অর্ণব আইচ: বাড়ানো হল নিরাপত্তা। পালটানো হল গাড়ি। অবশেষে নিয়ন্ত্রণে এল আর জি কর কাণ্ডে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায়ের ‘বদ-আচরণ’। বন্ধ হল অকারণে চিৎকার করে ইচ্ছামতো সবাইকে দোষারোপ করা। বার বার নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ও ‘ফাঁসানোর দাবি’ও এতে বন্ধ হয়েছে বলেই দাবি ওয়াকিবহাল মহলের।
আদালতে চার্জ গঠনের দিন সঞ্জয় রায় প্রিজন ভ্যান থেকে চিৎকার করে সাফাই দেয় যে, তাকে ‘আসলদের বাঁচাতে’ ফাঁসানো হচ্ছে। সোমবার বিচারপর্বের প্রথম দিনের শুনানির পর শিয়ালদহ আদালত থেকে প্রিজন ভ্যানে করে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় কলকাতার প্রাক্তন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলকে নিশানা করে। ফের তাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি করতে থাকে।
সূত্রের খবর, বিশেষ নিরাপত্তার কারণেই এদিন দুপুরে প্রেসিডেন্সি জেল থেকে সঞ্জয় রায়কে নিয়ে রওনা দেয় একটি ‘কনভয়’। ৬টি গাড়ির কনভয়ে ছিল প্রিজন ভ্যানও। যদিও পুলিশের সূত্র জানিয়েছে, ওই ‘ডামি’ প্রিজন ভ্যানে সঞ্জয় ছিল না। তার গাড়ি পাল্টানো হয়। একটি সাদা রঙের কাচতোলা গাড়িতে তাকে নিয়ে আসা হয়। কাচের উপর রয়েছে তারের জাল। সূত্রের খবর, বিশেষভাবে তৈরি ওই গাড়িতে গুরুত্বপূর্ণ মামলার অভিযুক্তদের নিয়ে যাতায়াত করা হয়। কলকাতা পুলিশের স্পেশাল টাস্ক ফোর্সও ব্যবহার করে ওই গাড়ি। এদিন ওই গাড়ি থেকে শিয়ালদহ আদালত চত্বরে নামানোর পরই সঞ্জয় চিৎকার করে বলতে থাকে, ‘‘আমার গাড়ি পালটানো হয়েছে।’’ যদিও প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই তাকে নিয়ে যাওয়া হয় আদালতের লকআপে। এদিন শুনানির শেষেও ওই গাড়ি করেই তাকে প্রেসিডেন্সি জেলে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়। গা়ড়ির কাচ বন্ধ ছিল। সঞ্জয়ের দু’পাশে ছিলেন দুই পুলিশকর্মী। কঠোর নিরাপত্তায় থাকা সঞ্জয়ের গাড়ির পিছনের সিটেও ছিলেন সশস্ত্র পুলিশকর্মীরা। তাই এদিন আদালত থেকে প্রেসিডেন্সি জেলে যাওয়ার পথে সঞ্জয় রায় আর চিৎকার করে কিছু বলতে পারেনি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে মঙ্গলবার আর জি কর হাসপাতালে মহিলা চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের মামলায় মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে বিচারপর্ব। তারই অঙ্গ হিসাবে রুদ্ধদ্বার কক্ষে শুরু হয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ। সোমবার বিচারপর্বের প্রথম দিনেই সাক্ষ্য দেন নির্যাতিতার বাবা ও এক পারিবারিক বন্ধু। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে নির্যাতিতার সহকর্মী দুই ডাক্তারি পড়ুয়ার সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়। বুধবার ট্রায়ালের তৃতীয় দিনে আর জি করের চেস্ট বিভাগের এক চিকিৎসক ও অন্য এক মহিলা চিকিৎসক সাক্ষী দিতে পারেন। এদিনও অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারকের রুদ্ধদ্বার কক্ষে হাজির করা হয় অভিযুক্ত সঞ্জয় রাইকে।
আদালতের সূত্র অনুযায়ী, আদালত কক্ষেও সে নিজের মতো কিছু বলার চেষ্টা করে। যদিও বিচারপর্বে এই অবস্থায় তার কিছু বলার কথা নয়। সঞ্জয়ের দুই আইনজীবী সাক্ষীদের ‘ক্রস’ করেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে সঞ্জয় রায় নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে প্রিজন ভ্যানে বসে চিৎকার করে যে আচরণ করছিল, সেই ব্যাপারে এদিন আইনজীবীরা আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এদিন আদালতে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেও সঞ্জয় রাইয়ের নিরাপত্তায় থাকা পুলিশ আধিকারিক ও পুলিশকর্মীদের বিশেষ সতর্ক করা হয়।