সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ১৪ বছর আগের কথা। শুধু বাংলা (Bengal) নয়, তখন দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট সার্কিটেও তাঁর নামডাক হয়েছে। আইপিএলে (IPL) কলকাতা নাইট রাইডার্সের (kolkata Knight Riders) হয়ে খেলে ফেলেছেন। স্বপ্ন দেখছেন আরও এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু সেই স্বপ্ন পূরণ হল কোথায়! ২০০৯ সালের ১৮ অক্টোবর। একটি পথ দুর্ঘটনা তাঁর জীবন, ক্রিকেট কেরিয়ার মুহূর্তে বদলে দেয়। দেশের জার্সি গায়ে তুলে নেওয়ার স্বপ্নে বিভোর ছিলেন অভীক চৌধুরী (Avik Chaudhuri)। যদিও তাঁর বেঁচে থাকার অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায় হুইলচেয়ার।
১৮ অক্টোবরের সকালে ইডেন গার্ডেন্সে বাংলার ট্রেনিং ছিল। সতীর্থদের হাত নাড়িয়ে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েছিলেন অভীক। নিজেই চালাচ্ছিলেন। গন্ডগোলটা হল, বাইপাসের কাছে এসে। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ডিভাইডারে ধাক্কা মারেন অভীক। দুর্ঘটনার অভিঘাতে সংজ্ঞা হারান। দ্রুত নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে দিল্লিতে। কলকাতার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাকালীন কেউ কিছু বলেননি তাঁকে। দিল্লিতে যাওয়ার পর নিষ্ঠুর সত্যিটা জানতে পারেন অভীক। দুর্ঘটনায় অকেজো হয়ে গিয়েছে দু’টো পা। আর কোনও দিন ক্রিকেট খেলতে পারবেন না তিনি। ব্যাট-বল নয়, বাকি জীবনে তাঁর সর্বক্ষণের ছায়াসঙ্গী থাকবে হুইলচেয়ার!
[আরও পড়ুন: রোহিতের সঙ্গে ব্যাট করার অভিজ্ঞতা কেমন? জানালেন নতুন ‘ফিনিশার’ রিঙ্কু]
কিন্তু তাই বলে তো আর জীবন থেমে থাকে না। প্রতিটা মুহূর্তে অভীকের সঙ্গে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী অলকানন্দা দাস। আর সঙ্গে রয়েছেন বাংলার একাধিক ক্রিকেটার। তাঁদের টান ও আবদার ফেলতে না পেরেই তো ১৪ বছর পর প্রিয় ইডেন গার্ডেন্সে পা রাখলেন এক সময়ের দাপুটে অলরাউন্ডার। এবং নন্দনকাননের মাঠে লক্ষ্মীরতন শুক্লা (Laxmi Ratan Shukla), মনোজ তিওয়ারি (Manoj Tiwary), অনুষ্টুপ মজুমদারের (Anustup Majumdar) সঙ্গে বাকিরা তখন অভীকের জন্য অপেক্ষা করছিলেন।
প্রাক্তন সতীর্থদের সঙ্গে অতীতের দিনগুলো নিয়ে আড্ডায় মেতেছিলেন অভীক। মনের ভিতর ভালো-মন্দ অনেক স্মৃতিই ভিড় করে আসছিল। ঠিক সেই সময় তাঁর মাথায় পরিয়ে দেওয়া হল ‘বেঙ্গল ক্যাপ’। একটা সময় যে ‘বেঙ্গল ক্যাপ’ মাথায় চাপিয়ে বাইশ গজের যুদ্ধে দাপিয়ে বেড়াতে অভীক। কেমন ছিল সেই মুহূর্ত? সংবাদ প্রতিদিন.ইন-কে প্রাক্তন অলরাউন্ডার বলছিলেন, “খুবই ভালো অনুভূতি। বাংলার হয়ে খেলার জন্য একটা সময় অনেক ঘাম-রক্ত ঝরিয়েছি। সেই মুহূর্তগুলো ফের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠল। কত ভালো-মন্দ মুহূর্ত চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছিল সেটা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। লক্ষ্মী দা, মনোজ, অনুষ্টুপ ও বাকিরা আমাকে মনে রেখেছে। ওরা আমার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখে। এটাই আমার জন্য যথেষ্ট।”
গত কয়েক বছর ময়দানে ফিরেছেন। বাংলা থেকে নতুন তারকা তুলে আনার লক্ষ্য তাঁর। কোচিং করাচ্ছেন অভীক। সেইজন্য ময়দানে তাঁর আসা-যাওয়া লেগেই থাকে। তবে ইডেনে ফের পা রাখার সাধ পূর্ণ হয়নি। অবশেষে ১৪ বছর পর সেই সাধ পূরণ করলেন। ১৯ জানুয়ারি থেকে চলতি রনজি ট্রফির (Ranji Trophy 2023-24) মঞ্চে ছত্তিশগড়ের (Chhattisgarh) বিরুদ্ধে নামছে বাংলা। এর আগে বিসি রায় ক্লাব হাউসে পা রাখার সময় মনের ভিতরটা কেমন করছিল? অভীকের প্রতিক্রিয়া, “ইডেন অনেক বদলে গিয়েছে। ক্লাব হাউস অনেক বদলে গিয়েছে। মনে হচ্ছিল যেন কোনও পাঁচতারা হোটেলে এসে পড়েছিলাম। ভালো লাগছিল। মনের ভিতরটা মোচড় দিলেও ভালোলাগা ছিলই।”
নায়কোচিত চেহারা ছিল অভীকের। এক কালে বাংলা স্বপ্ন দেখত অভীককে নিয়ে। রনজি খেলেছেন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে গোটা সাতেক ম্যাচ খেলা হয়ে গিয়েছে তত দিনে। লিস্ট এ ক্রিকেটে ১৩-টা ম্যাচ। তত দিনে বাংলা ক্রিকেট নিশ্চিন্ত অভীককে নিয়ে। ধরেই নিয়েছে, তিনিই বহন করবেন ভবিষ্যতে বাংলা ক্রিকেটের গুরুভার। কাগজের শিরোনামেও তখন জ্বলজ্বল করত অভীকের নাম। কিন্তু মানুষ ভাবে এক, নিয়তি আর এক। ১৮ অক্টোবর, ২০০৯ দিনটা ভুলতে পারবেন না অভীক। ঠিক তেমনই তাঁর পক্ষে ২০২৪ সালের ১৮ জানুয়ারিও ভুলে যাওয়া সম্ভব নয়।