ভারত, প্রথম ইনিংস: ৩৯৬ (যশস্বী ২০৯, শুভমান ৩৪, অ্যান্ডারসন ৩/৪৭, রেহান আহমেদ ৩/৬৫)
ইংল্যান্ড, প্রথম ইনিংস: ২৫৩ (জ্যাক ক্রলি ৭৬, স্টোকস ৪৭, বুমরাহ ৬/৪৫, কুলদীপ ৩/৭১)
ভারত, দ্বিতীয় ইনিংস: ২৫৫ (শুভমান ১০৪, অক্ষর ৪৫, টম হার্টলি ৪/৭৭, রেহান ৩/৮৮)
ইংল্যান্ড, দ্বিতীয় ইনিংস: ২৯২ (জ্যাক ক্রলি ৭৩, বেন ফোকস ৩৬, অশ্বিন ৩/৭২, বুমরাহ ৩/৪৬, মুকেশ ১/২২, কুলদীপ ১/৬০, অক্ষর ১/৭৫)
ভারত ১০৬ রানে জয়ী
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ইংল্যান্ডের (England) ‘বাজবল’ নীতির মোক্ষম জবাব দিল টিম ইন্ডিয়া (Team India)। ৩৯৯ রান তাড়া করতে গিয়ে ব্রেন্ডন ম্যাকালামের (Brendon McCullum) ছেলেরা আগ্রাসী মেজাজে শুরু করলেও, ১০৬ রানে জিতে শেষ হাসি হাসলেন রোহিত শর্মা (Rohit Sharma)। যশস্বী জসওয়ালের (Yashasvi Jaiswal) ২০৯ রানের পর, প্রথম ইনিংসে জশপ্রীত বুমরাহ (Jasprit Bumrah) ব্রিটিশদের ব্যাটিংকে একাই বুঝে নিয়েছিলেন। আর এবার দ্বিতীয় ইনিংসে সাহেবদের গর্ব ও দর্প চূর্ণ করে দিলেন রবিচন্দ্রন অশ্বিন (Ravichandran Ashwin)। নিলেন ৬৬ রানে ৩ উইকেট। ফলে ভারতের প্রথম বোলার হিসেবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উইকেট নেওয়ার নজির গড়লেন অভিজ্ঞ অফ স্পিনার।
তাঁকে যোগ্য সঙ্গত করেন অন্য দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব (Kuldeep Yadav) এবং অক্ষর প্যাটেল (Axar Patel)। ফলে চতুর্থ দিনেই বেন স্টোকসদের (Ben Stokes) দ্বিতীয় ইনিংসকে ২৯২ রানে শেষ করে দিয়ে ভারত দাপুটে জয় পেল। একইসঙ্গে পাঁচ ম্যাচের সিরিজে সমতা ফেরাল রাহুল দ্রাবিড়ের (Rahul Dravid) ছাত্ররা। অবশ্য এই জয়ের নেপথ্যে শুভমান গিলের (Shubman Gill) সেঞ্চুরিকেও ভুলে গেলে চলবে না। কারণ তাঁর ১০৪ রানের জন্যই বড় রানের লিড পেয়েছিল ভারত।
বিরাট কোহলি (Virat Kohli) সিরিজের বাকি তিন টেস্টে ফিরবেন কিনা কোনও গ্যারান্টি নেই। রবীন্দ্র জাদেজাকেও (Ravindra Jadeja) সম্ভবত বাকি তিন টেস্টে পাওয়া যাবে না। কারণ তারকা অলরাউন্ডার এনসিএ-তে (NCA) রিহ্যাব করতে ব্যস্ত। শোনা যাচ্ছে কেএল রাহুল (KL Rahul) তৃতীয় টেস্টের দলে ফিরতে পারেন। তবে মহম্মদ শামিও (Mohammed Shami) খেলতে পারবেন না। কারণ ইংল্যান্ডে অস্ত্রোপচার করাতে যাবেন তারকা পেসার। এমন প্রেক্ষাপটে ইংল্যান্ডকে পালটা জবাব দিয়ে ভারতের এই টেস্ট জয় ড্রেসিংরুমকে স্বস্তি এনে দেবে।
চতুর্থদিনের খেলা শুরু করেন জ্যাক ক্রলি ও রেহান আহমেদ। দুজন দ্রুত রান তুলছিলেন। বিপক্ষের ওপেনারদের আউট করতে এক দিক থেকে বুমরাহ ও অন্য দিকে অক্ষরকে বল দেন রোহিত। ইংল্যান্ডকে প্রথম ধাক্কা দেন অক্ষর। ২৩ রান করে আউট হন রেহান। অক্ষরকে সঙ্গ দেয় ভাগ্য। রেহানের বলটি নিচু হয়ে যাওয়ায় ব্যাটে লাগাতে পারেননি তিনি।
[আরও পড়ুন: কেরিয়ার বাঁচানো সেঞ্চুরি করে শুভমানের মুখে কার নাম? দেখুন ভাইরাল ভিডিও]
তৃতীয় দিনের শেষে ইংল্যান্ড জানিয়েছিল, লক্ষ্য বড় হলেও খেলার ধরন বদলাবে না তারা। সেটাই দেখা যায় ইংরেজ ব্যাটারদের খেলায়। অলি পোপ ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই সুইপ, রিভার্স সুইপ খেলতে শুরু করেন। রানও উঠছিল। কিন্তু সেই সঙ্গে আউট হওয়ার সম্ভাবনাও বাড়ছিল। আর সেটাই হল। ২১ বলে ২৩ রান করে অশ্বিনের বলে আউট হন পোপ। স্লিপে দুরন্ত ক্যাচ ধরেন রোহিত।
জো রুটও প্রথম বল থেকেই আগ্রাসী মেজাজে ব্যাট করতে থাকেন। রিভার্স সুইপ খেলে শুরু করেন। পর পর দুই উইকেট পড়লেও রান তোলার গতি কমায়নি ইংল্যান্ড। ১০ বলে ১৬ রান করে অশ্বিনকে অহেতুক বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন রুট। ইংল্যান্ডের ইনিংস এক দিকে ধরেছিলেন ক্রলি। অর্ধশতরান করে খেলছিলেন তিনি। কিন্তু লাঞ্চের বিরতির কিছুক্ষণ আগে জোড়া বড় ধাক্কা খায় ইংল্যান্ড। প্রথমে ৭৩ রানে ব্যাট করা ক্রলিকে ফেরান কুলদীপ। আম্পায়ার প্রথমে আউট দেননি। রিভিউ নিয়ে সফল হন রোহিত। এর পর বুমরাহর ইন সুইং ডেলিভারির লাইন মিস করে ব্যক্তিজ্ঞত ২৬ রানের এলবিডব্লিউ হন জনি বেয়ারস্টো। ১৯৪ রানে ৬ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।
লাঞ্চের সময়ই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল ইংল্যান্ডের হার। তবুও ক্রিজে ছিলেন স্টোকস। তাঁর দেশের প্রাক্তনরা বলাবলি করছিলেন যে, ২০১৯ সালের অ্যাশেজের লিডস টেস্টের স্মৃতি ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা রাখেন অধিনায়ক। সেবার দ্বিতীয় ইনিংসে ১৩৫ রানের অপরাজিত থেকে মাত্র ১ উইকেটে ইংল্যান্ডকে অবিশ্বাস্য জয় এনে দেন স্টোকস। তাঁর লড়াকু ব্যাটিংয়ের কাছে হার মানে অস্ট্রেলিয়া। তবে এবার তিনি পারলেন না। প্রথম ইনিংসে শ্রেয়সের দুরন্ত ক্যাচ ধরেছিলেন। এবার সেই শ্রেয়সের ডিরেক্ট থ্রোতে স্টোকসকে রান আউট হয়ে ফিরতে হল।
২২০ রানে ৭ উইকেট চলে যেতে ইংল্যান্ডের হার ছিল সময়ের অপেক্ষা। বেন ফোকস ও টম হার্টলি লড়াই করে অষ্টম উইকেটে ৫৫ রান যোগ করলেও, ম্যাচ জয়ের জন্য সেটা যথেষ্ট ছিল না। ফোকসকে কট অ্যান্ড বোল্ড আউট করেন বুমরাহ। এর পর বাকি দুই উইকেট চলে যাওয়া ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। ফলে দাপটের সঙ্গে জিতে সমতা ফেরালেন রোহিত ও তাঁর সতীর্থরা। সিরিজের তৃতীয় টেস্ট ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে রাজকোটে শুরু হবে।