স্টাফ রিপোর্টার, বর্ধমান: বর্ধমানের আদিবাসী তরুণী খুনের ঘটনায় সিটের জালে 'বিশেষ বন্ধু'। শুক্রবার রাতে তাকে গ্রেপ্তার করে সিট। ধৃতকে আজ শনিবার আদালতে পেশ করা হবে। তার আগেই সিবিআই তদন্তের দাবি তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে মৃতের পরিবার।
ধৃতের নাম অজয় টুডু (২৮)। সে নিহত প্রিয়াঙ্কা হাঁসদার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। বাড়ি পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরার কাকরাপুঞ্জি গ্রামে। এদিন তাকে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার হাউর থেকে ধরেছে সিট। রাতেই তাকে বর্ধমানে আনা হয়েছে।
১৪ আগস্ট বাড়ির পিছনের মাঠ থেকে প্রিয়াঙ্কার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয়। তিনি বর্ধমানের নান্দুর ঝাপানতলা এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ঘটনার দুই দিন আগে বেঙ্গালুরুতে বেসরকারি সংস্থায় চাকরির প্রশিক্ষণ নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন তরুণী। ঘটনার দিন রাতে ওই তাঁর মোবাইলে একটি ফোন আসে। শৌচালয়ে যাবে বলে ঘর থেকে বেরিয়ে যান তিনি। কিছু পরে উদ্ধার হয় দেহ।
[আরও পড়ুন: ওঝার নিদান! ভূত ছাড়াতে মহিলাকে মুখে জুতো নিয়ে শহর ঘোরাল পরিবার]
৯ সদস্যের স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম বা সিট গঠন করে তদন্তে নামে পুলিশ। তদন্তে উঠে আসে ওই তরুণীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ঘটনায় জড়িত। আততায়ী খুনে ব্যবহৃত ধারাল অস্ত্র ও তরুণীর মোবাইলটি সঙ্গে করে নিয়ে যায়। যাতে তথ্য প্রমাণ না পাওয়া যায়। সিট তরুণীর মোবাইলের সূত্র ধরে ও আরও বেশ কিছু তথ্যের ভিত্তিতে আততায়ীকে চিহ্নিত করে।
পুলিশ জানতে পারে কাজের সূত্রে বেঙ্গালুরুতে প্রিয়াঙ্কার সঙ্গে পরিচয় হয় অজয়ের। ক্রমে ঘনিষ্ঠতা বাড়ে তাঁদের। সিট বেঙ্গালুরুতে হানা দিয়ে বেশ কিছু তথ্য পেয়েছে। পাশাপাশি প্রিয়াঙ্কার ওই ‘বন্ধু’-র বাড়িতেও হানা দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু সেখানেও পাওয়া যায়নি তাকে। আততায়ীকে ট্র্যাক করে আরও কয়েকটি জায়গায় হানা দিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু জালে তুলতে পারেনি।
এদিকে, ধৃতের গ্রেপ্তার হওয়ার আগে ১০ দিন পরেও পুলিশ গ্রেপ্তার করতে না পারায় হতাশ প্রিয়াঙ্কার বাবা, শুক্রবার হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন। ওই তরুণীর বাবা সুকান্ত হাঁসদা এদিন বিকেলে বলেন, "আমার মেয়ের খুন হওয়ার ১০ দিন অতিক্রান্ত হলেও এখনও পুলিশ কোনও তথ্য আমাদের জানায়নি। মাঝে মধ্যে কিছু মানুষ আমাদের বাড়িতে আসছেন সান্ত্বনা দিচ্ছেন চলে যাচ্ছেন। আমরা যা হারানোর হারিয়েছি। কে খুন করল, তার কেন ফাঁসি হবে না সেটা আমরা জানতেই এবারে সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে গিয়েছি।"
তাঁর আইনজীবী দেবপ্রিয় সামন্ত জানান, পুলিশ তদন্তে কোনও অগ্রগতি করতে পারেনি। নিহত তরুণীর বাবা পুলিশি তদন্তে আস্থা হারিয়েছেন। মেয়ের খুনের সুবিচারের দাবি চেয়ে হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন জানানো হয় শুক্রবার। বিচারপতি মামলা করার অনুমতি দিয়েছেন। ২৭ তারিখে মামলাটি শুনবেন বলেও জানিয়েছে আদালত।
যদিও শুক্রবার রাতেই অজয়কে জালে তুলেছে পুলিশ। তদন্তকারীরা এদিন পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন জায়গায় হানা দিয়েছিলেন। হাউর গ্রাম থেকে রাতে তাকে ধরেছে সিট। রাতেই তাকে বর্ধমানে আনা হচ্ছে।
মৃতের পরিবার ঘটনার সিবিআই তদন্ত চেয়ে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হওয়া প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং বলেন, ‘‘এই খুনে ওই তরুণীর এক বন্ধু জড়িত তার প্রমাণ মিলেছে। তা নিহত তরুণীর পরিবারকেও জানানো হয়েছে আগেই। এখন ওনারা যদি আদালতে সিবিআই দাবি করে থাকেন, তাহলে করবেন। আদালত যে নির্দেশ দেবে সেটা মানা হবে।’’ যদিও মেয়ের খুনিরা ধরা পড়ার পর সুকান্ত হাঁসদার সঙ্গে রাতে যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। ফলে প্রতিক্রিয়া মেলেনি।