয়। অজয়বাবুকে মাসে সাড়ে ৩ হাজার বেতন দেওয়া হয়। সেই ব্যয়ও নির্বাহ হয় প্রণামীর অর্থ থেকেই।
[আরও পড়ুন: স্কুল শিক্ষক নিয়োগে আর থাকছে না ইন্টারভিউ প্রক্রিয়া, বিজ্ঞপ্তি জারি রাজ্যের]
The post থালার বদলে ডিজিটালে প্রণামী নিচ্ছেন ভগবান, যাদবপুরের কালীবাড়িতে অভিনব দৃশ্য appeared first on Sangbad Pratidin.