shono
Advertisement

রোগ থাকবে দূরে, শরীরে পড়বে না বয়সের ছাপ, ভরসা রাখুন আয়ুর্বেদে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে।
Posted: 09:00 PM Jul 12, 2023Updated: 09:00 PM Jul 12, 2023

ডা. শবরী সেনগুপ্ত: আয়ুর্বেদে বলা হয়েছে ‘শরীরং ব্যাধি মন্দিরম’ অর্থাৎ আমাদের শরীর ব্যাধির মন্দির আর এই ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ করাই হল আয়ুর্বেদের মূলমন্ত্র। এটা দু’ভাবে ভাগ করা যেতে পারে –
এক- সুস্থ ব্যক্তির স্বাস্থ্য রক্ষা করা; 
দুই- অসুস্থ ব্যক্তির রোগ প্রশমন করা।

Advertisement

১৯৭৮ সালের একটি স্লোগান ‘হেলথ ফর অল’অর্থাৎ ‘সবার জন্য স্বাস্থ্য’এই লক্ষে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আয়ুর্বেদ চিকিৎসা শাস্ত্রকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছে। শরীরের ও মনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারলে অনেক অসুখ থেকেই রেহাই পাওয়া যায়। আর এটা সম্ভব সারাদিনের খাদ্যাভ্যাসে আয়ুর্বেদিক উপাদান থাকলে। যেমন-

আমলকী- আমলকীর সংস্কৃত নাম ‘বয়স্থা’অর্থাৎ এটি বয়স আস্থাপক। যার অর্থ এটি আমাদের শারীরিক বয়স বৃদ্ধির গতিকে কমায়। প্রতিদিন আমলকী খাওয়ার অভ্যাস যাঁদের আছে তাঁদের বয়স কেউ বুঝতে পারেন না। এছাড়াও যাঁদের অম্বলের রোগ অর্থাৎ বুক জ্বালা, গলা জ্বালা, খিদে কমে যাওয়া কিংবা যাঁদের সহজে ঠান্ডা লেগে যায় এমনকী যাঁরা প্রচণ্ড মানসিক চাপে ভোগেন, তাঁদের প্রত্যেকের জন্য আমলকী একটি উপকারী ফল।

প্রতিদিন আমলকী খাওয়ার অভ্যাস যাঁদের আছে তাঁদের বয়স কেউ বুঝতে পারেন না।

এছাড়া আমলকীতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, অ্যামাইনো অ্যাসিড আছে, যা আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে, বমি বমি ভাব কমায়, শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এমনকী এটি শরীরে রসায়ন অর্থাৎ রেজুভিনেশনের কাজ করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, আমলকী অ্যাসিডিক গ্যাস্ট্রাইটিস, নন আলসার ডিসপেপশিয়া এমনকী অন্ত্রের প্রদাহ ও ঘা কমাতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে একটা করে আমলকী খেলে অনেক রোগের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

হরীতকীতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরে কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে।

হরীতকী- আমাদের কাছে হরীতকী একটি অতি পরিচিত ফল। বিভিন্ন পুজোয় এবং বাড়িতে হরীতকীর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। যাঁরা কোষ্ঠকাঠিন্য, হজমের সমস্যা ও বিভিন্ন প্রকার অম্বলজনিত রোগে ভোগেন তাঁরা প্রতিদিন সকালে ৩-৬ গ্রাম হরীতকী খালি পেটে গরম জলের সঙ্গে অথবা রাত্তিরে খাবার দু’ঘণ্টা পরে খেতে পারেন। তবে হরীতকী গর্ভবতী মায়ের ক্ষেত্রে নিষিদ্ধ। ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে বিভিন্ন অনুপান সহযোগে হরীতকী খেলে তা শরীরে রসায়নের কাজ করে ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। হরীতকীতে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান শরীরে কোষের ক্ষয় প্রতিরোধ করে। হরীতকীতে প্রধানতম রাসায়নিক উপাদান এন্থ্রাকুইনোন, গ্লাইকোসাইড, চেবুলিনিক অ্যাসিড এবং চেবুলাজিক অ্যাসিড থাকে যা বিপাকের ফলে তৈরি হওয়া বিষাক্ত দ্রব্যকে শরীর থেকে বের করে দেয়। কারণ হরীতকীর ডিটক্সিফাইং প্রপার্টি আছে।

দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে ত্রিফলার জুড়ি নেই।

ত্রিফলা- এটিও আমাদের কাছে অত্যন্ত পরিচিত। আমলকী, হরীতকী, বহেড়া এই তিন নিয়েই ত্রিফলা। শাস্ত্রে বলা হয়, যিনি প্রতিদিন ত্রিফলা খান তিনি পূর্ণ দেহ বলসম্পন্ন হন এবং তাঁর শতবর্ষ পরমায়ু হয়, বার্ধক্য তাঁকে স্পর্শ করতে পারে না। বিভিন্ন প্রকার চোখের রোগেও ত্রিফলার ব্যবহার বহুল প্রচলিত। দৃষ্টিশক্তি ভাল রাখতে ত্রিফলার জুড়ি নেই। ত্রিফলাতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, গালিক অ্যাসিড ও ট্যানিন আছে যা শরীরের বিভিন্ন প্রকার প্রদাহ নাশ করে এবং ক্ষতস্থান নিরাময়ে সাহায্য করে।

রাত্রে এক গ্লাস গরম জলে চিরতা ভিজিয়ে, সকালে খালি পেটে খাবার প্রচলন রয়েছে।

চিরতা- এর সংস্কৃত নাম হচ্ছে ‘কিরাত তিক্তা’ অর্থাৎ এটি কৃমি নাশ করে। বর্তমান প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবায় চিরতাকে একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। রাত্রে এক গ্লাস গরম জলে চিরতা ভিজিয়ে, সকালে খালি পেটে খাবার প্রচলন রয়েছে। এটি কৃমিরোগ, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং লিভারের বিভিন্ন রোগ সারায় এমনকী কিছু মানসিক রোগও প্রতিরোধ করে। এটি রক্তশোধক হিসাবেও কাজ করে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, চিরতা হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত রোগীকে সুস্থ করেছে। চিরতায় জ্যান্থোন, জ্যান্থোন গ্লাইকোসাইড এবং ম্যাগনোফেরিন থাকার জন্য জ্বর কমাতেও এটি সাহায্য করে। এতে অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিব্যাক্টিরিয়াল উপাদানও রয়েছে। এতে উপস্থিত সোয়েচিনিন রক্তে শর্করা কমাতে সাহায্য করে।

রসুন ঠান্ডা লাগা থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।

রসুন- প্রতিদিন সকালে এক কোয়া করে রসুন খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, যারা বাতের ব্যথায় ভুগছেন, তাঁদের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যারা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগছেন এমনকী রক্তের লিপিড প্রোফাইল স্বাভাবিক মাত্রার থেকে বেশি আছে তাঁদের ক্ষেত্রেও রসুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

[আরও পড়ুন:ডিম, চিংড়ি, বেগুনে অ্যালার্জি? খুব সহজেই দূর হবে সমস্যা, টিপস দিলেন চিকিৎসক]

আধুনিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে, রসুন ঠান্ডা লাগা থেকে শরীরকে রক্ষা করে এবং উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। রসুনে উপস্থিত অ্যালিসিন এবং সালফার কম্পাউন্ড আমাদের শরীরের বিভিন্ন রকম প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এমনকী, রসুন রক্তকে পাতলা করে অর্থাৎ রসুনের ন্যাচারাল ব্লাড থিনার প্রপারটি আছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট প্রপার্টি অ্যালজাইমার্স ডিজিজ এমনকী স্মৃতিভ্রংশ এবং ক্যানসার কোষ বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে।

তাই প্রতিদিন সকালে এবং দিনের অন্যান্য সময় এই ভেষজগুলোর ব্যবহারে আমাদের শারীরিক ও মানসিক রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলা সম্ভব। তা হলেই সারাদিনের নানা টক্সিক উপাদান শরীরে প্রবেশ করলেও তা ডিটক্সিফাই করে বা বিষমুক্ত করে সুস্থ থাকা সম্ভব।

ডা. শবরী সেনগুপ্ত
সোনারপুর রুরাল হাসপাতালের সিনিয়র আয়ুর্বেদিক মেডিক্যাল অফিসার।

[আরও পড়ুন: অবসাদ শুধু বড়দের নয়, শিশুমনেও থাবা বসাচ্ছে, দায় কার?]

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement