ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: রাজ্য সরকারের সঙ্গে দ্বিতীয় বৈঠকের পরই গলল বরফ। ৪১ দিনের মাথায় অবশেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জুনিয়র ডাক্তারদের। বৃহস্পতিবার জিবি মিটিংয়ের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান তাঁরা। শুক্রবার স্বাস্থ্যভবন থেকে সিজিও কমপ্লেক্স পর্যন্ত মিছিল করবেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। প্লাবন কবলিত এলাকায় বিশেষ ক্লিনিক চালু করারও পরিকল্পনা তাঁদের। শনিবার থেকে জরুরি বিভাগে কাজে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আন্দোলনকারীদের। তবে দেবাশিস হালদার জানিয়েছেন, ‘‘মিছিলের পরে আমরা নিজ নিজ কলেজে ফিরে যাব। শনিবার থেকে জরুরি পরিষেবায় যোগ দেব। আংশিক কর্মবিরতি চলবে।’’ তবে প্রয়োজনে আবার পূর্ণ কর্মবিরতিতে ফিরতে পারেন বলেও হুঁশিয়ারি দেন তিনি।
গত ৮ আগস্ট, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসকের নাইট শিফট ছিল। পরদিন ওই হাসপাতালের সেমিনার হল থেকে তাঁর প্রায় বিবস্ত্র দেহ উদ্ধার হয়। অভিযোগ, ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। সুবিচারের দাবিতে গত ১২ আগস্ট থেকে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা। সেই মতো বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা ৪১ দিন ধরে চলছে কর্মবিরতি। প্রথমে আর জি কর হাসপাতালের সামনে ধরনায় বসেন তাঁরা। তবে গত ১০ দিন যাবৎ স্বাস্থ্যভবনের সামনে ধরনায় শামিল আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকরা। ইতিমধ্যেই সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এই ঘটনার জল গড়ায়। সর্বোচ্চ আদালতের তরফেও বার বার আন্দোলনরত চিকিৎসকদের কাজে ফেরার আর্জি জানানো হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তাঁদের কাজে ফেরার কথা বলেন। তবে নিজেদের পাঁচ দফা দাবিতে অনড় ছিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
একাধিকবার টালবাহানার পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর, সোমবার রাতে কালীঘাটের বাসভবনে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকও করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। ওই রাতে প্রায় ঘণ্টাদুয়েকের বৈঠকের পর জুনিয়র চিকিৎসকদের পাঁচ দফা দাবির প্রায় সিংহভাগই মেনে নেয় রাজ্য সরকার। তবে এখনও স্বাস্থ্যসচিবকে কেন অপসারণ করা হল না, তা নিয়ে টানাপোড়েন চলতে থাকে। মঙ্গলবারের জিবি মিটিংয়ের পর তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন কোনওভাবেই কর্মবিরতি প্রত্যাহার করবেন না। এর পর বুধবার সকালে ফের তাঁরা মুখ্যসচিবের সঙ্গে বৈঠকে বসার ইচ্ছাপ্রকাশ করে ই-মেল পাঠান। মুখ্যসচিব সেই প্রস্তাবে রাজি হন। সেই মতো নবান্নে প্রায় ঘণ্টাদুয়েক বৈঠকও করেন তাঁরা। বৈঠক শেষে আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের ৪ এবং ৫ নম্বর দাবিও মেনে নেন মুখ্যসচিব। তবে তার পরেও কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হঠেননি আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। বৃহস্পতিবার ফের জিবি মিটিং করেন তাঁরা। ওই বৈঠকের পরই কাটল জটিলতা। অবশেষে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিলেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।