shono
Advertisement

Hangzhou Asian Games 2023: শেষ পর্যন্ত এল রূপো! লক্ষ্য সেনের পর জলে গেল সাত্ত্বিক-চিরাগের লড়াই, চিনের কাছে ফাইনালে হারল ভারত

লিড নিয়েও সোনা হাতছাড়া করল ভারত।
Posted: 07:40 PM Oct 01, 2023Updated: 08:05 PM Oct 01, 2023

সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: প্রথমে লক্ষ্য সেন ((Lakshya Sen)। এবং দ্বিতীয় গেমে সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি (Satwiksairaj Rankireddy) ও চিরাগ শেট্টি (Chirag Shetty) চিনা (China) প্রতিপক্ষকে হারিয়ে আশা জাগিয়েছিলেন। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিল ভারত (India)। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। বহু যুদ্ধের নায়ক কিদাম্বি শ্রীকান্ত (Kidambi Srikant) হারতেই খেই হারিয়ে গেল ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড। এর পর ডাবলসে হারের মুখ দেখল সাই প্রতীক, ধ্রুব কপিলা জুটি। চিন ২-২ ফলাফল করতেই বোঝা যাচ্ছিল সোনা জয় শেষ পর্যন্ত অধরাই থেকে যাবে। আর তাই হল। শেষ ম্যাচে ওয়েং হং ইয়াং-এর বিরুদ্ধে মিঠুন মঞ্জুনাথ হারতেই সোনা জয়ের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল। ৩-২ ব্যবধানে মেগা ফাইনালে হারের জন্য রুপো নিয়েই শেষ পর্যন্ত দেশে ফিরতে হবে ভারতের পুরুষ ব্যাডমিন্টন দলকে। 

Advertisement

১৯৭৪ , ১৯৮২ এবং ১৯৮৬ সালে ব্রোঞ্জ পেয়েছিল ভারত। ২০০৬ সালে গ্রুপ পর্যায় থেকে ছিটকে গিয়েছিল। ২০১০ সাল এবং ২০১৪ সালে প্রথম রাউন্ড থেকেই বিদায় নিয়েছিল ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড। চার বছর আগে জাকার্তা এশিয়ান গেমসে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই দল ছিটকে যায়। আর এবার রূপো পেল ভারতীয় দল। সেভাবে দেখতে গেল এশিয়াডে ১৯৮৬ সালের ৩৭ বছর পর ভারতীয় পুরুষ ব্যাডমিন্টন দলের ঝুলিতে এল পদক। এইচ.এস প্রনয়ের মতো তারকা ফাইনাল না খেলতে পারাও কিন্তু এই হারের একটা বড় কারণ। 

চিনের শি ইউ কি-র (Shi Yuqi) বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং ছয়। সেখানে লক্ষ্য সেনের বর্তমান র‍্যাঙ্কিং ১৪। কিন্তু তাতে কি! চিনা বিপক্ষের চোখে চোখ রেখে ম্যাচ জিতলেন ভারতের শাটলার। হাড্ডাহাড্ডি ম্যাচের ফলাফল তখন ভারতের পক্ষে। ২২-২০, ১৪-২১, ২১-১৮। আর এই জয়ের সঙ্গেই চিনের বিরুদ্ধে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে যায় ‘মেন ইন ব্লু’ ব্রিগেড।

ম্যাচের শুরু থেকেই লক্ষ্যের জন্য চলছিল স্লোগান। কিন্তু ম্যাচের মাঝেই কয়েকটি ভুল করেন ভারতীয় শাটলার। স্বভাবতই ম্যাচ থেকে পিছিয়ে যান লক্ষ্য। সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করেন চিনা শাটলার। ম্যাচের অধিকাংশ সময় পিছিয়ে ছিলেন। ১৭-১৬ পয়েন্টে প্রথম এগিয়ে যান। এর পর শেষের দিকে দুরন্তভাবে ম্যাচে ফেরেন লক্ষ্য। ২২-২০ পয়েন্টে প্রথম গেম জিত যান।

‘লক্ষ্য’ বজায় রেখেই চিনা প্রতিদ্বন্দ্বীকে হেলায় হারিয়েছিলেন লক্ষ্য সেন। ছবি: টুইটার

[আরও পড়ুন: ২০১৮ সালের পর ফের শট পাটে সোনা জিতলেন তাজিন্দর]

তবে প্রথম গেমে খাদের কিনারা থেকেও কামব্যাক করলেও, ফাইনালে দ্বিতীয় গেমে হেরে গেলেন লক্ষ্য। খেলার ফলাফল ছিল ১৪-২১। দ্বিতীয় গেমে একটা সময় হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছিল। কিন্তু ‘ব্রেক’-র আগে এবং পরে নিজের জাত চেনান চিনা শাটলার। দ্বিতীয় গেম জিতে নেন।

স্কোর লাইন ১-১ হলেও, লক্ষ্য কিন্তু নিজের টার্গেটে অবিচল ছিলেন। আর সেই মন্ত্রকে সম্বল করেই জিতলেন তৃতীয় গেম। যদিও একটা সময় মনে হচ্ছিল লক্ষ্যের হাত থেকে ম্যাচ বেরিয়ে যাবে। কিন্তু তৃতীয় গেমের শেষের দিকে আচমকা কামব্যাক করে গেম ও ম্যাচ জিতলেন। ‘ব্রেক’-র আগে এবং পরে নিজের জাত চেনান চিনা শাটলার। ফলে তৃতীয় গেমে জেতেন ২১-১৮ পয়েন্টে।

লক্ষ্যের দাপট দেখে তেতে গিয়েছিল ভারতীয় দল। গ্যালারি থেকে শোনা যাচ্ছিল ‘বন্দে মা তরম’ স্লোগান। দুই কোচ পুল্লেলা গোপিচাঁদ ও গুরুসাই দত্তের সেলিব্রেশন ছিল দেখার মতো। এমন প্রেক্ষাপটে চিনের লিয়াং ওয়েইকেং ও ওয়াং চ্যাং-এর বিরুদ্ধে নেমেছিলেন সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি ও চিরাগ শেট্টি।

দারুণ লড়াই সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি ও চিরাগ শেট্টি। ছবি: টুইটার 

এখানে অবশ্য লড়াই ছিল বিশ্বের ডাবলস র‍্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে দলের। লক্ষ্যর জয়ে মোটিভেট হয়েছিলেন সাত্ত্বিকসাইরাজ-চিরাগ। সেটা কোর্টে দেখাও গেল। চোখে তাক লাগিয়ে দেওয়া র‍্যালি এবং জোরাল শটের উপর ভর করে প্রথম গেমে ২১-১৫ পয়েন্টে চিনা জুটিকে হারিয়ে দিল সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি ও চিরাগ শেট্টি জুটি। 

দ্বিতীয় গেমেও ভারতীয় জুটির দাপট বজায় ছিল। তাঁদের বিরুদ্ধে পয়েন্ট তোলার কোনও সুযোগই পাচ্ছিল না বিশ্ব র‍্যাঙ্কিং দুই-য়ে থাকা চিনা জুটি। যদিও একটা সময় একটু অন্যমনস্ক হতেই চিনা জুটি পয়েন্ট তুলতে শুরু করে দেয়। চলতে থাকে কোর্টের দুই দিকে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। তবে চিনারা শেষ পর্যন্ত সুবিধা করতে পারেননি। ২১- ১৮ ব্যবধানে দ্বিতীয় গেম জিতে নেয় ভারতীয় জুটি। ফলে ডাবলসে চিনাদের ২১-১৫, ২১-১৮ গেমে হারানোর সঙ্গে, বিপক্ষের বিরুদ্ধে ২-০ ম্যাচের ব্যবধানে এগিয়ে যায় টিম ইন্ডিয়া। 

লক্ষ্য সেনের পর ডাবলসে চিনাদের উড়িয়ে দিয়েছিলেন সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি ও চিরাগ শেট্টি। সেই ধারাবাহিকতা কি বজায় রাখতে পারবেন কিদাম্বি শ্রীকান্ত (Kidambi Srikant)? বিপক্ষের লি শি ফেং-এর (Shifeng Li) বিরুদ্ধে নামার আগে এটাই সবার মনে ঘুরপাক খাচ্ছিল।

[আরও পড়ুন: স্টিপলচেজ ইভেন্টে সোনা জিতে ইতিহাস গড়লেন অবিনাশ সাবলে]

প্রথম গেমে নিজের পারফরম্যান্সে হতাশ হবেন কিদাম্বি শ্রীকান্ত। দুটি গেম পয়েন্ট পেয়েও তৃতীয় ম্যাচের প্রথম গেমে হেরে যান। ফলে ২২-২৪ ব্যবধানে প্রথম গেম জিতে যান চিনা শাটলার। তারপর এমনভাবে সেলিব্রেশন করলেন, তা দেখে বোঝাই গেল যে ঘরের মাঠে ভারতের বিরুদ্ধে ২-০ ব্যবধানে পিছিয়ে ঘরের মাঠে ঠিক কতটা চাপে ছিল চিন।

প্রত্যাশাপূরণ করতে একেবারে ব্যর্থ কিদাম্বি শ্রীকান্ত। ছবি: টুইটার

প্রথম গেমে জেতা উচিত ছিল। সেই গেম হাতছাড়া হতেই ম্যাচ থেকেই যেন হারিয়ে গেলেন কিদাম্বি শ্রীকান্ত। আর দ্বিতীয় গেমের বিরতির পর তো তাঁকে শাসন করলেন চিনা শাটলার। শেষপর্যন্ত ২২-২৪, ৯-২১ গেমে হেরে গেলেন। মেগা ফাইনালে চিন প্রথম ম্যাচ জেতার জন্য ব্যবধান কমে দাঁড়িয়েছিল ২-১। 

লক্ষ্য সেনের পর ডাবলসে চিনাদের উড়িয়ে দিয়েছিলেন সাত্ত্বিকসাইরাজ রানকিরেড্ডি ও চিরাগ শেট্টি। কিন্তু কিদাম্বি শ্রীকান্ত হারতেই যেন মেগা ফাইনাল থেকে ভারতের তাল কেটে গিয়েছিল। চতুর্থ ম্যাচ ছিল ডাবলস। সেই ম্যাচে চিনা প্রতিপক্ষ লিউ ইউচেন (Liu Yuchen) ও ওউ শুয়ানই-এর (Ou Xuanyi) বিরুদ্ধে দাঁড়াতেই পারলেন না ধ্রুব কপিলা (Dhruv Kapila) ও সাই প্রতীক (Sai Pratheek)। 

চতুর্থ ম্যাচের প্রথম গেমে সাই প্রতীক, ধ্রুব কপিলাকে নিয়ে স্রেফ ছেলেখেলা করল চিন। চিনা জুটির কাছে দাঁড়াতেই পারলেন না দুই ভারতীয়। ফলে দাপট দেখিয়ে ৬-২১ পয়েন্টে প্রথম গেম জিতে যায় চিন। 

দ্বিতীয় গেমে কিন্তু ফিরে আসার চেষ্টা করেন দুই তরুণ ভারতীয়। কিন্তু চিনা প্রতিপক্ষের অভিজ্ঞতার কাছে তাঁদের হার মানতেই হল। কারণ এই গেমেও ১৫-২১ ব্যবধানে হেরে গেলেন তাঁরা। এই ম্যাচের দুই গেমে চিনের কাছে দাঁড়াতেই পারেনি ভারত। ফলাফল ৬-২১,  ১৫-২১। এমন অনায়াসে জয়ের সৌজন্যে চতুর্থ ম্যাচের শেষে ফলাফল দাঁড়াল ২-২। 

আর তাই শেষ ম্যাচের দিকেই ভারতকে তাকিয়ে থাকতে হল। এইচ.এস প্রনয়ের মতো তারকা পিঠের চোটের জন্য ফাইনাল খেলতে পারেননি। তবে অনেক আশা জাগিয়ে শুরু করেছিল ভারত। তবে শেষ পর্যন্ত সোনা জিতে ইতিহাস লেখার জন্য মিঠুন মঞ্জুনাথের (Mithun Manjunath) দিকেই ভারতকে তাকিয়ে থাকতে হয়েছিল। প্রতিপক্ষ ছিলেন ওয়েং হং ইয়াং। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। 

পঞ্চম ম্যাচের প্রথম গেমে হেরে গিয়েছিলেন মিঠুন মঞ্জুনাথ। ১২-২১ ব্যবধানে হারের পরেই ভারতের যে সোনা হাতছাড়া হবে সেটা স্পষ্ট হয়ে যায়। এর পর দ্বিতীয় গেমেও চিনের দাপট বজায় থাকে। অনভিজ্ঞ মঞ্জু চেষ্টা করলেও বিপক্ষের বিরুদ্ধে এঁটে উঠতে পারেনি। ফলে এই গেমেও ওয়েং হং ইয়াং ২১-৪ ব্যবধানে জিতে যায়। আর এই জয়ের সৌজন্যে ৩-২ ব্যবধানে ভারতকে হারিয়ে সোনা জিতল চিন। লক্ষ্য সেনদের রুপো নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল।

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement