স্টাফ রিপোর্টার: এমন ঘটনা সচরাচর ঘটে না। চোরাকারবারি হয়ে কখনও জেনেশুনে সরকারি প্রতিনিধির কাছে চুরির জিনিস কেউ বেচতে আসে না। শনিবার কিন্তু হল তেমনটাই। যে ঘটনাকে ষড়যন্ত্র বলেই মনে করছেন রাজ্য বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ বোর্ডের সদস্য জয়দীপ কুণ্ডু।
যদিও শেষরক্ষা হয়নি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শনিবার ক্রেতা সেজে হাতিবাগানের একটি বাড়িতে হাজির হন বনদপ্তরের আধিকারিকরা। কয়েক লাখ টাকার প্রলোভন দেখানোর পরই ঝুলি থেকে লেপার্ডের ছাল বেরিয়ে পড়ে। গ্রেপ্তার করা হয় সৌরভ দাস ওরফে গোপাল এবং তপোব্রত মজুমদার নামে দু’জনকে। ধৃতদের জেরা করে ওই চক্রের আরও কয়েকজনের নাম উঠে এসেছে। তাঁদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। ধৃত দু’জনের বাড়িই শ্যামবাজারে।
[ পিএইচডি পর্যন্ত পড়াশোনার ব্যয়বহনের আশ্বাস, মেধাবী ছাত্রীর পাশে অভিষেক ]
ঘটনার শুরু শনিবার সকালে। জয়দীপবাবুর কাছে লেপার্ডের একটি ছাল বেচতে এসেছিলেন সৌরভ দাস ওরফে গোপাল নামে এক যুবক। জয়দীপবাবু বলেছেন, “জানতাম ছেলেটি গাড়ি চালায়। কাজের সূত্রে অনেক আগে একবার এই ছেলেটির সঙ্গে দেখা হয়। আচমকা এতদিন পর একটি লেপার্ডের ছাল পেয়ে সেটি বিক্রি করতে চেয়ে আমার সঙ্গেই সে যোগাযোগ করায় সন্দেহ হয়।” সৌরভকে সেটি নিয়ে আসতে বলেন জয়দীপবাবু। সন্দেহের বশে সঙ্গে সঙ্গে খবর দেন বনদপ্তরে। জানানো হয় রাজ্য প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) রবিকান্ত সিনহাকেও। সৌরভ জয়দীপবাবুর বাড়িতে এসে বাঘের ছালটি দেখায়। সেখানে আগে থেকেই বনদপ্তরের আধিকারিকরা হাজির ছিলেন ক্রেতার ছদ্মবেশে। দরাদরি শুরু হয়। বাঘছালটির জন্য ২০ লক্ষ টাকা দাম চায় সৌরভ। দরদাম করে ২ লক্ষ টাকায় সেটি বেচা চূড়ান্ত হয়। কিন্তু ছালটি সে কোথায় পেয়েছে, তার কোনও কাগজপত্র আছে কি না, তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি সৌরভ। শেষে একবার জানায় উত্তরবঙ্গে বাঘছালটির হদিশ পায় সে।
এর পরই সৌরভের সঙ্গে আরও একজনকে বাঘছাল পাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে বনদপ্তর। বাঘ সংরক্ষণ নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন জয়দীপবাবু ও তাঁর স্ত্রী সুচন্দ্রা কুণ্ডু। জয়দীপবাবুর কথায়, “এই ছেলেটি শুধু নয়, আমি কী ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছি, তা অনেকেই জানেন। এই ধরনের পাচার বা চোরা কারবারের সঙ্গে যুক্ত অনেককেই আমরা হাতেনাতে ধরেছি। তার পরও এমন জিনিস নিয়ে আমার কাছেই কেন বেচতে আসবে।” তাঁর কথায়, “কেউ বা কারা ষড়যন্ত্র করে আমায় ফাঁসাতে চেয়েছিল। আমার সন্দেহ হওয়ায় আমি বনদপ্তরকে জানাই।” বাঘের ছালটিও উদ্ধার করে নিয়ে যায় বনদপ্তর। সেখানেই সৌরভকে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে বনদপ্তর। দপ্তরের সন্দেহ, উত্তরবঙ্গেই হয়তো কোনও বাঘের ছাল পাচারকারী দলের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে ধৃত সৌরভ।
[ অভিষেক ও কৈলাসের টুইটযুদ্ধে সরগরম রাজনৈতিক মহল ]