shono
Advertisement

Breaking News

Subhash Bhowmick: ‘ভাত এনে দিন, চাইম্যানকে রুখে দেব’, ষষ্ঠীর আবদার মিটিয়েছিলেন সুভাষ

বস সুভাষের সঙ্গে লাঞ্চ আর করা হল না', আক্ষেপ ডগলাসের।
Posted: 02:22 PM Jan 22, 2022Updated: 09:00 PM Jan 22, 2022

কৃশানু মজুমদার: ‘আমি চাইম্যানকে রুখে দেব। আমাকে কেবল ভাত জোগাড় করে দিন। ‘ আশিয়ান কাপের ফাইনালে নামার আগে সাজঘরে এই কথাগুলো সুভাষ ভৌমিককে (Subhash Bhowmick) বলেছিলেন ষষ্ঠী দুলে। শনিবার সকালে প্রিয় কোচের প্রয়াণ সংবাদ পাওয়ার পরে আশিয়ান কাপের দিনগুলোয় ফিরে গেলেন ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার ষষ্ঠী দুলে। সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটালকে ষষ্ঠী বলছিলেন, ”আশিয়ান কাপ ফাইনালের আগে সাজঘরে সুভাষদা বলছিলেন, এশিয়ার সেরা প্লেয়ার চাইম্যান। ওকে কে আটকাবে?” কোচের কথা শুনে হাত তুলে ষষ্ঠী বলেছিলেন, ”আমি আটকাব কোচ। তবে আমাকে ভাত জোগাড় করে দিতে হবে।”

Advertisement

ডাকাবুকো কোচ জানতেন তাঁর ছাত্রকে। ম্যান ম্যানেজমেন্টে যে দক্ষ তিনি। মাঠের ভিতরে দারুণ কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে দীর্ঘ চিন্তাভাবনা করতেন। প্লেয়ারদের কাছ থেকে সেরাটা বের করে নেওয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল তাঁর। ষষ্ঠীকে পালটা জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ”কেন? ভাত দিতে হবে কেন তোকে?” স্মৃতির পাতা উলটে ষষ্ঠী (Sasti Dulay) এদিন বলছিলেন, ”আমি তো ভৌমিকদাকে বলেই ফেললাম, দেখুন আমি গ্রামের ছেলে। দিনের মধ্যে চারবার ভাত খাওয়ার অভ্যাস। আমাকে পাস্তা দিলে হবে না। আর চাইম্যানকে তো আমি চিনি না। ওর জার্সির নম্বরটা আমাকে বলে দেবেন। বাকি কথা ম্যাচের পরে হবে।”

[আরও পড়ুন: কোভিডবিধি মেনেই শেষকৃত্য সুভাষ ভৌমিকের, শোকসভার আয়োজন করবে ইস্ট-মোহন]

কোচ সুভাষকে দেওয়া কথা রেখেছিলেন ষষ্ঠী। সেই ফাইনালে চাইম্যানকে নড়তে দেননি ষষ্ঠী। ফাইনালে বেক তেরো সাসানাকে হারিয়ে আশিয়ান কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্টবেঙ্গল। ফাইনালের পরে চাইম্যানকে বলা ষষ্ঠীর সেই কথাগুলো লোকগাথায় জায়গা পেয়েছে এতদিনে। ষষ্ঠী বলছিলেন, ”ভাতের আবদার করেছিলাম কোচের কাছে। কোথা থেকে যে ভাত জোগাড় করে এনেছিলেন, তা বলতে পারব না। তবে সুভাষ ভৌমিক বলেই তা সম্ভব ছিল। অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারতেন সুভাষদা।”

আশিয়ান কাপ (Asian Cup) জয়ের আর এক সৈনিক সন্দীপ নন্দী আবার বলছেন, ”আশিয়ান কাপ ঘিরে প্রথম থেকেই যে মানুষটা স্বপ্ন দেখেছিলেন তিনি সুভাষ ভৌমিক।” বিদেশের মাটিতে খেলতে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতিও নিয়েছিলেন দারুণ। সন্দীপ স্মৃতিচারণ করে বলছিলেন, ”সুভাষদা এমন একজন কোচ যিনি প্লেয়ারদের পাশে দাঁড়াতেন। লিডারশিপ কোয়ালিটি ছিল অসাধারণ। প্লেয়ারদের কথা ভাবতেন সবসময়ে। আজ থেকে অত বছর আগে জাকুজি, আইস বাথ উনিই প্রথম চালু করেছিলেন। আমাদের পাস্তা করে খাওয়াতেন।” আশিয়ান কাপের জন্য দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ফিজিকাল ট্রেনার কেভিন জ্যাকসনকে আনা হয়েছিল। বাইপাসের ধারের হোটেলে উঠেছিলেন লাল-হলুদ ফুটবলাররা।

[আরও পড়ুন: ‘ফুটবলের হিরো ছিলেন সুভাষ ভৌমিক’, ময়দানের ভোম্বলদার প্রয়াণে শোকস্তব্ধ সতীর্থ ও শিষ্যরা]

প্রিয় কোচের চলে যাওয়া কাঁদাচ্ছে সন্দীপকে (Sandip Nandy)। ধরা গলায় বলছিলেন, ”আজ আমি মহামেডান স্পোর্টিংয়ের গোলকিপার কোচের দায়িত্ব নিলাম। আর আজই এল খারাপ খবর। সুভাষদাকে হারালাম।” দু’জন কোচের অবদান কোনওদিন ভুলবেন না দেশের প্রাক্তন গোলরক্ষক সন্দীপ। একজন চলে গিয়েছেন ছ’ বছর আগে। তিনি অমল দত্ত। আর শনি-সকালে ভারতীয় ফুটবল থেকে হারিয়ে গেলেন সুভাষ। সন্দীপ স্মৃতিচারণ করে বলছিলেন, ”সুভাষদার হাত ধরে বারবার আমি ঘুরে দাঁড়িয়েছি। মোহনবাগানের (Mohun Bagan) হয়ে জাতীয় লিগ জিতেও আমাকে টালিগঞ্জ অগ্রগামীতে যেতে হয়েছিল। টালিগঞ্জ থেকে ইস্টবেঙ্গলে আমাকে এনেছিলেন সুভাষদাই। পরে ভৌমিকদার কাছেই শুনেছিলাম ইস্টবেঙ্গল কর্তারা আমাকে নিতে চাননি দলে। কারণ টালিগঞ্জ পাঁচ গোল খেয়েছিল ইস্টবেঙ্গলের (East Bengal) কাছে সেবারের জাতীয় লিগে। আমাকে দলে নেওয়ার জন্য অনেক কটাক্ষই হজম করতে হয়েছিল সুভাষদাকে। স্যার যে আমার উপরে আস্থা রেখেছিলেন, তার মূল্য হয়তো আমি দিতে পেরেছি। সেই বছর সুভাষদার কোচিংয়ে ইস্টবেঙ্গল জাতীয় লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আশিয়ান কাপ আমার জীবনের সেরা অধ্যায়।”

 

তার অনেক পরে ইস্টবেঙ্গল ছেড়ে চার্চিল ব্রাদার্সে যোগ দিয়েছিলেন দেশের প্রাক্তন গোলকিপার সন্দীপ। বাংলা ছেড়ে গোয়ায় যাওয়ার পুরো কৃতিত্বই সন্দীপ দিচ্ছেন তাঁর প্রিয় কোচকে। বলছেন, ”আমি তো বুঝতেই পারিনি আমি স্যারের ক্লাবে যোগ দিয়েছি নাকি চার্চিলে। আমার সঙ্গে আলেমাওদের সম্পর্কই ছিল না। সুভাষ স্যারই আমাকে নিয়ে গিয়েছিলেন চার্চিলে। একমাস আমি সুভাষদার বাড়িতে ছিলাম। কী ভালবাসা যে পেয়েছিলাম, তা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। স্যারের পরিবারের সঙ্গে একটা আত্মীয়তার সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল।”

সুভাষকে ‘বস’ বলতেন ডগলাস। এদিন সকালেও লিখেছেন ‘দ্য বস হ্যাজ গন।’ সেই ডগলাস বলছেন, ”ইস্টবেঙ্গলে আমার প্রথম দিনটার কথা বেশ মনে পড়ছে। বস আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কী খেতে চাও তুমি?” সুভাষের সঙ্গে শেষ কথাটাও ছিল প্রায় একই। আই লিগের দল ট্রাওয়ের কোচ হয়ে আসার পরে অতিমারী পরিস্থিতির জন্য এদেশে আটকে পড়েছিলেন ডগলাস। সেই সময়ে সুভাষ তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাঁর বাড়িতে। কিন্তু করোনা আবহে গুরু-শিষ্যের আর সাক্ষাৎ হয়নি। সুভাষ বলেছিলেন, ”পরিস্থিতি ভাল হলে আমার বাড়িতে এসো। একসঙ্গে বসে লাঞ্চ করব। আর বলতে ভুলো না যেন তুমি কী খেতে চাও।” বস সুভাষের সঙ্গে সেই লাঞ্চ আর খাওয়া হল না ডগলাসের।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement