স্টাফ রিপোর্টার: রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতিতে আসল দোষীরা আদৌ ধরা পড়বে কি না, বা শাস্তি পাবে কি না তা নিয়ে বৃহস্পতিবার আক্ষেপের সুর শোনা গেল বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায়। কারও নাম না করে নিজের এজলাসে টেট মামলার শুনানি চলার ফাঁকেই কিছুটা স্বগতোক্তির ধাঁচে বিচারপতি বলেন, ‘‘নিয়োগ দুর্নীতিতে আসল অপরাধী কে সবাই জানে, তবে আমার জীবদ্দশায় তারা ধরা পড়বে বলে তো মনে হয় না। আমি তো নিজে ধরতে যেতে পারব না। ইডি, সিবিআই কী করে দেখা যাক!’’
শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতি মামলা ইতিমধ্যেই হাই কোর্ট ঘুরে বিচারাধীন সুপ্রিম কোর্টেও। কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) নির্দেশে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তদন্ত চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই ও ইডি। চাকরি গিয়েছে বেশ কিছু ভুয়ো নিয়োগ প্রার্থীরও। জেলে আছেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়-সহ (Partha Chatterjee) স্কুল সার্ভিস কমিশন ও প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের একাধিক কর্তাব্যক্তি। তার বিচারপর্বও চলছে নিম্ন আদালতে। কিন্তু এদিন কেন এমন আক্ষেপের সুর শোনা গেল স্বয়ং বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের গলায়?
[আরও পড়ুন: আদৌ কোটি টাকা জিতেছিলেন অনুব্রত? রহস্যভেদে বোলপুরের লটারির দোকানে হানা সিবিআইয়ের]
প্রাথমিক শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগে বেনিয়ম সংক্রান্ত একাধিক মামলার বৃহস্পতিবার শুনানি ছিল বিচারপতির এজলাসে। দুপুর ১২টা ৪৫ নাগাদ এক ব্যক্তি বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের (Abhijit Ganguly) এজলাসে আসেন। সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎই ভরা এজলাসে তিনি নিজেকে সুনীল ভট্টাচার্য বলে পরিচয় দেন। দাবি করেন তিনি রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের নাকতলার প্রতিবেশী। কর্মসূত্রে ওড়িশায় থাকেন। বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সারমেয়দের জন্য যে ফ্ল্যাট আছে তা এলাকার সবাই জানেন। অথচ কিন্তু পুলিশ জানত না, অবাক কাণ্ড!’’
আরও বলেন, ‘‘আমাদের এলাকার বাচ্চা ছেলেরাও এ সব বিষয়ে জানত। আমরাও অনেক আগে থেকেই জানতাম। কিন্তু কিছু বলতাম না! কুকুরের বিষয়ে বাড়ির পরিচারিকাও জানতেন।’’ এরপরই বিচারপতির উদ্দেশে সুনীলবাবু বলেন, ‘‘আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। আপনি পূজনীয়! আমার মা আপনার কথা বলেন। আমি এবং আমার ৯২ বছরের মা আপনার ফ্যান। শুধু আমরাই নই, বাংলাজুড়ে আপনার আরও অনেক ফ্যান রয়েছে।’’ এরপরই সুনীলবাবুকে কার্যত থামিয়ে দিয়ে বিচারপতি পালটা বলেন, ‘‘আপনি একজন নমস্য ব্যক্তি। আসল অপরাধীদের ধরতে হবে।’’
সুনীলবাবুর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গেই উঠে আসে শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়োগ দুর্নীতির আরেকটি পর্ব। কলেজে ভরতি হতে নাকি কাটমানি দিতে হয়! বাংলার গর্বের জায়গা নষ্ট হয়ে গিয়েছে বলেও আক্ষেপ করেন বিচারপতি। বলেন, ‘‘আমাকেও মাঝে মাঝে শুনতে হয়।’’ এজলাসে উপস্থিত বিচারপ্রার্থী থেকে আইনজীবীদের উদ্দেশে এক তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেন বিচারপতি। বলেন, ‘‘৬ বছর আগে ওড়িশা থেকে আসার সময় ব্যঙ্গের শিকার হয়েছিলাম। ট্রেনে করে আসার সময় এক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করেন, আপনি পশ্চিমবঙ্গে থাকেন? আপনাদের ওখানে টাকা নিয়ে কলেজে ভরতি হয়? আমাকে মাথা নিচু করে শুনতে হয়েছে।’’
কলেজে ভরতিতে টাকা প্রসঙ্গে আরও একটি অভিযোগের উদাহরণ টেনে বিচারপতি বলেন, ‘‘কয়েক বছর আগে আমার একজন ক্লার্ক ছিলেন ঘনশ্যাম নামে, তাঁর মেয়েকে মেদিনীপুরের একটি কলেজে ইংরেজি নিয়ে স্নাতক স্তরে ভরতির জন্য আড়াই টাকা চাওয়া হয়েছিল। এই তো অবস্থা।’’ তবে আক্ষেপ করলেও এদিন আদালতে উপস্থিতদের উদ্দেশে বিচারপতি বলেন, ‘‘সবাই মিলে চেষ্টা করে এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’’