স্টাফ রিপোর্টার: ভুল ভাঙল স্কুলের, কিন্তু অভিমানী এইচআইভি (HIV) পজিটিভ যুবকের মন গলল না। কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার ডাক পেয়েও সৌমিত্র গায়েনের বক্তব্য, ‘‘শুনলাম সব। কাজে যোগ দেব কি না ভেবে দেখব।’’
১২ ফেব্রুয়ারি বিয়ে হয়েছিল এইচআইভি পজিটিভ যুগলের। স্বপ্নের বিবাহবাসর শেষ হতেই ধাক্কা। কর্মস্থল থেকে পাত্র সৌমিত্র গায়েনকে আবশ্যিক ছুটিতে যেতে বলা হয়। মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যুবকের! দুই এইচআইভি পজিটিভের বিবাহে সহায়তা ছিল বেশ কিছু মানুষের। তাদেরই একজন আইনজীবী তথা কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অয়ন চক্রবর্তী। খবর পেয়েই নড়েচড়ে বসেন। আইনত কোনও এইচআইভি পজিটিভকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা অপরাধ। দ্রুত চিঠি দেওয়া হয় ওই স্কুল কর্তৃপক্ষকে। এদিকে ততদিনে এমন অমানবিক ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড়।
[আরও পড়ুন: বকেয়া DA-র দাবিতে মার্চ মাসে ধর্মঘটের ডাক দিলেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা]
মঙ্গলবার এইচআইভি পজিটিভ যুগল এবং ওই স্কুলের সম্পাদক ডা. রণজিৎ মণ্ডলকে নব মহাকরণে মুখোমুখি বসান কলকাতার অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল বিপ্লব রায়। হাজির ছিলেন আইনজীবী অয়ন চক্রবর্তী। বিপ্লব রায় বলেন, ‘‘একটা ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু তার মীমাংসা হয়েছে।’’ এদিন নিজের বুক পকেটের প্রিয় কলম সৌমিত্র এবং তাঁর স্ত্রী সুনীতাকে উপহার দেন অ্যাডমিনিস্ট্রেটর জেনারেল। দু’জনকেই তাঁর পরামর্শ, ‘‘তোমরা আমার সন্তানের মতো। কোনও বিপদে পড়লে এসো।’’
যে স্কুলে সৌমিত্র চাকরি করেন সেই দিশার সম্পাদক নিজে ইএনটি বিভাগের সার্জন। তাও কেন এইচআইভি পজিটিভকে বের করে দিয়েছিলেন? রণজিৎ মণ্ডলের দাবি, সৌমিত্র আমার সন্তানের মতো। ওকে চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়নি। মৌখিকভাবে বলা হয়েছিল। কারণ স্কুলের অভিভাবকরা বিষয়টি নিয়ে শঙ্কিত, উৎকণ্ঠিত। স্কুল কর্তৃপক্ষর যুক্তি, এই স্কুলে যারা পড়তে আসে তারা বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন। ফলে তাদের মা-বাবারা উদ্বিগ্ন। এইচআইভি পজিটিভদের নিয়ে কাজ করেন কল্লোল ঘোষ। এদিন তিনি বলেছেন, ‘‘স্কুল কর্তৃপক্ষকে বলেছি ট্রপিকাল মেডিসিনকে চিঠি লিখতে। যাতে তাঁরা এসে অভিভাবকদের সচেতন করেন।’’
যদিও এতকিছুর পরেও মন গলেনি সৌমিত্রর। আদৌ ওই স্কুলে আর যাবেন কি না তা ভেবে দেখবেন বলে জানিয়েছেন। অয়ন চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘সৌমিত্রর সঙ্গে যেটা হয়েছিল সেটা চূড়ান্ত অনভিপ্রেত। আশা করব, কোনও এইচআইভি পজিটিভের সঙ্গে এমনটা আর হবে না।’’ এদিন কথা থাকলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটার সৌমিত্রর হাতে তুলে দেয়নি। রণজিৎ মণ্ডল জানান, লিখিতভাবে ওকে বরখাস্ত করিনি। তাই নতুন অ্যাপয়েন্টমেন্ট লেটারের প্রয়োজন নেই।