সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: চ্যাম্পিয়নরা নিজের সেরা পারফরম্যান্স তুলে ধরার জন্য বেছে নেন সেরা মঞ্চ। বিরাট কোহলি ব্যাটিং দেখে কলমচিরা এভাবেই হয়তো লেখাটা শুরু করেছিলেন। কিন্তু সেটা আর হল কোথায়! আসমুদ্র হিমাচলের সামনে স্বপ্নভঙ্গ! ৯৪ বলে ৮৮ রানে ফিরলেন ‘কিং কোহলি’। তাঁর ইনিংস ১১টি শতরান দিয়ে সাজানো ছিল। বিরাটের এমন প্রস্থান ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের ভিভিআইপি বক্সে বসে দেখলেন শচীন তেন্ডুলকর।
২ নভেম্বর। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৪৯তম শতরানের খুব কাছেই ছিলেন বিরাট। তাও আবার শচীনের সামনেই। কারণ চলতি বিশ্বকাপের (CWC 2023) এই ম্যাচ দেখার জন্য সপরিবারে ভিভিআইপি বক্সে উপস্থিত ছিলেন ‘আধুনিক ক্রিকেটের ডন।’ তাঁর সামনেই মাইলস্টোন শতরান করে নিজের উপস্থিতি ফের একবার বুঝিয়ে দিতে চেয়েছিলেন ‘কিং কোহলি।’ কিন্তু সেটা আর হল কোথায়!
[আরও পড়ুন: সিএবি প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকে কাটল জট, বিশ্বকাপের টিকিট পেলেন বিধায়করা]
শচীনের ঘরের মাঠ বলে কথা। এই মাঠেই ২০১৩ সালের ১৬ নভেম্বর ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে শেষ টেস্ট খেলে চোখের জলে বিদায় নিয়েছিলেন ‘গড অফ ক্রিকেট’। এর দুই বছর আগের রাতটা মনে করে দেখুন। ২০১১ সালের ২ এপ্রিলের রাত। শ্রীলঙ্কাকে বিশ্বকাপের ফাইনালে হারিয়ে এই ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামের মাঠে ঘুরেছিলেন ‘মাস্টার ব্লাস্টার’। সেই রাতে তাঁকে কাঁধে তুলে নেওয়া বিরাটের কাছে ৪৯তম শতরানের সেরা মঞ্চ ছিল ওয়াংখেড়ে। তবে আসমুদ্র হিমাচলকে চুপ করিয়ে শতরান থেকে ১২ রান দূরে বিরাট ফিরলেন।
তবে ৪৯তম শতরান না করতে পারলেও, এদিন বিরাট তাঁর ‘আইকন’-এর অন্য একটি রেকর্ড নিজের নামে করলেন। শচীন তাঁর দীর্ঘ ২৪ বছরের কেরিয়ারে কোনও এক বছরে মোট ৭বার ১০০০ রান করেছিলেন। ১৯৯৪, ১৯৯৬, ১৯৯৭, ১৯৯৮, ২০০০, ২০০৩ ও ২০০৭ সালে এই কীর্তি গড়েছিলেন। বিরাট এবার সেই রেকর্ডেও নিজের নাম লিখিয়ে নিলেন। এই নিয়ে আটবার কোনও এক বছরে ৮বার ১০০০ রান করার নজির গড়লেন তিনি। ২০১১, ২০১২, ২০১৩, ২০১৪, ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯ ও ২০২৩ সালে এই কীর্তি গড়ে শচীনকে টপকে গেলেন বিরাট।
এদিকে ৪৯তম শতরানের মাইলস্টোন গড়তে না পারলেও, আরও একটি রেকর্ড গড়েছিলেন বিরাট। রোহিত শর্মা ও শুভমান গিলের পর বিরাট হলেন তৃতীয় ভারতীয় ব্যাটার যিনি ২০২৩ সালে ১০০০ রান পূর্ণ করলেন। এদিকে বিশ্ব ক্রিকেটে চলতি বছর ১০০০ রান পূর্ণ করার তালিকায় বিরাট এলেন চতুর্থ স্থানে। এই তালিকায় রোহিত, শুভমান, পাথুম নিশাঙ্কার পরেই জায়গা করে নিয়েছেন টিম ইন্ডিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক।
সুনীল গাভাসকরের সময় ক্রিকেট কোচেরা বলতেন তাঁর খেলা দেখে শিখতে। শচীন তেন্ডুলকরের সময় তাঁরা বলতেন মুম্বইকরের খেলা উপভোগ করতে। এখন কোচেরা বলেন বিরাট কোহলির খেলা দেখ আর শুধু হাততালি দাও, কারণ অন্য গ্রহের মানুষের খেলা কখনও অনুকরণ করা সম্ভব নয়। তবে কি বিরাটই ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার? একদিনের ক্রিকেটে ‘মাস্টার ব্লাস্টার’-এর ৪৯তম শতরানে এখনও তিনি ভাগ বসাতে পারেননি। তবে তিনি যে ফর্মে আছেন, তাতে বিরাটের এই রেকর্ড গড়া শুধু সময়ের অপেক্ষা। তা হলে কি শুধু সংখ্যার বিচারে বিরাটকেই কি সর্বকালের সেরা ব্যাটার বলে দেওয়া যায়?