স্টাফ রিপোর্টার: স্যাভিও মেডেরা, ডেরেক পেরেরা, খালিদ জামিল, স্ট্যানলি রোজারিও-একের পর এক প্রো লাইসেন্স থাকা ভারতীয় কোচেদের নামের পাশে বাংলা থেকে শুধুই শূন্যতা। অথচ এই বাংলা থেকে পিকে, অমল দত্তর মতো প্রথিতযশা কোচরা এক সময় ভারতীয় ফুটবল শাসন করেছে। তখন অবশ্য পরস্থিতি অন্যরকম ছিল। কোচিং করার জন্য দরকার ছিল না ফিফার নির্দেশিত কোনও লাইসেন্স। কেউ কেউ নিজের উদ্যোগে বিদেশ গিয়ে কোচিং লাইসেন্স করে এলেও বেশির ভাগ কোচ করতেন পাতিয়ালা থেকে এনআইএস কোচিং লাইসেন্স। সেখান থেকে এখন বদলে গিয়েছে অনেক কিছু। বিশেষ করে যেদিন থেকে এএফসির ক্লাব লাইসেন্সিং প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেমন আই লিগের কোচ হতে হলে ‘এ’ লাইসেন্স থাকতেই হবে। আইএসএলের কোচিং করতে গেলে ‘প্রো’ লাইসেন্স থাকা বাধ্যতামূলক। কোচিং তো পরের ব্যাপার। বাংলা থেকে এখনও পর্যন্ত কেউ প্রো লাইসেন্সিং (Pro License) ডিগ্রিটাই নিতে পারেননি। ফলে আইএসএলে কোনও বাঙালি কোচের কোচিংয়ের প্রশ্নই ওঠেনি।
আসলে প্রো লাইসেন্স সম্পূর্ণ করাটাও খুব একটা সহজ কাজ নয়। ৬টা মডিউলে কোর্স শেষ করতে হয়। তার উপর খরচের ব্যাপারটাও আছে। ফলে অনেকে প্রো লাইসেন্স করার প্রক্রিয়া শুরু করলেও শেষের দিকে যেতে পারে না। কিন্তু শঙ্করলাল চক্রবর্তী (Shankarlal Chakraborty) বোধহয় একটু অন্যরকম চরিত্র। যত প্রতিবন্ধকতাই আসুক, শেষ পর্যন্ত দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করবেন। সে চিমার সঙ্গে সংঘর্ষে পা ভেঙে যাওয়ার পর ফুটবলার জীবন যতই অনিশ্চিত হয়ে উঠুক না কেন। অথবা মোহনবাগানের কোচের চাকরি যাওয়ার পরেও লড়াই ছেড়ে না দেওয়া। তখনই ঠিক করে ফেলেছিলেন, যেভাবে অতীতেও ফিরে এসেছেন, এবারও ফিরবেন সেভাবেই। কোচিং যদি করতেই হয়, ভারতীয় ফুটবলের সর্বোচ্চ স্তরের কোচিং করানোর যোগ্য হয়ে উঠবেন। আর তারজন্য যেভাবেই হোক, পাশ করবেন ফিফার প্রো লাইসেন্স কোর্স। কিন্তু কীভাবে?
[আরও পড়ুন: ‘এই পিচে খেলা যায় না’, হার্দিকের তোপের জেরে চাকরি গেল কিউরেটরের]
শঙ্কর তখন কোচিং করছেন মহামেডানে। খোঁজ খবর নেওয়া শুরু করেছেন, প্রো লাইসেন্স কোর্সের ব্যাপারে। জানেন, এরজন্য বিদেশে যেতে হবে। কারণ, সেই সময় ভারতে প্রো লাইসেন্সের কোর্স হচ্ছে না। এই সময় জামাল ভুঁইয়ার মাধ্যমে জানতে পারেন, বাংলাদেশে গিয়ে প্রো লাইসেন্সের অন্তত চারটে মডিউল করা সম্ভব হবে। বাকি মডিউল করতে হবে নরওয়ে আর উজবেকিস্তানে। কিন্তু খরচ? বংলাদেশ, নরওয়ে, উজবেকিস্তানে গিয়ে ৬টা মডিউল করা খুব একটা ছোট খাট ব্যাপার নয়। একজন বাঙালি কোচ প্রো লাইসেন্স করতে চান জেনে বেশ কিছু শুভান্যুধায়ী এই সময় এগিয়ে আসেন শঙ্করের পাশে। ২০২১ এ প্রো লাইসেন্সের প্রথম মডিউল শুরু করেন প্রাক্তন এই মোহনবাগান কোচ। তারপর ধীরে ধীরে মোট ৬টি মডিউলেই পাস করে প্রো লাইসেন্স পরীক্ষায় প্রথম বাঙালি কোচ হিসেবে সসম্মানে কৃতকার্য হয়েছেন শঙ্করলাল চক্রবর্তী।
কিন্তু এবার? এই মুহূর্তে আই লিগে সুদেভা এফসিকে কোচিং করানো শঙ্করলাল বলছিলেন, ‘আমি চিরকাল লড়াই করেই সব কিছু পেয়ে এসেছি। এবারও তাই লড়াই করেই কোচিংয়ের সুযোগ পেতে চাই। প্রো লাইসেন্স থাকায় আইএসএলের চিফ কোচ হতে যেমন সমস্যা নেই, সেরকম জাতীয় দলে কোচিং করতেও সমস্যা হবে না। ফলে এই জায়গাগুলিতে কোচিং করার সুযোগ পাওয়ার জন্য অবশ্যই স্বপ্ন দেখি। আর এটাও জানি, তারজন্য ফের লড়াই শুরু করতে হবে।’ আপনি তো প্রো লাইসেন্স নিয়ে বিদেশেও কোচিং করতে পারবেন? একমাত্র বাঙালি প্রো লাইসেন্সের অধিকারী কোচ বললেন, ‘অবশ্যই। ভারতেই কোচিং করতে হবে, এরকম ব্যাপার নেই। তবে এই মুহূ্র্তে আমার লক্ষ্য, আই লিগে সুদেভাকে ভাল জায়গায় পৌঁছে দেওয়া। তারপর ধীরে ধীরে এগোনো।’ এর আগেও ছোট ছোট লক্ষ্য ঠিক করে শঙ্করলাল যেভাবে এগিয়েছেন বড় লক্ষ্যর দিকে, এবারও সেভাবেই পথ চলা শুরু করেছেন বাঙালি হিসেবে প্রথম প্রো লাইসেন্স কোচ।