অর্ণব আইচ: মাস তিনেক আগে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজের এক মহিলা চিকিৎসকের ‘শ্লীলতাহানি’র অভিযোগ ওঠে। কিন্তু তার পরও কেন ধৃত সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হল না? তদন্ত শুরুর পর এই প্রশ্ন তুলেছে সিবিআই। সিভিক ভলান্টিয়ার হয়েও সঞ্জয় রায় নিজেকে ‘ক্ষমতাবান’ বলে পরিচয় দিত। গত কয়েকমাস ধরে মহিলা চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ুয়াদের শ্লীলতাহানি, হেনস্তা করার অভিযোগ রয়েছে। তা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে কোনও মামলা হয়নি বলে অভিযোগ এসেছে সিবিআইয়ের কাছে। এই ব্যাপারে তার মদতকারী কে বা কারা, সেই উত্তর খুঁজছে সিবিআই। এই বিষয় নিয়ে আর জি কর হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও জেরা করেন সিবিআই আধিকারিকরা।
সূত্রের খবর, মাস তিনেক আগে আর জি কর হাসপাতালে (RG Kar Hospital Case) ঘটেছিল এই ঘটনাটি। অভিযোগ উঠেছে, সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রায় রাতে মদ্যপ অবস্থায় পুলিশ পরিবারের রোগীদের দেখার নাম করে হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করছিল। সেদিনও তার টার্গেটে ছিলেন মহিলা চিকিৎসক ও মহিলা ডাক্তারি পড়ুয়ারা। এভাবে ঘুরতে ঘুরতেই সঞ্জয় পৌঁছে যায় চিকিৎসকদের বিশ্রাম নেওয়ার ঘরে। ঘরে ঢুকে এক চিকিৎসকের নাম করে তাঁকে খোঁজার ভান করে। ঘরের ভিতর ছিলেন এক মহিলা ইন্টার্ন। অভিযোগ, তাঁকে একা পেয়ে তাঁর শ্লীলতাহানি করে ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। তিনি চিৎকার করে পালানোর চেষ্টা করেন। অভিযোগ, সঞ্জয় তাঁর উপর জোরও খাটাতে যায়। তখন চিৎকার শুনে অন্য চিকিৎসক ও ইন্টার্নরা এসে পড়ায় সঞ্জয় সেখান থেকে চলে যায়।
[আরও পড়ুন: আরও বিপাকে সন্দীপ ঘোষ! আর জি করের আর্থিক ‘বেনিয়মে’র তদন্তে SIT গড়ল রাজ্য]
সিবিআইয়ের কাছে খবর, এই ঘটনাটি ঘিরে আর জি কর হাসপাতালের চিকিৎসক মহলে তখনই আলোড়ন পড়ে যায়। প্রতিবাদ শুরু করেন চিকিৎসকরা। তাঁরা বিষয়টি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তথা প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকেও (Sandip Ghosh)জানান। চিকিৎসকদের মাধ্যমে লালবাজারও ঘটনাটি জানতে পারে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সঞ্জয় রায়ের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে তথ্য পেয়েছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। এমনকী, প্রাক্তন অধ্যক্ষও চেষ্টা করেন বিষয়টি আড়াল করতে! তাই সঞ্জয়ের বিরুদ্ধে টালা থানায় কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি।
[আরও পড়ুন: আর জি কর কাণ্ডের সঙ্গে দুর্গাপুজোকে মেশাবেন না! রাজ্যবাসীর কাছে আরজি ফোরামের]
কেন্দ্রীয় তদন্তকারীদের কাছে এমনও অভিযোগ এসেছে যে, এর পর থেকে গত কয়েক মাস ধরেই হাসপাতালে সঞ্জয়ের বাড়বাড়ন্ত শুরু হয়। বেশিরভাগ রাতেই সে প্রচণ্ড মদ্যপান (Drink) করে আর জি কর হাসপাতালে ঢুকত বলে খবর। ইচ্ছামতো ঘোরাঘুরি করত পুরো হাসপাতাল চত্বরে। এমনকী অভিযোগ, সঞ্জয়ের এতটাই সাহস বেড়ে যায় যে, সে রাস্তাঘাটে বিভিন্ন সময়ে মহিলাদের শ্লীলতাহানি ও হেনস্তা করত। কিন্তু এত কিছুর পরও তার বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ হয়নি। ঘটনার দিন বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার চেতলা অঞ্চলেও সঞ্জয় এক মহিলার শ্লীলতাহানি করে। তখন রাস্তায় গোলমাল হলেও তার কোনও হেলদোল হয়নি। সিবিআই (CBI) জেনেছে, প্রত্যেবারই সে নিজের ক্ষমতা জাহির করে ছাড়া পেয়ে যায়। এই ব্যাপারে তার পিছনে কারা কারা মদত জোগাত, সেই তথ্য জানার চেষ্টা করছে সিবিআই।