ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: উৎপাদন বাড়াতে শুধুমাত্র ইলিশের জন্য গঙ্গায় সংরক্ষিত এলাকা বা ‘ফিশ স্যাংচুয়ারি’ তৈরি করবে রাজ্য সরকার। গঙ্গার প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই সংরক্ষিত এলাকা গড়ে তোলা হবে। এর জন্য ১৯৯৭ সালের ‘ইনল্যান্ড ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন অ্যাক্ট’-রও বদল আনা হবে বলে মৎস্য দপ্তর সূত্রে খবর৷
[শিয়ালদহ ডাউন লাইনে ফাটল, ব্যাহত রেল পরিষেবা]
সমীক্ষা বলছে, গঙ্গায় প্রতিবছর যে পরিমাণ ইলিশ মাছ আসে তার ২০ শতাংশ সংরক্ষণ করতে পারলেই বাঙালির পাতে রোজ দু’বেলা ইলিশ দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এর জন্য চাই যথেষ্ট সংরক্ষণ। তাই চলতি আইনের কিছুটা রদবদল করে গঙ্গার প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাকে সংরক্ষিত হিসাবে ঘোষণা করতে বিশেষ পদক্ষেপ করবে রাজ্য মৎস্য দপ্তর। দপ্তরের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলেন, “ইলিশ উৎপাদন বাড়াতে মুর্শিদাবাদের লালবাগ থেকে ফরাক্কা, বর্ধমানের কাটোয়া থেকে হুগলিঘাট এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডায়মন্ডহারবার থেকে নিসচন্দ্রপুর পর্যন্ত এলাকাকে সংরক্ষিত এলাকা বা স্যাংচুয়ারি বলে ঘোষণা করবে রাজ্য সরকার।’’ মন্ত্রীর কথায়, “এই নদীপথ এলাকা কয়েক দফায় সমীক্ষা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারপরই এই সিদ্ধান্ত। এই জন্য চলতি আইনের বদলও করা হবে।” বঙ্গোপসাগরের কাছে সুন্দরবনের মাতলা, ঠাকুরানি ও রায়মঙ্গল নদীকেও সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে ঘোষণা করা হবে বলে মন্ত্রী জানিয়েছেন।
সংরক্ষিত এলাকা বা স্যাংচুয়ারি হলে কী কী বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে? বিশিষ্ট ইলিশ গবেষক তথা দপ্তরের সহ অধিকর্তা ডাঃ সপ্তর্ষি বিশ্বাস বলেন, “সংরক্ষিত এলাকা হিসাবে চিহ্নিত করা হলে গঙ্গার এইসব এলাকায় বর্ষার সময় কোনও মাছ ধরা যাবে না। এমনকী, মাছ ধরার নৌকা গেলেও প্রয়োজনে বাজেয়াপ্ত করা হতে পারে। সংরক্ষিত এলাকায় কোনও প্লাস্টিক বা থার্মোকলের জিনিস ফেলা যাবে না। শিল্প-কারখানার রাসায়নিক বর্জ্য ফেলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হবে। এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করার জন্য পরিবেশ দপ্তরের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে।’’ মৎস্য দপ্তরের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, “দেশের মধ্যে ইলিশ উৎপাদনের জন্য গঙ্গার একটি অংশকে সংরক্ষিত করা হবে যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এককথায় ইলিশ মাছের উৎপাদন বাড়াতে এ এক অভিনব পদক্ষেপ করতে চলেছে মৎস্য দপ্তর।”
[‘আমি ওকে মারিনি’, আদালতে খুনের অভিযোগ অস্বীকার অনিন্দিতার]
প্রতিবছর ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে একমাস ইলিশ ধরা বন্ধ রাখে রাজ্য। কিন্তু অভিযোগ, ঘুরপথে একশ্রেণির ব্যবসায়ী ও জেলে ইলিশ ধরেন। এছাড়াও ৫০০ গ্রামের কম ওজনের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে মৎস্য দপ্তর। পাশাপাশি, ৯০ মিলিমিটারের কম ফাঁসের জালও নিষিদ্ধ করতে চলেছে রাজ্য মৎস্য দপ্তর। সপ্তর্ষিবাবুর কথায়, “ফি বছর বর্ষার সময় সাগর থেকে যে পরিমাণ ইলিশ আসে, গঙ্গায় তার ২০ শতাংশ ডিম পাড়ার পর ভাটার সময় আর সাগরে ফিরতে পারে না। কারণ, পলি পড়ে গঙ্গার স্রোত কমে গিয়েছে। তাই আটকে থাকা এই মাছ যদি সংরক্ষণ করা যায়, তবে রুপোলি শস্য উপচে পড়বে। আর ইলিশ আমদানি করতে হবে না।”
চলতি বছরের ৮ নভেম্বর পর্যন্ত রাজ্যে ১৫ হাজার ৬৩৫ মেট্রিক টন ইলিশ ধরা হয়েছে। মায়ানমার থেকে আমদানি করা হয়েছে আরও আড়াইশো মেট্রিক টন ইলিশ। গত বছর ইলিশ উৎপাদনের পরিমাণ ছিল প্রায় ২২ হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু রাজ্যের চাহিদা আরও বেশি। তাই এই পদক্ষেপ। মন্ত্রী আরও জানিয়েছেন, ইলিশের গবেষণার জন্য ডায়মন্ডহারবারে কেন্দ্র তৈরি হবে। আরও অত্যাধুনিক ব্যবস্থা করতে ডিসেম্বরেই বিদেশ যাবেন রাজ্যের একদল ইলিশ গবেষক।
The post ইলিশের উৎপাদন বাড়াতে গঙ্গার বুকে তৈরি হচ্ছে সংরক্ষিত করিডর appeared first on Sangbad Pratidin.