সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: হতে পারতেন দুঁদে আইনজীবী। মানুষজনকে আনন্দ দিয়েও দিব্যি কেরিয়ার গড়তে পারতেন। কিন্তু ভাগ্য কখন, কার জীবন কোন পথে নিয়ে যায়, তা তো সকলের অজানা। যেমন, একজন কৌতুকাভিনেতা বনে গেলেন রাষ্ট্রনেতা। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি (Volodymyr Zelensky)। রাজনীতির কোনও অভিজ্ঞতা ছিল না। স্রেফ অভিনয় করে দর্শকদের মন জিতেছিলেন। তাঁদের কাছে আদর্শ নায়ক হয়ে উঠেছিলেন। আর সেটাই তাঁর জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। মোড় ঘোরানো পর্ব ছিল ইউক্রেনের (Ukraine) জন্যও। দেশের প্রেসিডেন্টের সেই মসনদ এবার টলমল তো বটেই, গদিচ্যুতি হওয়া সময়ের অপেক্ষামাত্র। রাশিয়া থেকে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে পরিস্থিতিতে জেলেনস্কির সেই উত্থান ও পতনের দিকটি একবার ফিরে দেখা যাক।
ইউক্রেনের ক্রিভিইরিজ (Kryvyi Rih)এলাকায় ভলোদিমির জেলেনস্কির জন্ম ইহুদী পরিবারে। কিয়েভ ন্যাশনাল ইকনমিক ইউনিভার্সিটি থেকে আইনে স্নাতক। কিন্তু ওসব আইনি তর্কবিতর্ক তাঁর মোটেই ভাল লাগত না। বরং হাস্যকৌতুকেই খুঁজে নিয়েছিলেন জীবনের পথ। তাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ করে পুরোদস্তুর কৌতুকাভিনেতা (Comedian) হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন জেলেনস্কি। ‘সারভেন্ট অফ দ্য পিপল’ নামের টেলিভিশন শো’র মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। গোটা দেশে তাঁর নাম ছড়িয়ে পড়ে।
[আরও পড়ুন: রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে কী মত ভারতের কমিউনিস্টদের? বিবৃতি দিল সিপিএম]
এই বিপুল জনপ্রিয়তা জেলেনস্কিকে ঠেলে দেয় রাজনীতির পথে। ২০১৪ সালে ইউক্রেনের রুশপন্থী প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকভিচ গদি হারানোর পর নতুন শাসক খোঁজার তাগিদে জেলেনস্কিকেই চান জনতা। যদিও তাঁর ভাগ্যে সেই শিঁকে ছেঁড়ে আরও বছর পাঁচেক পর। কোনও প্রেক্ষাপট ছাড়াই প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়ে পড়েন নামী কৌতুকাভিনেতা। বলা হয়, তিনি নাকি নির্বাচনী প্রচারে কোনও গুরুতর বিষয় নিয়ে আলোচনা এড়িয়ে যেতেন। সেটাই স্বাভাবিক। কারণ, ওই সংক্রান্ত কোনও অভিজ্ঞতাই নেই।
তবে ভোটে হইহই করে জিতেও যান ভলোদিমির জেলেনস্কি। এ স্রেফ ভাগ্যের খেলা। আর সেইদিন থেকেই রাশিয়ার (Russia) রোষানলে জেলেনস্কি। কারণ, তিনি ইয়ানুকভিচের মতো রাশিয়াঘেঁষা নন। বরং কড়া টক্কর দিতে উদ্যত। সেদিন থেকেই তিনি রাশিয়ার পয়লা নম্বর শত্রু। প্রায় ৩ বছর পর দেশের বড়সড় সংকটের মুখে কার্যত দিশেহারা প্রেসিডেন্ট। ধারে-ভারে রাশিয়ার থেকে অনেক ক্ষুদ্র ইউক্রেন যুদ্ধে ক্ষান্ত দেওয়াটা ভবিতব্য বলে ধরেই নিয়েছে। তবু খড়কুটো আঁকড়ে শেষ চেষ্টার মতো তিনি দেশবাসীর কাছে অস্ত্র তুলে রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আরজি জানিয়েছেন। কৌতুকাভিনেতা থেকে রাষ্ট্রনেতার দৌড়ে ঠিক যতটা চমকপ্রদ ছিল, ঠিক ততটাই ট্র্যাজিক রাশিয়ার মতো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধের চ্যালেঞ্জে তাঁর ভূমিকা।