রবিবার ভারতীয় সময় সন্ধে সাড়ে ছ’টায় যখন তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে ধরা গেল, চেক ইন করে দেশে ফেরার ফ্লাইটে বসছেন। ফ্লাইটে বসেই ফেলে আসা কুড়ি বছরের সফর-সরণি দিয়ে হাঁটলেন সদ্য অবসরের গ্রহে যাওয়া ঝুলন গোস্বামী। একান্ত সাক্ষাৎকার দিলেন‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’-কে । শুনলেন রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়।
প্রশ্ন: ঝুলন গোস্বামী আজ থেকে প্রাক্তন-এই কথাটা ভাবলে ঝুলন গোস্বামীর (Jhulan Goswami) ভেতরে কী চলছে?
ঝুলন: সত্যি বলতে ভাবনাটা এখনও সিস্টেমে ঢোকেনি। আসলে এখনও টিমের সঙ্গেই আছি তো, সবাইকে দেখতে পাচ্ছি, আড্ডা হচ্ছে, কথা হচ্ছে। শূন্যতাটা বুঝতে পারব আরও কয়েকদিন পর। যখন পারিপার্শ্বিকে সব থিতিয়ে যাবে। যখন ভোরবেলা উঠে আর ট্রেনিংয়ে ছুটতে হবে না, প্রতিপক্ষকে নিয়ে স্ট্র্যাটেজি করতে বসতে হবে না, খেলার জন্য ভোরের ফ্লাইট ধরতে এয়ারপোর্ট দৌড়তে হবে না-বুঝব তখন।
প্রশ্ন: অবসর পরবর্তী চব্বিশ ঘণ্টা ঝুলন গোস্বামীর কেমন গেল?
ঝুলন: দেখছেন তো, সকালে উঠেই দেশে ফেরার ফ্লাইট ধরার জন্য ছুটলাম (হাসি)। বিশেষ কিছু ঘটেনি। তবে হ্যাঁ, ফোনে শুভেচ্ছাবার্তা পাচ্ছি প্রচুর। প্রচুর লোক টেক্সট করছে। হোয়াটসঅ্যাপ করছে।
প্রশ্ন: গত শুক্র আর শনিবার দুই গ্রেটের অবসর ঘিরে দু’রকম ছবি দেখা গেল। লর্ডস থেকে ঘণ্টাখানেক দূরত্বের ‘ও টু’ স্টেডিয়ামে রজার ফেডেরার অবসর মুহূর্তে কেঁদে ফেললেন। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে লর্ডসে আপনি অবসর নিলেন, কিন্তু চোখ দিয়ে একফোঁটা জলও পড়তে দেখলাম না। বরং হরমনপ্রীতকে সান্ত্বনা দিতে দেখা গেল আপনাকে। ঝুলন গোস্বামীকে কি একেবারেই আবেগ আক্রমণ করেনি?
ঝুলন: কে বলল করেনি? অবশ্যই করেছে। কিন্তু আমি সেটা সবাইকে দেখাতে যাইনি। প্রথমত সিরিজটা ৩-০ করার দারুণ সুযোগ ছিল আমাদের সামনে। সেটা হারাতে চাইনি। দ্বিতীয়ত, আমার অবসর পুরো টিমকেই দুঃখ দিচ্ছিল। একটু ‘লো’ ছিল ওরা। আমি যদি ভেঙে পড়তাম, ওরা তাহলে আরও ভেঙে পড়ত। সত্যি বলতে, ভেতরে ভেতরে বেশ যন্ত্রণা হচ্ছিল আমার।
[আরও পড়ুন: মাঠে অভদ্র আচরণ, সতীর্থ যশস্বী জয়সওয়ালকে মাঠ থেকে বের করে দিলেন অধিনায়ক রাহানে]
প্রশ্ন: হোটেলে ফিরে একা হলেন যখন, কেঁদেছেন?
ঝুলন: হুঁ। চোখ দিয়ে জল তো পড়েছে।
প্রশ্ন: আচ্ছা, একটা কথা বলুন। জীবনের গত কুড়ি বছরের দিকে ফিরে তাকালে আজ কী মনে হয়?
ঝুলন: মনে হয়, যা করতে চেয়েছিলাম, সেটা পেরেছি। আমি যখন ক্রিকেট খেলতে শুরু করি, চেয়েছিলাম দেশের মহিলা ক্রিকেটকে একটা প্ল্যাটফর্ম দিতে। চেয়েছিলাম, মহিলা ক্রিকেট তার প্রাপ্য পরিচিতি পাক। গ্ল্যামার পাক। সেটা তো হয়েছে।
প্রশ্ন: লর্ডস আপনাকে ২০১৭ বিশ্বকাপ ফাইনালে খালি হাতে ফিরিয়েছিল। শনিবার সেই একই লর্ডস আপনাকে অনেক কিছু দিয়ে গেল। জীবনের শেষ ম্যাচে দশ ওভারে মাত্র ৩০ রান দিয়ে দু’উইকেট– এ তো ভাবা যায় না।
ঝুলন: এটা ঘটনা যে, গতকাল আমি বেশ চার্জর্ড ছিলাম। নিজের সেরাটা বার করে আনতে চাইছিলাম। আসলে আর তো কোনও দিন জাতীয় দলের নীল জার্সি পরতে পারব না। আমি জানতাম, দেশের জন্য কিছু করে দেখানোর এটাই শেষ সুযোগ।
প্রশ্ন: আপনার রিটায়ারমেন্টের পরেও সমবেত হাহাকার চলছে যে, ঝুলন গোস্বামীর পরিবর্ত এখনও নেই। আপনার মতে, কে হতে পারেন পরবর্তী ঝুলন গোস্বামী (Jhulan Goswami Retirement)?
ঝুলন: ও ভাবে নাম করে বলা যাবে না। উচিতও না। কিন্তু অনেকেই দারুণ খেলছে, দারুণভাবে উঠেও আসছে। এমন পারফর্ম করছে যা প্রশংসাযোগ্য।
প্রশ্ন: শেষ প্রশ্ন। গত দু’দশক ধরে ক্রিকেটকে সর্বস্ব দিতে গিয়ে আপনি জীবনের আরেকটা ক্ষেত্রকে একেবারেই সময় দেননি-পরিবার। আজ থেকে ক্রিকেট নেই। এখন কি আপনি পরিবারকে বেশি সময় দেবেন?
ঝুলন: দেব তো। পরিবারকে অবশ্যই এখন থেকে বেশি করে সময় দেব। সামনেই দুর্গাপুজো। উপভোগ করব। এটা ভাল হল যে, উৎসবের আগে খেলাটা ছাড়লাম। এখন পুজো নিয়ে কেটে যাবে। তারপর সব থিতিয়ে গেলে বুঝব শূন্যতাটা…।