সুকুমার সরকার, ঢাকা: গৃহযুদ্ধে পুড়ছে মায়ানমার। সংঘাতে জড়িয়েছে বার্মিজ সেনা তথা ‘টাটমাদাও’ ও বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। এখনও নেভেনি সংঘর্ষের আগুন। সেদেশের সেনাবাহিনী এবং আরাকান আর্মির মধ্যে চলা যুদ্ধে মানবঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে সাধারণ রোহিঙ্গা নাগরিকদের! এদিকে, মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ শহর মংডু যে কোনও মুহূর্তে আরাকান আর্মির হাতে চলে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে মংডু শহরের ৯০ শতাংশের বেশি এলাকা থেকে মায়ানমারের জুন্টা বাহিনীকে হঠিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে আরাকান আর্মি। শহরটিতে মায়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)-সহ অন্যান্য বাহিনীর ৪ হাজার সৈন্য রয়েছে। এই শহরটির চারপাশে ঘিরে রেখেছে আরাকান আর্মি। এর জের ধরে গত ৩ দিন ধরে টানা চলছে উভয় পক্ষের মধ্যে তীব্র গোলাগুলি। বিস্ফোরণের বিকট শব্দ শুনতে পাচ্ছেন নাফ নদের এপারে বাংলাদেশের নাগরিকরাও।
[আরও পড়ুন: ফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গুলি, নিহত যুবক]
মায়ানমারের মংডু থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে কয়েকটি এলাকার লক্ষাধিক রোহিঙ্গার জীবন বিপন্ন হয়ে পড়েছে। তাঁরা নাফ নদের ওপারে চাষের জমি, বন-জঙ্গলে আশ্রয় নিয়েছেন। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছেন তাঁরা। অভিযোগ উঠেছে, এসব রোহিঙ্গাদের মানব ঢাল হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। তাঁরা চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। অপরদিকে, মংডু শহরের দক্ষিণের কিছু অংশে কয়েকটি জায়গায় বিজিপির ঘাঁটি ছিল। ওইসব ঘাঁটি দিয়ে মায়ানমারের নৌবাহিনীর জাহাজ নাফ নদের ওপারে খাদ্য ও গোলাবরুদ সরবরাহ করত। কিন্তু গত সপ্তাহে দক্ষিণের ওইসব ঘাঁটিও আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে গিয়েছে। এই অবস্থায় গোলবরুদ ও খাদ্য সংকটে দুর্বল হয়ে পড়েছে ৪ হাজার সৈন্য। ফলে যে কোনও সময় মংডু শহর আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে পারে।
এদিকে, টেকনাফ পৌরসভার প্যানেল মেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, ওপারে মর্টার শেল, গ্রেনেড বোমার বিস্ফোরণের শব্দের পাশাপাশি রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের চেষ্টা তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে নাফ নদ অতিক্রম করে মায়ানমারের লোকজনের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সীমান্তে সতর্কতা অবলম্বন করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও কোস্ট গার্ড বাহিনী। টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী আধিকারিক (ইউএনও) মহম্মদ আদনান চৌধুরী বলেন, মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে আবারও এপারে তীব্র বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। ওটা মায়ানমারের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। এর জের ধরে কোনও প্রকার অনুপ্রবেশ মেনে নেওয়া হবে না।