সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: গত আগস্টে নতুন করে আফগানিস্তান (Afghanistan) দখল করেছে তালিবান (Taliban)। আর তারপর থেকেই ‘কাবুলিওয়ালার দেশের’ মাথার উপর থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছে আশঙ্কার কালো মেঘ। জঙ্গিদের ভয়ে দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছেন বহু মানুষ। আর যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও দিন কাটাচ্ছেন আতঙ্ককে সঙ্গী করে। এই অবস্থায় খারাপ অবস্থা সেদেশের অনাথ আশ্রমগুলিরও। কাবুলের এক অনাথ আশ্রমের প্রধান আহমেদ খলিল মায়ান সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন তাঁর অসহায়তার কথা। সেই অসহায়তাই বুঝিয়ে দিচ্ছে কোন অন্ধকারের সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আফগানিস্তান।
গত ২ মাসের তালিবান শাসনের সময়কালে বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় সমস্ত অনুদানই। বিদেশের অনুদান যেমন বন্ধ, তেমনই স্থানীয় অনুদানও আর আসছে না। মায়ানের কথায়, ”দুর্ভাগ্যজনক ভাবে সবাই-ই তো দেশ ছেড়ে চলে গিয়েছে। আফগান কিংবা বিদেশি দাতারা। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে গিয়েছে দূতাবাসগুলিও। আমি তাঁদের সকলকেই ইমেল করে সাহায্য চেয়েছি। কিন্তু কেউই আর জবাব দিচ্ছেন না।”
[আরও পড়ুন: কিমের কোরিয়ায় অনাহারের আশঙ্কা, রাষ্ট্রসংঘের রিপোর্টে প্রকাশ্যে উদ্বেগজনক তথ্য]
পরিস্থিতি এমনই দাঁড়িয়েছে, হাতে আর সামান্য অর্থ আর খাদ্যই রয়ে গিয়েছে। তাই বাড়ছে উদ্বেগ। কার্যত আধপেটা খেয়েই দিন গুজরান করতে হচ্ছে শিশুদের। মায়ান যে অনাথ আশ্রমটি চালান, সেখানে ১৩০টির মতো শিশু রয়েছে। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে চলছে আশ্রমটি। সাধারণত যুদ্ধবিধ্বস্ত আফগানিস্তানে বহু সময়ই এমন শিশুরা আসে, যাদের বাবা মারা গিয়েছেন হামলায়। মা একা সংসার চালাতে না পেরে সন্তানকে অনাথ আশ্রমে রাখছেন। পাশাপাশি অসংখ্য শিশুই রয়েছে যারা বাবা-মা দু’জনকেই হারিয়েছে। তাদের মাথার উপরে ছাদ ও মুখের খাদ্যের জোগান দেয় এই অনাথ আশ্রমগুলি। কিন্তু এই কঠিন সময়ে নতুন করে সংকটে অসহায় শিশুগুলি।
তবু এরই মধ্যে স্বপ্ন দেখা বন্ধ নেই। ওই অনাথ আশ্রমেরই বাসিন্দা বছর নয়েকের ছোট্ট সমীরা জানাচ্ছে, বড় হয়ে সে চিকিৎসক হবে। তাদের গরিব দেশের মানুষদের প্রাণ বাঁচাবে সে। সেই সঙ্গে তার স্বপ্ন, আফগান শিশুরা সবাই যেন পড়াশোনা শিখে বড় হতে পারে।
[আরও পড়ুন: মায়ানমারে তুঙ্গে গৃহযুদ্ধ, বিদ্রোহীদের হামলায় নিহত বার্মিজ সেনার ৩০ জওয়ান]
কিন্তু ছোট্ট সমীরা বুঝতে পারছে না, তার এই সোনালি স্বপ্নের উপরে ছায়া ফেলছে অন্ধকার তালিবান যুগ। আর তাই আশঙ্কার মেঘ মায়ানদের মুখে। তবে তাঁরাও সমীরাদের মতো আশা রাখছেন, শেষ পর্যন্ত সব ঠিক হয়ে যাবে। আফগান ‘পৃথিবী আবার শান্ত হবে’। আপাতত সেই স্বপ্নই ভরসা করে এগোতে চাইছেন তিনি।