গৌতম ব্রহ্ম: মাথায় মাথায় তিনজন অমিতাভ বচ্চন শুয়ে থাকলেও এর থেকে ছোট হবে। এতটাই লম্বা।
আর বিষ? ছ’-সাতটা কেউটে-গোখরোর সমান! চাইলে এই সরীসৃপ ছোট চেহারার কুমিরও উদরস্থ করতে পারে।
এমন বিষধর যদি লোকালয়ে ঢুকে পড়ে? কামড়ায়?
এমনটাই হচ্ছে। উত্তর ও দক্ষিণ, বাংলার দুই প্রান্তেই লেন্সবন্দি হল সাপেদের রাজা শঙ্খচূড় বা কিং কোবরা। মানে যে সে গোখরো নয়, একেবারে রাজ গোখরো। মঙ্গলবার উত্তরবঙ্গের চালসা এলাকার বরদিঘি চা বাগানের শ্রমিক কলোনিতে দেখা যায় প্রায় বারো ফুটের একটি পূর্ণবয়স্ক শঙ্খচূড়। সাপটিকে উদ্ধার করে বনদপ্তরের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এবার অবশ্য কাউকে দংশন করেনি। কিন্তু কয়েক মাস আগেই বিষ ঢেলেছিল পানের বরজের এক মালিকের শরীরে।
কিং কোবরার এভাবে লোকালয়ে প্রবেশ বাঘের লোকালয়ে চলে আসার থেকেও অনেক বেশি বিপজ্জনক ইঙ্গিত বহন করে, এমনটাই মনে করছেন সর্প গবেষক হারপেটোলজিস্ট বিশাল সাঁতরা। তাঁর মতে, “আগে গরুমারা, চাপড়ামারি, বক্সাতে দেখা যেত কিং কোবরা। কিন্তু ইউক্যালিপটাস ও শাল গাছ লাগানোর পর এদের আর বক্সাতে দেখা যায় না। কারণ, শঙ্খচূড় জঙ্গলের মাটি ঘাস, পাতা বা আগাছায় ভরা না হলে থাকে না। তাছাড়া জলবায়ুর পরিবর্তনও সাপকে বাধ্য করছে জনবসতির মধ্যে ডেরা বাঁধতে।”
এ তো গেল উত্তরবঙ্গের কথা। সুন্দরবনেও সম্প্রতি লেন্সবন্দি হয়েছে শঙ্খচূড়। মে মাসে পরপর দু’দিন দেখা মিলেছে এই বিষধরের। পরিবেশবন্ধু মন্টু হাইত মে মাসে সুন্দরবনে নিজের বাংলোয় গিয়েছিলেন। সেখানেই তিনি সাপটিকে নদী পেরোতে দেখেন। মন্টুবাবুর কথায়, “সেই ১৯৯৬ থেকে সুন্দরবন যাচ্ছি। এই প্রথমবার দেখলাম শঙ্খচূড়। তাও পরপর দু’দিন। প্রথমটা লম্বায় আট ফুটের মতো। দ্বিতীয়টি ১০-১১ ফুট। যদিও শঙ্খচূড় ১৮ ফুট লম্বাও হয়।” এই সুন্দরবন থেকেই প্রথম শঙ্খচূড় উদ্ধার হয়েছিল, ১৮৫২ সালে। পরে উত্তরবঙ্গেও দেখা যায় এই সাপ। পরিবেশবিদদের মতে, বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য রক্ষায় শঙ্খচূড় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বিষধরের মূল খাদ্য সাপ। কেউটে, সাধারণ গোখরো, দাঁড়াশ, চন্দ্রবোড়া সবই খায় রাজ গোখরো। তাই এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘ওফিওফেগাস হানা’। ল্যাটিন ভাষায় যার অর্থ সাপ খোর, জানালেন সর্পবিশারদ শিবাজি মিত্র।
[আরও পড়ুন: গলছে পুরু বরফের চাঁই, রেকর্ড ভেঙে আন্টার্কটিকায় তাপমাত্রার পারদ ছুঁল ১৮ ডিগ্রি]
বিশেষজ্ঞদের মত, শঙ্খচূড়ের বিষের তীব্রতা কেউটে বা সাধারণ গোখরোর তুলনায় কম হলেও এক ছোবলে অনেক বেশি বিষ ঢালতে পারে। একটি পূর্ণবয়স্ক কেউটের থলিতে ১ মিলিলিটারের বেশি বিষ থাকে না। কিন্তু শঙ্খচূড় ৭ মিলিমিটার পর্যন্ত বিষ ঢালতে পারে। সমস্যা হল, এই সাপের কোনও ‘অ্যান্টি স্নেক ভেনাম’ নেই। অর্থাৎ কামড়ালে মৃত্যু প্রায় নিশ্চিত।
The post শিকার ধরতে লোকালয়ে ঘুরছে শঙ্খচূড়, আতঙ্ক বাড়ছে ২ বঙ্গে appeared first on Sangbad Pratidin.