সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: আর জি কর কাণ্ডে (RG Kar Incident) দোষীর রাজশাস্তি চেয়েও শুধুমাত্র একটা মন্তব্য করেই বিতর্কের শিরোনামে উঠে এলেন কাঞ্চন মল্লিক। যে বিস্ফোরক মন্তব্যের জেরে বন্ধুবিচ্ছেদও ঘটে চলেছে তারকা বিধায়কের। আর জি কর কাণ্ডের তীব্র নিন্দা করে রবিবার আন্দোলনকারী ডাক্তারদের উদ্দেশে কাঞ্চন মল্লিক প্রশ্ন ছুঁড়েছিলেন, "সরকারি বেতন, বোনাস নেবেন তো নাকি?" উত্তরপাড়ার তারকা বিধায়কের এহেন মন্তব্য নিয়ে নিন্দার ঝড় নেটদুনিয়ায়। এমনকী ইন্ডাস্ট্রির সতীর্থরাও সরব হয়েছেন। এরপ্রকার কোণঠাসা কাঞ্চন মল্লিক!
তারকা বিধায়ক যদিও তাঁর অহেন মন্তব্যের সাফাই দিয়ে বলেছেন, "চিকিৎসকরা যখন বেতন পাচ্ছেন, তখন মুমূর্ষু রোগীরা কেন পরিষেবা পাবেন না? আমি আন্দোলন করার কথা বলে যদি কাজ বন্ধ রাখি, প্রযোজক কি আমাকে টাকা দেবেন? পেশাদার শিল্পী হিসেবে তো আমাকে কাজটা চালিয়ে যেতেই হবে। শুধু এটুকুই বোঝাতে চেয়েছি।" তবে তাতে চিঁড়ে ভেজেনি! সেই ক্ষোভে এবার কাঞ্চনের সঙ্গে নাটকের শো বাতিল করে দিলেন সুজন নীল মুখোপাধ্যায়। ফেসবুক পোস্টে অভিনেতা তথা সঞ্চালক সুজন জানিয়েছেন- "'মাগন রাজার পালা' আমার আর কাঞ্চন অভিনীত নাটকের আমন্ত্রিত অভিনয় বাতিল হল। মাগন আর রাজা আর জুটি বেঁধে মঞ্চে নামবে না। বেশ কষ্ট হচ্ছে কিন্তু বাস্তব বা মানুষের নিদান আসল। সেটা গ্ৰহন করতে হয়। উলটোদিকে এটাও সত্যি, কাঞ্চন মল্লিকের এই নাটকে যে অবদান, তা চিরকাল মনে গেঁথে থাকবে। অভিনেতা হিসেবে ওর লড়াই, ওর নিষ্ঠা, ওর দক্ষতা কে আজীবন শ্রদ্ধা করব। বাকিগুলো ভুলে যাবারই নামান্তর। আমরা একসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা ভারতবর্ষ জুড়ে ৫৫ টি মতো অভিনয় করেছি। সে অভিজ্ঞতা ভোলার নয়। শিখেছি অনেক কিছু। কাঞ্চন ছাড়া মাগন হয় না,ওর অতুলনীয় অভিনয় এই নাটকের প্রাণ ছিল। আমার কৃতজ্ঞতা স্বীকার করি। এক ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণের মুহূর্তে এই নাটক স্তব্ধ হল।" 'স্বপ্নসন্ধানী'তে অভিনয় করার সময় থেকেই কাঞ্চনের সঙ্গে আলাপ সুজন নীল মুখোপাধ্যায়ের। আরেকটি ইঙ্গিতপূর্ণ পোস্টে সুজন লেখেন, "বন্ধুত্বের হয় না পদবি? হয়...সরকারি সিলমোহর।"
[আরও পড়ুন: ‘বিবেক-শিক্ষা হারিয়েছিস! নির্লজ্জ কমেডি…’, বন্ধু কাঞ্চন মল্লিককে ‘ত্যাজ্য’ করলেন সুদীপ্তা]
অন্যদিকে কাঞ্চনকে তীব্র কটাক্ষ করে ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ঋদ্ধি সেনও। অভিনেতা লিখেছেন, "যদি অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরকারকে প্রশ্ন করতে গেলে সরকারি মাইনে ফেরত দিয়ে করতে হয়, তাহলে সেই একই নিয়মে কাঞ্চন মল্লিকের বাজে বকার জন্য বিধায়ক-সহ যে কোনও রাজনৈতিক পদ ফেরত দিয়ে অবিলম্বে স্কুলে ফেরত চলে যাওয়া উচিত। ভারতীয় সংবিধান না জেনে রাজনীতি করা তো দূরের কথা, ঠিক করে মোসাহেবিও করা যায় না। আপনাদের মতো কিছু লোকের ভোট চাওয়ার জন্য 'মানুষের পাশে থাকবো' বলা আর অঙ্ক টুকে পাশ করার চেষ্টা একই জিনিস, দুটোর পরিণতি একই, ইংরেজিতে বলে 'ফেল' আর বাংলায় 'ভুল'।"
সেই পোস্টেই ঋদ্ধির সংযোজন, "রাজনীতি বড়োদের কাজ, আপনি বরং স্কুলে শিশুদের কাছে ফিরে গিয়ে ভারতীয় সংবিধানের 'আর্টিকল '১৯(১)(এ)'টা পড়ে দেখুন, মানুষের পাশে থাকতে গেলে আগে মানুষের অধিকারটা জানতে হয়। আপনি আসলে কোনও দিনই মানুষের পাশে ছিলেন না, আপনি টাকার পাশে ছিলেন। তবে আপনার মন্তব্যে অবাক হলাম না, যিনি কয়েকমাস আগে তার বিয়েবাড়ির বাইরে লিখে রেখেছিলেন 'গাড়ির চালক এবং দেহরক্ষীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ', তার কাছে এই মন্তব্যই প্রত্যাশিত। আপনার মনুষত্বের সংবিধানটাই বিকৃত, দূষিত, পচা। তাই অবাক না হয়েই বলছি, প্রতিবাদ করার জন্য কেউ মাইনে বা বোনাস বা চাকরি ফেরত দেবে না, আপনি বরং কোনও মেডিক্যাল কলেজে আপনার শিরদাঁড়াটা ফেরত দিয়ে আসুন, ছাত্র আর শিক্ষকদের ক্লাসে ডেমন্সট্রেশনের কাজে লাগবে।"