সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: এ যেন চন্দন (Sandalwood) গাছের বন্দিদশা! চুরি ঠেকাতে লোহার খাঁচা দিয়ে চন্দন গাছকে বন্দি করল বনদপ্তর। পুরুলিয়ার বাঘমুন্ডি এলাকাজুড়ে একের পর এক চন্দন গাছ চুরির ঘটনায় বনদপ্তরের ক্যাম্পাসে থাকা চন্দন গাছের চুরি ঠেকাতে লোহার খাঁচা দিয়ে বন্দি করেছে। বাঘমুন্ডির অযোধ্যা বনাঞ্চলে এভাবেই একের পর এক চন্দন গাছকে লোহার পাইপ দিয়ে ওয়েল্ডিং করে চারপাশ ঘিরে সিল করে দেওয়া হয়েছে।
একই ছবি ধরা পড়েছে আড়শা (Arsha) বনাঞ্চলেও। পুরুলিয়া ও কংসাবতী দক্ষিণ বিভাগের ডিএফও (DFO) অসিতাভ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “চন্দন গাছ চুরি ঠেকাতে আমরা একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছি। জঙ্গল এলাকায় আমাদের টহলও বাড়ানো হয়েছে।” পুরুলিয়া বনবিভাগ জুড়ে কোথায় চন্দন গাছ রয়েছে তার একটি তথ্যপঞ্জি তৈরি করার প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। কারণ এই জেলায় বনভূমি ছাড়াও রায়তি জমিতেও বহু চন্দন গাছ রয়েছে।
[আরও পড়ুন: তুরস্কের ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা ১২০০ পার, ত্রাণ ও প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে ভারত]
গত বছরের ১২ অক্টোবর রাতে বনদপ্তরের কার্যালয়ের মধ্যেই শ্বেত চন্দনের গাছ একেবারে মুড়িয়ে কেটে চম্পট দিয়েছিল দুষ্কৃতীরা। বাঘমুন্ডি বনাঞ্চলের বুড়দা বিট অফিস থেকে চন্দন গাছ কেটে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। নৈশপ্রহরী থাকা সত্ত্বেও চন্দন গাছ একেবারে গোড়া থেকে উধাও হয়ে গিয়েছিল। ওই দিনই বাঘমুন্ডির বনাঞ্চল কার্যালয়ের আশ্রম বাগান এলাকা থেকে দুটি চন্দন গাছ কেটে নেওয়া হয়। যা পরের দিন নজরে আসে এলাকার বাসিন্দাদের। তবে দু’মাসের মধ্যেই ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহেই ওই ঘটনার কিনারা করে দেয় পুরুলিয়া জেলা পুলিশ। হাওড়া থেকে মাস্টারমাইন্ড-সহ চারজন দুষ্কৃতী গ্রেপ্তার হয়। কিন্তু তাতে কী? গত ৩১ জানুয়ারি বাঘমুন্ডির তোরাং গ্রামে ফের একটি চন্দন গাছ চুরি যায় বলে অভিযোগ। সেইসঙ্গে আরও একটি গাছ কাটার চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা। এই ঘটনাতেও গত শুক্রবার বাঘমুন্ডি থানার উত্তমডি গ্রামের কাছ থেকে তিন যাযাবরকে গ্রেপ্তার করে। তার মধ্যে দু’জন মহিলা।
[আরও পড়ুন: বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বড়সড় হামলা, ১৪টি মন্দিরে ভাঙচুরের অভিযোগ]
তবে আর কোনরকম ঝুঁকি নিতে চায়নি বনদপ্তর। কারণ গত অক্টোবরে বনদপ্তরের বিট কার্যালয় থেকেই একেবারে গোড়া থেকে মুড়িয়ে চন্দন গাছ কেটে নিয়ে যাওয়া হয়। ফলে সমালোচনার মুখে পড়েছিল পুরুলিয়া বনবিভাগ। তাই বনদপ্তরের ক্যাম্পাসে থাকা চন্দন গাছের এমন ‘জেড প্লাস ‘ (Z Plus) সুরক্ষা! ফলে এবার চন্দন বৃক্ষ কাটতে হলে আগে লোহার খাঁচা কাটতে হবে, যা সময় সাপেক্ষ।
পুরুলিয়া বনবিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাটারি চালিত এক ধরনের করাতের মাধ্যমে গাছ সহজেই কেটে নেয় দুষ্কৃতীরা। এই কাজে কোনওরকম শব্দ হয় না। ফলে বোঝাই যায় না ঠিক কি ঘটছে। সেজন্যই চন্দন বৃক্ষকে এমন লোহার খাঁচা।