সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দ্রুত গলে যাচ্ছে হিন্দুকুশ পর্বতমালা এবং হিমালয় পর্বতের বরফ। এর পিছনে কারণ অবশ্য নিশ্চিতভাবেই বিশ্ব উষ্ণায়ন (Global Warming)। কিন্তু এর প্রভাব হতে চলেছে সুদূরপ্রসারী। নতুন এক গবেষণা বলছে, বিশ্বের গড় তাপমাত্রা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলেই হিন্দুকুশ এবং হিমালয়ের হিমবাহগুলি গলতে শুরু করবে আরও দ্রুত। তা তরল হয়ে নামবে নিম্নাভিমুখে।
উপমহাদেশে এই হিমবাহ থেকে সৃষ্ট নদীগুলিই বহু মানুষের জীবন-জীবিকার ভিত্তি। প্রায় ২০ কোটি মানুষের ভাত-রুটির জোগান নির্ভর করে এই হিমবাহ থেকে তৈরি নদীগুলির উপর। বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা সত্যি হলে, এই শতাব্দীর শেষে হিন্দুকুশের ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বরফ গলে জল হয়ে যেতে পারে। হাতে আর মাত্র কয়েক বছর। এর আগেও বিভিন্ন গবেষণায় দাবি করা হয়েছিল, বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এভারেস্ট, কারাকোরামের মতো পৃথিবীর দুই সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গেরও উচ্চতা কমছে। গলছে সুমেরু ও কুমেরুর বরফও। এরপর সবথেকে বেশি বরফ আছে হিন্দুকুশ হিমালয়েই। তাই তাকে বলা হয় পৃথিবীর তৃতীয় মেরু। এবার সেখানেই সংকট। সায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় উল্লেখ, এই শতাব্দীর শেষ নাগাদ পৃথিবী এখনকার থেকে ২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস মতো বেশি উষ্ণ হবে। তখন সারা বিশ্বে যত হিমবাহ আছে, তার মাত্র এক-চতুর্থাংশ অবশিষ্ট থাকবে। এখন জলবায়ু যেভাবে বদলাচ্ছে, তাতে এটাই পরিণতি হতে চলেছে।
শুক্রবার থেকে তাজিকিস্তানে শুরু হয়েছে রাষ্ট্রপুঞ্জের হিমবাহ সম্মেলন। এখানেই এই ভয়াবহ পরিণতির আশঙ্কা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। এখানে উপস্থিত ছিল ৫০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিরা। এশিয়ান ডেভলপমেন্ট ব্যাঙ্কসের ভাইস-প্রেসিডেন্ট ইংমিং ইয়াং বলেন, হিমবাহ এই হারে গলতে শুরু করলে জীবন বিপন্ন হবে কয়েক বিলিয়ন মানুষের। তার মধ্যে এশিয়ার দু’শো কোটিরও বেশি মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। এর জেরে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষে ক্ষতি হবে বিভিন্ন এলাকার। ক্ষতিগ্রস্ত হবে ইউরোপীয় আল্পস, আমেরিকার পশ্চিম প্রান্ত ও কানাডার রকি পর্বতমালা এবং আইসল্যান্ড। তবে গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তিতে যে লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছিল, অর্থাৎ উষ্ণতা বৃদ্ধি ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ধরে রাখতে পারলে, এই সব অঞ্চলে কিছু হিমবাহের বরফ সংরক্ষণ সম্ভব। বিশ্ব উষ্ণায়ন কমাতে নির্গমন কমাতে এই মুহূর্তে ক্লিন এনার্জির উপর ভরসা করা জরুরি।
এই গবেষণায় যুক্ত ছিলেন ১০টি দেশের ২১ জন বিজ্ঞানীর একটি দল। তাঁরা আটটি হিমবাহ মডেল ব্যবহার করে বিশ্বব্যাপী ২,০০,০০০-এরও বেশি হিমবাহের সম্ভাব্য বরফ ক্ষয় নিয়ে গবেষণা করেন। গবেষকদের বার্তা থেকে মোটামুটি এটা স্পষ্ট, আর ৮০ বছরও বাকি নেই। এর মধ্যেই হিন্দুকুশ ও অন্যান্য সুউচ্চ পর্বতমালার বরফ পুরোপুরি গলে যেতে পারে। আর বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে তাপমাত্রার বৃদ্ধি যদি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়, তাহলে বিপদের মাত্রা একটু কমতে পারে। তবে তাহলেও ২ ডিগ্রি হিন্দুকুশ পর্বতমালার বরফ অর্ধেকের উপর গলে যেতে পারে।
