ঝুঁকি নিতে পিছপা হন না, আপনি কি সেই গোত্রের বিনিয়োগকারী? না কি যথার্থ অর্থেই ‘রক্ষণশীল’ তকমা দেওয়া যায় আপনাকে? যে শ্রেণিরই হোন না কেন, এসবিআই মিউচুয়াল ফান্ড ‘মাল্টি সিলেক্ট’ আপনার জন্য সেরা ‘চয়েস’ হতে পারে। এই প্রকল্প গ্রাহকদের নিজ নিজ আর্থিক লক্ষ্যপূরণে সাহায্য তো করবেই, পাশাপাশি দেখাবে সমৃদ্ধির পথও। তথ্য সংকলনে নীলাঞ্জন দে
স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মিউচুয়াল ফান্ড এসবিআই মাল্টি সিলেক্ট (SBI Multi Select) নামে একটি বিশেষ প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রাহকদের ফিনান্সিয়াল প্ল্যানিং করতে উৎসাহ দিচ্ছে। নিজের ফিনান্সিয়াল গোলস ও অানুষঙ্গিক শর্ত পূরণ করতে এই প্রকল্পের সাহায্য নিতে পারেন তঁারা।
এসবিআই মাল্টি সিলেক্ট-এর তিনটি প্রধান বৈশিষ্ট্য:
১) বিভিন্ন অ্যাসেট ক্লাসের মাঝে নিজের রিস্ক ছড়িয়ে দিতে পারবেন ইনভেস্টর।
২) ‘কাস্টমাইজ’ করতে পারবেন নিজের হোল্ডিংগুলির গঠন যাতে বিশেষ লক্ষ্যগুলির দিকে এগিয়ে যেতে পারেন তিনি।
৩) একসঙ্গে সর্বাধিক চারটি ফান্ডে বিনিয়োগ করা সম্ভব হবে একটি লিঙ্ক ব্যবহার করেই।
[আরও পড়ুন: মূল্যবৃদ্ধির বাজারে সামান্য স্বস্তি মধ্যবিত্তর, একাধিক স্বল্প সঞ্চয় স্কিমে বাড়ল সুদের হার]
বিশদে জানানো যাক। ফান্ড হাউসটি প্রতিটি বিনিয়োগকারীকে নিজস্ব রিস্ক প্রোফাইল অনুযায়ী লগ্নি করতে বলছে। অার তেমন লগ্নি যাতে একাধিক স্কিমে একত্রে হয়, তাও নিশ্চিত করতে চাইছে। বিনিয়োগকারী নিজের ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা অনুযায়ী, অ্যাসেট অ্যালোকেশনের নিয়ম মেনে চলবেন, নিজের উদ্বৃত্ত বিভিন্ন অংশে ভেঙে ভেঙে ফান্ডগুলিতে লগ্নি করবেন। যদি ঝুঁকি নেওয়ায় পিছপা না হন, তাহলে ইকুইটি ফান্ড বেশি পরিমাণে রাখবেন। অার যদি রক্ষণশীল হন, তাহলে পোর্টফোলিও গঠনে বেশি সংখ্যক ডেট ফান্ড রাখবেন। প্রয়োজনমত গোল্ড-ভিত্তিক ফান্ডও বেছে নিতে পারবেন তিনি।
একটি উদাহরণে বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে যাবে। ‘মডারেট পোর্টফোলিও’ হিসাবে গণ্য হতে পারে এমন কম্বিনেশন। এখানে ধরে নেওয়া হচ্ছে ইনভেস্টরের হাতে পঁাচ লক্ষ টাকা অাছে লগ্নির জন্য :
মোট লগ্নি: ৫,০০,০০০ টাকা।
অন্য দৃষ্টান্তে- ‘অ্যাগ্রেসিভ পোর্টফোলিও’ দেওয়া হল। দেখলেই বোঝা যাবে যে সংশ্লিষ্ট বিনিয়োগকারী বেশ ঝঁুকি নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। কাজেই ইকু্যইটির মাত্রা অনেকটাই বেশি এবং তুলনায় ঝুঁকিপূর্ণ। সেক্টর ফান্ডও অাছে এই তালিকায়। মোট লগ্নি: ৫,০০,০০০ টাকা।
[আরও পড়ুন: অবসর জীবন চুটিয়ে উপভোগ করতে চাইলে এখনই করুন পরিকল্পনা, জেনে নিন বিশদে]
কোনও বিনিয়োগকারী কতখানি ইকুইটিতে লগ্নি করবেন তা তিনিই ঠিক করুন। অবশ্য পেশাদার অ্যাডভাইসর যেন থাকেন তঁার সহায়ক হিসাবে। ডেট বা ঋণপত্র-নির্ভর যে অংশ পোর্টফোলিওতে থাকতে পারে, সেটির উদ্দেশ্য হবে উপার্জনের সন্ধান দেওয়া। এছাড়াও ডেটের মাধ্যমে লিকুইডিটি পাবেন তিনি। অাগামিদিনে, যেখানে ইন্টারেস্ট রেটে দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে, সেখানে ডেট মার্কেটেও যে রিস্ক থাকবে, তা বলা বাহুল্য।
SBI Mutual Fund এবং অন্যান্য সংস্থার মূল বক্তব্য অ্যাসেট অ্যালোকেশন নিয়ে। উপযুক্ত অ্যালোকেশন ছাড়া লগ্নির প্রধান উদ্দেশ্য– গ্রোথ বা ইনকাম, অথবা দুই-ই– সফল হবে না। কাজেই যথাযথ অ্যালোকেশন করতে হবে যদি ভাল রিটার্ন পেতে হয়। এই মুহুর্তে ইকু্যইটি এবং ডেট ছাড়াও, সাধারণ ইনভেস্টর কমোডিটিতে লগ্নি করতে পারেন। প্রধানত গোল্ড নিয়ে বাজারে কৌতূহলী অামরা সবাই। গোল্ডে কম-বেশি বিনিয়োগ করে রাখতে চান অনেকেই। মুদ্রাস্ফীতির তীব্র প্রকোপ থেকে বঁাচতে ইদানীং গোল্ডে লগ্নি করছেন মার্কেটের এক বড় অংশ। সরাসরি না করে গোল্ড ফান্ড (অারও ভাল করে বললে, গোল্ড ইটিএফ) অনেকের পোর্টফোলিওর মধ্যেই রয়েছে। অাগামিদিনে এই ট্রেন্ড হয়তো অারও বড় অাকার ধারণ করবে, এমনও বিশ্বাস অাছে।
বিঃ দ্রঃ–ডেট মার্কেটের জন্য, মেয়াদের উপর জোর দেওয়া উচিত। শর্ট টার্ম টাকা যেন দীর্ঘমেয়াদি ফান্ডে না লগ্নি করা হয়। অন্যদিকে, লংটার্ম টাকা যদি স্বল্পমেয়াদি ফান্ডে বিনিয়োগ করা হয়, তাহলে রিটার্নের উপর চাপ থাকবে। এবং প্ল্যান থেকে বিচ্যুত হবেন লগ্নিকারী। তাই লিকুইড এবং অন্য শ্রেণির ডেট ফান্ডের ‘অাদর্শ মেয়াদ নিয়ে সতর্ক থাকুন।’
লেখক লগ্নি পরামর্শদাতা