অর্ণব দাস: বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল বিশ্ব ঊষ্ণায়ন। একদিকে পৃথিবীর সার্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি, অন্যদিকে দূষণের জেরে একটু একটু করে প্রবল বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে চলছে মানবজাতি। বিশ্ব উষ্ণায়ন সরাসরি প্রভাব ফেলছে পৃথিবীর জলবায়ু পরিবর্তনে। ফলস্বরূপ বাড়ছে বন্যা, খরা, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টির মতো ঘটনা। পৃথিবীর এই মাত্রাতিরিক্ত তাপের সিংহভাগটাই আসে মূলত শিল্পকারখানাগুলি থেকে নির্গত তাপের কারণে। সেই তাপ যাতে বাতাসে মিশে বায়ুদূষণের পাশাপাশি আবহাওয়ার গড় তাপমাত্রা না বাড়িয়ে দেয়, সেজন্য তা পুনর্নবীকরণের অভিনব উপায় বের করলেন এক বঙ্গসন্তান। জাপানপ্রবাসী (Japan) উত্তর চব্বিশ পরগনার বারাকপুরের তরুণ গবেষক প্রীতম সাধুখাঁ এবার কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য তাপকে কাজে লাগিয়ে তা থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন।
সম্প্রতি বিশ্ববন্দিত নেচার জার্নালে প্রীতমের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে তিনি বিস্তারিত দেখিয়েছেন, কীভাবে কলকারখানা থেকে নির্গত বর্জ্য তাপকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করা যায়। বারাকপুর তালপুকুরের বাসিন্দা কৃতী ছাত্র প্রীতম মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন রহড়া রামকৃষ্ণ মিশনে। উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন বারাকপুর গভর্নমেন্ট হাইস্কুল থেকে। এরপর রসায়নশাস্ত্র নিয়ে বিএসসি এবং এমএসসি করেন ভোপালের ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইসার ভোপাল) (Indian Institute of Science Bhopal) থেকে। এরপরই পিএইচডি-র জন্য ডাক পান জাপানের কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে।
[আরও পড়ুন: খোঁজ মিলল সৌরজগতের দ্রুততম গ্রহাণুর! অবিশ্বাস্য গতি দেখে বিস্মিত বিজ্ঞানীরা]
এই কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়ের মেটেরিয়াল সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে গবেষণা করেই বর্জ্য তাপকে বিদ্যুৎশক্তিতে রূপান্তরিত করার হদিশ পান তিনি। বর্জ্য তাপকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করার গবেষণায় নিয়োজিত ছিলেন আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়, ইংল্যান্ডের ম্যাঞ্চেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়, জাপানের টোকিও ও কিয়ুশু বিশ্ববিদ্যালয়-সহ বিশ্বের মোট ৯টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ জন বিজ্ঞানী। যাঁদের অন্যতম প্রীতম।
এদিন সূদূর জাপান থেকে প্রীতম বলেন, “কলকারখানা থেকে শুরু করে জেনারেটর, যে কোনও ইঞ্জিন,সবেতেই তাপ উৎপন্ন হয়। এই তাপ কোনও কাজে লাগে না। তাই একে বর্জ্য তাপ বলে। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য এই বর্জ্য তাপ অন্যতম একটি কারণ। এই তাপকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করার জন্যই আমরা ২০১৮ সাল থেকে গবেষণা শুরু করি। আমরা কোবাল্ট এবং লোহার সঙ্গে কিছু জৈব যৌগ মিশিয়ে পাইরো ইলেকট্রিক ক্রিস্টাল বানাই। তাকে একটি সার্কিটের সঙ্গে জোড়া হয়েছে। ন্যানোটেকনোলজি ব্যবহার হয়েছে। নাম দেওয়া হয়েছে পাইরো-ইলেকট্রিক ন্যানো জেনারেটর। এই পাইরো ইলেকট্রিসিটি তাপশক্তিকে বিদ্যুতে রূপান্তরিত করে। তাপপ্রবাহে একটি নির্দিষ্ট অভিমুখে ইলেকট্রনের প্রবাহিত হওয়ার ধর্মকে এক্ষেত্রে কাজে লাগানো হয়েছে।”