গৌতম ব্রহ্ম, সাগর: মেলার আগে গঙ্গাসাগরের পরিবেশ নিয়ে চিন্তা বাড়ল। বায়ুদূষণের মাত্রা সেখানে মারাত্মক। সোমবার সকালে গঙ্গাসাগরে দূষণ নিয়ন্ত্রক বোর্ডে দেখা গিয়েছে, এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অর্থাৎ দূষণের মাত্রা ২৩৮। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪৪-এ। এই মাত্রা ২৫০ পেরলেই বলা হয়, পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। গঙ্গাসাগর সে পথেই এগোচ্ছে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। কলকাতাকেও টেক্কা দিয়েছে দূষণমাত্রা।
বাতাসের মান সাধারণত যে সূচকের মাধ্যমে মাপা হয়, তা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI)। সাধারণত শূন্য থেকে পঞ্চাশের মধ্যে থাকলে তা স্বাস্থ্যকর, অর্থাৎ 'গ্রিন জোন' বলে চিহ্নিত করা হয় সেই এলাকাকে। এখানে দূষণের কোনও ঝুঁকি থাকে না। হলুদ জোনে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স বা AQI থাকে ৫১ থেকে ১০০-র মধ্যে। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের জন্য সামান্য ঝুঁকি থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সেটা তেমন বিপজ্জনক নয়। এর পরে রয়েছে অরেঞ্জ জোন। এক্ষেত্রে AQI ১০১ থেকে ১৫০। ১৫১ থেকে ২০০ হল রেড জোন। আর ২০১ থেকে ৩০০-র মধ্যে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স থাকলে তা পার্পল জোন। অর্থাৎ এখানে বায়ুর মান খুব খারাপ বলে চিহ্নিত।
আগুন জ্বালানোর কারণেও বাড়ছে দূষণ। নিজস্ব ছবি।
এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, গঙ্গাসাগর এখন রয়েছে পার্পল জোনে। যাকে বলা হচ্ছে অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই সময় কিন্তু শব্দ দূষণের মাত্রা গঙ্গাসাগরে ছিল নিয়ন্ত্রণে। সেখানে শব্দ দূষণের সূচক বলছে, ৩৯ ডেসিবেল। প্রশাসন মেলার মাঠে দূষণ নিয়ন্ত্রণের বিষয় নিয়ে প্রথম থেকেই সক্রিয়। প্রত্যেকদিন মাইকে যে ঘোষণা করা হয়, তাতে স্পষ্টভাবে বলা হয় মেলা প্রাঙ্গণে আগুন জ্বালাবেন না। পরিবেশ দূষণ ছাড়াও এতে বিপদের ঝুঁকি রয়েছে। এমনকি মেলা প্রাঙ্গণের দায়িত্ব থাকা ভলান্টিয়ার থেকে শুরু করে পুলিশকেও এই বিষয়টি নজর রাখার জন্য বলা হয়।
তবে প্রশাসনের একটা স্তর থেকে বলা হয়েছে, যেহেতু এই মুহূর্তে গঙ্গাসাগরে ভাঙন একটা বড় চিন্তার কারণ, মেলা কারণে প্রত্যেকদিন প্রচুর মাটি ফেলা হচ্ছে। ফেলা হচ্ছে, বালিও এখানে চলছে শেষ মুহূর্তের কাজ। প্রচুর গাড়ি রোজ এখান দিয়ে যাতায়াত করছে, এর ফলে বায়ুতে বাড়ছে ধূলিকণা প্রভাব। দূষণবৃদ্ধির এটাও একটা কারণ মনে করছেন তারা। প্রশাসনের তরফ থেকে ইতিমধ্যেই এই দূষণ নিয়ন্ত্রণে নিয়ম করে জল ছেটানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশাসন এটাও বলছে, গঙ্গাসাগরে কখনোই দূষণ বড় চিন্তার কারণ হয়নি।
প্রশ্ন হল, এখন প্রত্যেক ঘণ্টায় গড়ে হাজার খানেক মানুষ আসছেন। কিন্তু ১০ তারিখের পরে যখন এই মেলা প্রাঙ্গণে নিয়ম করে ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ থাকবেন তখন এই মেলা প্রাঙ্গণের অবস্থা কী হবে? দূষণের মাত্রা তখন কোন জায়গায় গিয়ে দাঁড়াবে?