দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: একসঙ্গে সংসার করেছেন। তাঁর নামে রয়েছে বুটিক, প্রোমোটিংয়ের মতো একাধিক অংশীদারী ব্যবসা। বিলাসবহুল ফ্ল্যাটের মালকিনও তিনি। তা সত্ত্বেও স্বামীর বিপুল সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে কিছুই জানা নেই নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দোপাধ্যায়ের স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার।
শনিবার সকালে হুগলির ব্যান্ডেলের নিবেদিতা পার্কে শান্তনুর একটি বিলাসবহুল বাড়িতে অভিযান চালান ইডি আধিকারিকরা। পাশাপাশি তাঁরা চুঁচুড়ার পিপুলপাতি মোড়ের কাছে জগুদাস পাড়ায় শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কার নামে কেনা একটি ফ্ল্যাটেও চলে তল্লাশি। স্থানীয়রা জানান, শান্তনুর স্ত্রী তাঁর ছেলেকে ডন বসকো স্কুলে পড়তে দিয়ে এই ফ্ল্যাটে সময় কাটাতেন। তারপর ছুটির সময় স্কুল থেকে ছেলেকে নিয়ে ফিরে যেতেন। এদিন শান্তনুর স্ত্রী প্রিয়াঙ্কা প্রথমবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন। স্বামীর সম্পত্তির পরিমাণ সম্পর্কে তাঁর কোন ধারণা নেই বলেই দাবি প্রিয়াঙ্কার। নিয়োগ দুর্নীতিতে ধৃত বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতা কুন্তল ঘোষের সঙ্গে তাঁদের পরিবারের পরিচয় প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন প্রিয়াঙ্কা। জানান, কুন্তল ঘোষকে পাড়ার ছেলে হিসাবে চিনতেন। স্বামীর বিপুল সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে তিনি বলেন “এটা শান্তনু জানে।” তবে ইডি জিজ্ঞাসাবাদ করলে সম্পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন শান্তনু ঘরনি প্রিয়াঙ্কা।
[আরও পড়ুন: ‘ক্রমশ প্রকাশ্য’, সৌমিত্রর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের মাঝে নতুন সম্পর্ক নিয়ে মুখ খুললেন সুজাতা]
অন্যদিকে, বলাগড়ের চাদরায় গঙ্গার পাড়ে শান্তনুর বিলাসবহুল রিসর্টের মেন গেটের তালা ভেঙে ইডি আধিকারিকরা প্রবেশ করেন। রিসর্টের প্রত্যেকটি প্রবেশপথে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো থাকলেও তথ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য তার হার্ড ডিস্ক আগে থেকেই সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। গোটা গেস্ট হাউসে মোট বারোটি সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো ছিল। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য ইডি আধিকারিকরা শান্তনু ঘনিষ্ঠ সুপ্রতিম ঘোষ ওরফে আকাশ, নিলয় মালিক ও জেলা তৃণমূলের এক নেতাকে গেস্ট হাউসে জেরা করে। জানা যায় সুপ্রতিম ওরফে আকাশকে জেরা করে ইডি আধিকারিকরা পরবর্তীকালে দুটি হার্ড ডিস্ক বাজেয়াপ্ত করেন। স্থানীয়দের অভিযোগ, জোর করে ভয় দেখিয়ে গেস্ট হাউসের জমি কিনেছেন শান্তনু।
বলাগড়বাসীর অভিযোগ, সমগ্র বলাগড় যখন গঙ্গার ভাঙনে আতঙ্কিত তখন শান্তনু গেস্ট হাউসের পিছনে গঙ্গার পাড়ে নিজেই বালির বস্তা ফেলেন। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, প্রশাসনের অর্থে এই পাড় বাঁধানোর কাজ হয়েছে। শান্তনু ঘনিষ্ঠ সুপ্রতিম বহিষ্কৃত তৃণমূল নেতার বিশাল সাম্রাজ্যের হাল হাকিকত জানেন বলে মনে করছে ইডি আধিকারিকরা। উল্লেখ্য, সুপ্রতিম ওরফে আকাশ জিরাট কলেজের গ্রুপ সি পদে কর্মরত। সুপ্রতিম জিরাট কলেজে গ্রুপ সি’র পদে ইন্টারভিউ দেওয়ার সময় ইন্টারভিউ বোর্ডে ছিলেন কলেজ পরিচালন সমিতির প্রেসিডেন্ট শান্তনু। তাই সুপ্রতিমের চাকরির পিছনে শান্তনুর কতটা ভূমিকা ছিল তাও খতিয়ে দেখা হবে।