রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: বাংলার উপকূল এলাকায় পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র (Missile) উৎক্ষেপণ করতে চলেছে ডিআরডিও। কাঁথির (Kanthi) জুনপুট উপকূল থেকে ফেব্রুয়ারি বা মার্চ মাসে এই পরীক্ষা হবে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে। তবে মিসাইল পরীক্ষার খবরে চিন্তায় পড়েছেন ক্ষুদ্র মৎস্যজীবীরা। বিশেষত যাঁরা সমুদ্রে নৌকা নিয়ে মাছ ধরেন এবং তা শুটকি মাছে পরিণত করে বাজারজাত করেন, তাঁদের বেশি সমস্যা হতে পারে। তাঁদের রুজিরুটি বলতে সমুদ্রে মাছ ধরা। সমুদ্রের উপর নির্ভর করেই দিনযাপন করে তাঁরা। কিন্তু ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষামূলকভাবে সমুদ্রে ফেলা হলে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মাছ ধরার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হবে বলে আশঙ্কা। যার ফলে রুটিরুজিতে টান পড়বে, চিন্তায় পড়েছেন মৎস্যজীবীরা।
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মিসাইলের লঞ্চিং প্যাড (Launch pad) তৈরির জন্য জুনপুটে ডিআরডিওকে রাজ্য সরকার জমি দিয়েছে। ফেব্রুয়ারির শেষ দিকে অথবা মার্চে ডিআরডিও ওই জায়গা থেকে টেস্ট লঞ্চ হবে। অন্যদিকে, বালেশ্বর থেকেও একটি মিসাইল ছোঁড়া হবে। দু’টি মিসাইল মাঝপথে একে অপরকে কীভাবে ‘ইন্টারসেপ্ট’ বা বিচ্ছিন্ন করে সম্ভবত সেই বিষয়ে গবেষণা করবে ডিআরডিও।
[আরও পড়ুন: রাজ্য বাজেটে নারী ক্ষমতায়নে বিশেষ নজর? বরাদ্দ বাড়বে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে’র?]
রাজ্যের উপকূল এলাকা থেকে প্রথম এধরনের মিসাইল টেস্ট লঞ্চ হচ্ছে। রাজ্যের উপকূল এলাকার নিরাপত্তা ও নজরদারি বাড়াতে কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষা এজেন্সিগুলি বাড়তি গুরুত্ব দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যেই রাজ্যের উপকূলে মিসাইল টেস্ট লঞ্চ প্যাড গড়ে তোলা হচ্ছে বলে মনে করছে জেলা প্রশাসন। সম্প্রতি ভারতীয় উপকূলরক্ষী বাহিনীর আইজি ইকবাল সিং চৌহান হলদিয়ায় জানিয়েছিলেন, রাজ্যে আরও দু’টি রেডার স্টেশন গড়ছে কোস্টগার্ড। একটি রেডার স্টেশন হচ্ছে জুনপুটে। বুধবার হলদিয়ায় জেলাশাসক তানবীর আফজল বলেন, উপকূলের নিরাপত্তায় কোস্টগার্ড নজরদারি বাড়াতে শুরু করেছে। জুনপুট উপকূলে মিসাইলের লঞ্চিং প্যাড তৈরি হচ্ছে। রেডার স্টেশনে যাওয়ার জন্য কোস্টগার্ড জমি চেয়েছিল। রাস্তার জন্য জমি শুধু নয়, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের টাকায় রাস্তাও করে দিয়ে জাতীয় নিরাপত্তায় সহায়তা করছে রাজ্য।
[আরও পড়ুন: আড়ালে বসে ষড়যন্ত্র, ‘পিকচারে’ না থেকেও নিয়োগ দুর্নীতির মূল মাথা পার্থই! বিস্ফোরক CBI]
এদিকে, কাঁথির জুনপুটে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে ব্রেকথ্রু সায়েন্স সোসাইটির পূর্ব মেদিনীপুর জেলা শাখা। সংগঠনের সম্পাদক সুমন্ত শী বলেন, ”২০১২ সালে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য সরকারের সাহায্য নিয়ে কাঁথির উপকন্ঠে জুনপুটে মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছিল। কিন্তু কাঁথির শুভবুদ্ধিসম্পন্ন জনসাধারণ ও জুনপুট এলাকাবাসীর প্রতিরোধের মুখে পড়ে পিছু হটে৷ কিন্তু পরিকল্পনা রূপায়ন থেকে সরে আসেনি৷ সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, ডিআরডিও খুবই অল্প সময়ের মধ্যে এই মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের পরীক্ষামূলক কাজ শুরু করতে চলেছে জুনপুটে উপকূল থেকে৷ আমরা এই পরিকল্পনার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং আবারও আন্দোলন গড়ে তোলার জন্য জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি৷” তাঁর আরও বক্তব্য, ”আমরা মনে করি, আধুনিক যুদ্ধে মিসাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফলে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য মিসাইল উৎক্ষেপণ কেন্দ্রের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। কিন্তু ভারতে ইতিমধ্যেই চাঁদিপুরে ক্ষেপণাস্ত্র ঘাঁটি তৈরি করা হয়েছে, যেখান থেকে পাঁচ ছয় মাস অন্তর একটি মিসাইল পরীক্ষা করা হয়। ফলে এই সময়সীমা কমিয়ে আনলেই তো বাড়তি মিসাইল কেন্দ্র স্থাপনের প্রয়োজন থাকে না।”