রাজর্ষি গঙ্গোপাধ্যায়: বাংলায় প্রবাদ আছে, কেঁচো খুঁড়তে কেউটে বেরোয়। তা, বাংলা ক্রিকেটের সঙ্গে যে সেই বঙ্গীয় প্রবাদ এত মনোরম ভাবে যায়, কে জানত! কে জানত, দু’একটা ছাড়া প্রায় সমস্ত পর্যায়ে বাংলা ক্রিকেটের (Bengal Cricket Team) ব্যর্থতার তল্লাশি করতে নেমে এমন শত-শত ‘কালকেউটে-শঙ্খচূড়’ বেরিয়ে পড়বে! কেরলের কাছে হেরে রনজি ট্রফি থেকে বাংলার বিদায়ের পর মঙ্গলবার ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এ লেখা হয়, বাংলা ক্রিকেটে এখন ‘পাইয়ে দেওয়ার’ রাজনীতি চলছে। কিন্তু সেখানেই শেষ নয়। বাংলার অনূর্ধ্ব পর্যায়ের ক্রিকেট এই মুহূর্তে প্রায় ফোঁপরা। অনূর্ধ্ব ১৯, অনূর্ধ্ব ২৩ সর্বত্র চূড়ান্ত ব্যর্থ বাংলা। মহিলা ক্রিকেটের দশাও অতীব শোচনীয়। ভারতীয় টিমের চার জন প্লেয়ারকে নিয়েও মহিলা সিনিয়র টুর্নামেন্টের গ্রুপ কোয়ালিফাই করা যাচ্ছে না।
যে কোনও দেশ বা রাজ্যের ক্রিকেটের ‘সাপ্লাই লাইন’ হল অনূর্ধ্ব ১৯। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটাররা সেই অনূর্ধ্ব ১৯ পর্যায় থেকেই ওঠে। যারা কি না পরবর্তীতে সিনিয়র টিমে খেলে। জাতীয় পর্যায়ে বিরাট কোহলি, রবীন্দ্র জাদেজা থেকে শুরু করে হালফিলের শুভমান গিল, যশস্বী জয়সওয়াল–রাশি-রাশি উদাহরণ রয়েছে। সেখানে বঙ্গ ক্রিকেটের বর্তমান ‘সিস্টেমে’ অনূর্ধ্ব উনিশ অবিশ্বাস্য ভাবে অবহেলিত! কোনও প্লেয়ারই উঠছে না সেখান থেকে। বাংলা রনজি থেকে গ্রুপ পর্বে ছিটকে যাওয়ার পর নিন্দেমন্দ চলছে চতুর্দিকে। হেড কোচ লক্ষ্মীরতন শুক্লা, কোচ সৌরাশিস লাহড়ী, বোলিং কোচ শিবশঙ্কর পাল, অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি– প্রায় সবাই কম-বেশি আক্রোশের মুখে পড়ছেন। টিমের ব্যর্থতার খাতিরে চাইলে সবাইকে সরিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু তাতে কিস্যু লাভ হবে না। কারণ, এ রকম ‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত’ সাপ্লাই লাইন নিয়ে লক্ষ্মী-সৌরাশিস-মনোজ কেন, জন বুকানন-স্টিভ ওয়া এনেও বাঁচানো যাবে না বাংলা ক্রিকেটকে!
[আরও পড়ুন: জ্ঞানবাপী মসজিদে প্রথমবার পুজো দিলেন যোগী, ভিডিও ভাইরাল]
এসবের ‘দোসর’ আবার স্থানীয় ক্রিকেট নিয়ে মারাত্মক অভিযোগ। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, সেখানে নাকি কোথাও কোথাও অর্থের বিনিময়ে প্লেয়ার খেলানো চলছে! বাংলা ক্রিকেটের সঙ্গে জড়িত কেউ কেউ অভিযোগ করছেন, পাতে দেওয়ার মতো ক্রিকেটার আজকাল না হলেও চলছে। পকেটে রেস্ত থাকলেই হল! ‘দাদা’ ধরে ঢুকে পড়া যাচ্ছে টিমে, দিব্যি খেলে ফেলা যাচ্ছে স্থানীয় ক্রিকেট। মূল অভিযোগ উঠছে, দ্বিতীয় ডিভিশন নিয়ে। যেখানে সিএবি কর্তাদের উচিত, অবিলম্বে দু’টো টিমের ওঠা-নামা শুরু করা। তাতে প্লেয়ার পুল যেমন বাড়বে। একই সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতাও বাড়বে। এখন যা হচ্ছে না। দ্বিতীয় ডিভিশনে এখন ক্রিকেট কম, দুর্নীতি বেশি।
এই যেমন এক প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির গুরুতর অভিযোগ উঠছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কেউ কেউ বললেন, সেই ক্রিকেটার নাকি দ্বিতীয় ডিভিশনে একাধিক ক্লাব নিয়েছেন। যেখানে খেলার ‘রেট’ নাকি প্রতিভাবান হলে দশ-বারো হাজার। প্রতিভা না থাকলে হাজার তিরিশ! কাগুজে তথ্যপ্রমাণ এ সব ক্ষেত্রে থাকে না। এক্ষেত্রেও নেই। কিন্তু যা রটে, তার কিছুটা তো নিশ্চিত বটে! তবে এ জিনিস সত্যি হলে লিখতে হয়, রসাতলে গিয়েছে বঙ্গ ক্রিকেট! এ জিনিস সত্যি হলে, সর্বাগ্রে ‘আবর্জনা’ সাফ করা প্রয়োজন। রনজি (Ranji Trophy) জয়-টয় না হয় পরে ভাবা যাবে!