অভিরূপ দাস: সকাল থেকেই চাপা উত্তেজনা৷ ঘনঘন কেউ ঘাম মুছছিলেন, টেনশনে কারও সমস্ত নখ শেষ৷ দাঁতে দাঁত চেপে নজর রেখেছিল ভবানীপুরের ‘দাদার পাড়া-র’ ক্লাব অগ্রদূত উদয় সংঘ৷ ঘড়ির কাটা সবে পাঁচটা পেরিয়েছে৷ টিভির পর্দায় চোখ রেখেই চিলচিৎকার উঠল, “থ্রি চিয়ার্স ফর মদনদা..৷” হিপ হিপ হুররের সঙ্গে সঙ্গেই উড়ল গুলাল৷ ক্লাবের ভিতর থেকে যুদ্ধ জয়ের হাসি নিয়ে বেরিয়ে আসছিলেন সোমনাথ, দিলু-রা৷ উলুধ্বনির আওয়াজে তখন কান পাতা দায়৷
অগ্রদূত উদয় সংঘ থেকে, ভবানীপুর ৭৫ পল্লী হয়ে ৬৬ পল্লী, স্বাধীন সংঘ৷ শুক্রবারের বিকেলে অকালবোধনের মেজাজ দক্ষিণ কলকাতার সমস্ত ক্লাবজুড়ে৷
ঢাকি বায়না শেষ৷ আসতে এখনও দেরি৷ তার অপেক্ষায় না থেকে টেবিল বাজিয়েই বোল তুললেন অগ্রদূতের সম্পাদক স্বপন৷ শুক্রবার বিকেলে পাড়ার কোলাজগুলোই বলে দিচ্ছিল, মদনগোপাল মিত্রর জনপ্রিয়তায় মরচে পড়েনি এতটুকু৷ ভবানীপুরের বেশ কিছু পুজোর সঙ্গে তিনি পাতায় পাতায় জড়িয়ে৷ রাত জেগে মণ্ডপ বাঁধা থেকে, স্পনসরশিপ জোগাড়৷ ভবানীপুরের একাধিক পুজোয় তিনি ছিলেন ‘ফ্রেন্ড, ফিলোজফার, গাইড৷’ প্রাক্তন মন্ত্রী বিশেষণে তাই ভুরু কোঁচকান অগ্রদূত উদয় সংঘের সম্পাদক স্বপন রায়৷ বলেন, “মন্ত্রী-টন্ত্রী নয়৷ দাদা বলুন দাদা৷ আমাদের দাদা আসছে এবার৷” জামিনের খবর পেয়ে খানিক নেচেই নিলেন তিনি৷ অকাল হোলি খেলার জন্য আবিরের অর্ডার গেল৷ উৎসাহ ভরে কেউ বললেন, “নিয়ে আয় মিষ্টি, দাদার প্রিয় মালপোয়া আর সরভাজা৷”
শুক্রবার বিকেলে টিভি খুলতেই আত্মহারা উদয়সংঘের পুজোর কর্তারা৷ ভবানীপুর স্বাধীন সংঘের সম্পাদক সুব্রত দে আবার আবেগতাড়িত৷ ‘মদন-দার’ সাহায্যের স্মৃতি মনে করে চিকচিক করল তাঁর চোখ৷ “জানেন, পুজোর থিম পাচ্ছিলাম না৷ এক রাতে দাদা বলল, একটা পেন আর কাগজ দে৷ খসখস করে নিজে হাতে এঁকে থিম বানিয়ে দিয়েছিলেন৷ মা যখন মাত্রায়৷ সে সব দিন ভোলা যায়?”
এরকম হাজারো পুরনো স্মৃতি ভবানীপুরের একাধিক ক্লাব ঘিরে৷ পুরনো স্মৃতিকে নতুন করে মনে আনতে তাই পরিকল্পনা তৈরি উদয় সংঘের৷ “এবার দাদাকে দিয়েই ফিতে কাটাব পুজোর৷ প্রতিবার দাদা গেস্ট ঠিক করে দিতেন৷ এবার এলে বলব, তুমিই এবার আমাদের ভিআইপি গেস্ট৷” দিলখোলা হাসি স্বপন রায়ের৷
মন্ত্রীর গণ্ডি থেকে বেরিয়ে বরাবরই তাঁকে অন্যভাবে পেয়েছেন পুজোর কর্তারা৷ কোনও কিছুতেই না করেননি তিনি৷ শুধু বলতেন, “আমাকে না জানিয়ে করিস না৷” ৬৬ পল্লির রজত সেনগুপ্ত তাই অপেক্ষায়, “সত্যের জয় হয়েছে৷ দাদা আমার মায়ের ভক্ত৷ দাদা ছাড়া মায়ের পুজো তো অসম্পূর্ণ৷”
এক ব্যাপারে সবাই একমত৷ পুজোর সেরা উপহার পাওয়া হয়ে গিয়েছে সবারই৷ ভবানীপুর ৭৫ পল্লির সম্পাদক সুবীর দাসও মেনে নিয়েছেন তা৷ “খবরটা পেয়ে পাগল হয়ে গিয়েছি৷ মা দুর্গা যেন আমাদেরই উপহার দিয়ে দিলেন৷”
The post ‘দাদা’ আসছেন, নয়া উদ্দীপনায় ফুটছেন পাড়ার পুজোকর্তারা appeared first on Sangbad Pratidin.