সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: দেশে চিতার (Cheetah) সংখ্যা বাড়াতে কেন্দ্রের উদ্যোগে আফ্রিকা থেকে দফায় দফায় ২০ টি চিতা আনা হয়েছিল। প্রথমদিকে তারা সকলেই ভারতের পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিলেও কয়েক মাস পর থেকে শুরু হয় সমস্যা। মাত্র একমাসের ব্যবধানে মধ্যপ্রদেশে কুনো জাতীয় উদ্যানে (Kuno National Park) ২ টি চিতার মৃত্যু হয়। এর নেপথ্যে নানা কারণ উঠে এসেছে। খোদ দক্ষিণ আফ্রিকারই বক্তব্য, এই মৃত্যু স্বাভাবিক। তবে ভিন্নমত পোষণ করলেন দেশের প্রাক্তন বনকর্তা। তাঁর মত, পর্যাপ্ত স্থানাভাবেই মৃত্যু হয়েছে চিতাদের। কুনোর ৭৪৮ বর্গ কিলোমিটার ২০ টি চিতার জন্য মোটেও পর্যাপ্ত নয়।
যাদবেন্দ্র বিক্রমসিং ঝালা ভারতের বন্যপ্রাণ সংস্থার (WII) প্রাক্তন আধিকারিক। বন্যপ্রাণ নিয়ে তাঁর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা এবং চর্চা। কুনোর দুটি চিতার মৃত্যু নিয়ে তাঁর ব্যাখ্যা, সাধারণত ১০০ বর্গ কিলোমিটার বিস্তৃত জায়গা চিতাদের ঘোরাফেরার পরিধি। সেই তুলনায় কুনোর এলাকাটি তাদের বিচরণের জন্য পর্যাপ্ত নয় (Inadequate)। ৭৪৮ বর্গ কিলোমিটারের কুনোর জঙ্গলে বাফার জোন ৪৮৭ বর্গ কিলোমিটার। তাতেও এলাকা যথেষ্ট ছোট চিতাদের জন্য। আফ্রিকায় মাইলের পর মাইল শুধুই জঙ্গল। সেখানে যত্রতত্র স্বাধীনভাবে নিজেদের বিচরণ ক্ষেত্র তৈরি করে নিতে পারে চিতার দল। কিন্তু ভারতে বিশেষত কুনোর অরণ্যে তেমনটা নয়।
[আরও পড়ুন: ‘চায়ে পে চর্চা’য় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, রায়গঞ্জে জনসংযোগ যাত্রায় গেলেন রাজবংশী বাড়িতে]
এরপর আবার ভারতে (India) আফ্রিকার চিতাদের বংশবিস্তারের পরিকল্পনা ছিল। সেই পরিস্থিতিতে আরও বিস্তৃত স্থান দরকার। এই প্রসঙ্গে যাদবেন্দ্র রাজস্থানের একটি ব্যঘ্র সংরক্ষণ কেন্দ্র ও মধ্যপ্রদেশেরই দুটি অভয়ারণ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। সেখানে নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকার চিতাদের ছাড়া হলে পরিস্থিতি এতটা হতাশাজনক হতো না। তাঁর কথায়, ”৭৫০ বর্গ কিলোমিটার জায়গা একেবারেই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া কোনও এক প্রাণীর একটা প্রজন্ম নয়, দ্বিতীয়, তৃতীয় প্রজন্ম তৈরি না হলে তাদের অস্তিত্ব নিয়ে নিশ্চিত হওয়া যায় না। সেদিকে তাকিয়ে আরও অনেক বিস্তৃত জায়গায় প্রয়োজন ছিল চিতাদের জন্য। একটার পর একটা চিতাকে এনে এখানে ছাড়া হলে ভাল হত। একেবারে এতজনকে এনেই সমস্যা হয়েছে। এসব পরিকল্পনা ছাড়া এদেশে চিতাদের নিরাপদে রাখা সম্ভব নয়।”
[আরও পড়ুন: পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে বিধায়ক হিসাবে চান? বেহালায় ‘গণভোট’ সিপিএমের, কটাক্ষ তৃণমূলের]
প্রসঙ্গত, গত বছর নামিবিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে দফায় দফায় ৮ টি এবং ১২টি চিতা আনা হয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নিজে তাদের ছেড়ে দিয়েছিলেন কুনোর জঙ্গলে। তাদের মধ্যে এক স্ত্রী চিতা গর্ভবতীও হয়। পরে তার মৃত্যু হয়। একমাসের মধ্যে আরও একটি চিতাও মারা যায়। পরপর দুটি চিতার এই পরিণতিতে চিন্তার ভাঁজ পড়ে নেতা, মন্ত্রীদের কপালে। এখন প্রাক্তন বনকর্তার বক্তব্য সেই চিন্তা আরও বাড়াল বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।