অর্জুনের মতোই অব্যর্থ ছিল তাঁর লক্ষ্যভেদ। অলিম্পিকে ভারতের স্বর্ণযুগের আধুনিক কাণ্ডারি তিনি। আজ এতগুলো বছর পেরিয়েও সেই ঔজ্জ্বল্য বিন্দুমাত্র ম্লান হয়নি। বরং তিনি ধরা দিয়েছেন নবরূপে। নতুন প্রজন্মের কাছে জেগে উঠেছেন প্রেরণার উজ্জ্বল মশাল হয়ে। অভিনব বিন্দ্রা (Abhinav Bindra) মানেই আত্মবিশ্বাস আর সাফল্যের এমন এক আলোকময় অধ্যায়, যার সামনে নতজানু হয় সময়। শহরে খেলার বসন্তে এসে ভাবনার সাত রঙে রাঙিয়ে গেলেন তিনি, সাক্ষী থাকল ‘সংবাদ প্রতিদিন’। শুনলেন অরিঞ্জয় বোস।
প্রশ্ন: আমার সামনে যিনি বসে আছেন, তাঁকে কি ‘অভিনব ২.০’ বলতে পারি?
অভিনব: (হেসে) তা পারেন।
প্রশ্ন: প্রতিদান শব্দটিই যদি ব্যবহার করি, তবে খেলার প্রতি আপনার যে প্রতিদান তা তো বেশ অন্যরকম। আপনার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে অনেক কাজ হচ্ছে। বিশেষত উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট-এর ক্ষেত্রে অনেক কাজ করছেন। নিজের এই নতুন কাজ সম্পর্কে আমাদের কিছু জানান।
অভিনব: খেলা থেকে যেমন আমি অনেক কিছু পেয়েছি, তেমনই খেলাকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার আছে বলেও আমি মনে করি। বর্তমানে আমার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সেই কাজটিই করে চলেছি। বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সেই কাজ করার চেষ্টা করছি। অ্যাথলিটদের বিভিন্নভাবে সাপোর্ট করা যেমন একটা দিক, তেমনই দেশের মেয়েরা যাতে খেলার সুযোগ পায় সেই কাজটা করে যাওয়াও আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। এই কাজটি লিঙ্গসাম্যের প্রতি এক পদক্ষেপ বলেই আমি মনে করি। এরকম নানা কাজের সঙ্গেই এখন জড়িয়ে আছি। পাশাপাশি হেলথ কেয়ার সেক্টরে আমার কিছু ব্যবসায়িক কাজও আছে। সব মিলিয়ে এখনও বেশ ব্যস্তই থাকতে হয়। আর যে কাজই করি নিজের সেরাটুকু আজও উজাড় করে দেওয়ার চেষ্টা করি। তবে একটা কথা বলে রাখি, ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে আমি যে কাজই এখন করি না কেন, তা খেলা থেকে আমি যা শিখেছি, তার ভিত্তিতেই করি।
[আরও পড়ুন: শরণার্থী সমস্যা মেটাতে মরিয়া ব্রিটেন, নয়া আইন পাশের পরিকল্পনা সুনাক প্রশাসনের]
প্রশ্ন: ২০৩৬-এ অলিম্পিক (Olympic) আয়োজনের চেষ্টা করছে ভারত, বিষয়টি নিয়ে আপনি কতখানি উত্তেজিত?
অভিনব: এ বিষয়ে ঠিক কী কী পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, তার খুঁটিনাটি এখনও জানি না। সংবাদমাধ্যমের সূত্রেই খানিকটা জেনেছি। দেশে অলিম্পিকের আসর বসবে, এ কথা ভাবতেই দারুণ লাগে। কী চমৎকার ব্যাপার! ২০৩৬-এ হবে কি-না জানি না, তবে ভবিষ্যতে যখনই হোক না কেন, আমি নিশ্চিত যে, একদিন-না-একদিন ক্রীড়াজগতের এই বৃহত্তম আসর আমাদের দেশে বসবেই।
প্রশ্ন: আপনি একবার বলেছিলেন যে, অলিম্পিকে নামার আগে আপনি মদ্যপান করেছিলেন। আমাদের একটু জানাবেন ঠিক কী হয়েছিল?
অভিনব: এই ঘটনাটা নিয়ে বিশেষ কিছু জানানোর নেই। শুটিং-এ নামার আগে আমার একটা প্যানিক অ্যাটাক হয়। সেটা কাটাতেই অল্প মদ্যপান করেছিলাম।
প্রশ্ন: কিন্তু একজন অ্যাথলিট এরকম বড় আসরে চূড়ান্ত পর্যায়ে খেলতে নামার আগে ড্রিঙ্ক করছেন, ব্যাপারটা কি একটু অস্বাভাবিক নয়?
অভিনব: অস্বাভাবিক হবে কেন! আমি তো নিষিদ্ধ কোনও ড্রাগ নিচ্ছি না। বহু অ্যাথলিটই আছেন, যাঁরা সামাজিক পরিসরে মদ্যপান করেন। ফলত এর মধ্যে অস্বাভাবিক কিছু আছে বলে, আমার তো অন্তত মনে হয় না।
প্রশ্ন: আপনি দেশের ক্রীড়া-সংস্কৃতি নিয়ে বেশ সোচ্চার। আপনার মতে, এই সংস্কৃতি গড়ে তোলায় আরও নজর দিতে হবে। কিন্তু আপনার কি তাহলে মনে হয় যে, আমাদের দেশের ক্রীড়াজগতের কিংবদন্তিরা সেভাবে প্রেরণা জোগাতে পারছেন না?
অভিনব: একেবারেই তা নয়। দেশের ক্রীড়া-সংস্কৃতি ফেরানোর দায় শুধু কিংবদন্তিদের নয়। কিংবদন্তিরা তো আর কোটি কোটি মানুষকে খেলতে মাঠে নামাতে পারেন না। ওভাবে হয় না। আমাদের সামগ্রিক ভাবেই এমন একটা সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে, যেখানে খেলাকে সকলে উপভোগ করেন। এবং যাঁরা খেলছেন, তাঁরাও যেন শুধু চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নেশায় বুঁদ না হয়ে থাকেন। বরং খেলা বিষয়টিকেই উপভোগ করেন। খেলার মধ্যে যেন আনন্দ খুঁজে পান। একই সঙ্গে চরিত্র গঠনে যেন খেলাধুলো মিশে যায়। এই সংস্কৃতি অত্যন্ত জরুরি। আর দরকার পরিকাঠামোর উন্নয়ন। এই পরিবেশ আমাদেরই তৈরি করতে হবে। যাতে আজকে যারা ছোট তারা এই সংস্কৃতি এবং পরিবেশে বড় হয়ে উঠতে পারে। যাতে তারা উপভোগ করে খেলার সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে, সে বিষয়ে আমাদের নজর দিতেই হবে।
দেখুন ভিডিও।