শুভঙ্কর বসু: রাজ্যে ‘ওবিসি’ তালিকাভুক্ত হলেই কি কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা মিলবে? বীরভূমের সিউড়ির এক যুবকের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে তার উত্তর জানিয়ে দিল কলকাতা হাই কোর্ট। উচ্চ
আদালত জানিয়েছে, রাজ্যের ‘ওবিসি’ তালিকায় নাম থাকলেই কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে সংরক্ষণের সুবিধা মিলবে, এমনটা নয়। শুধুমাত্র কেন্দ্র ‘ওবিসি’ তালিকায় কারও নাম নথিভূক্ত করলে তবেই কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে মিলবে সংরক্ষণের সুবিধা।
জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালে সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স বা CRPF-এর অসম রাইফেলসে কনস্টেবল পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি বেরয়। যেখানে তফসিলি জাতি ও উপজাতিভুক্ত এবং ওবিসিদের জন্য বেশ কয়েকটি আসন সংরক্ষিত ছিল। চাকরির আবেদন জানান এরাজ্যে ওবিসি তালিকাভুক্ত সিউড়ি সদর এলাকার বাসিন্দা পিন্টু আলি খান নামে ওই যুবক। আবেদনপত্রে তিনি ২০১২ সালে সিউড়ি সদর মহকুমা শাসকের ইস্যু করা ওবিসি সার্টিফিকেট জমা দেন। আবেদনপত্রটি গৃহীত হয় এবং কর্তৃপক্ষের তরফে ডাক আসে। শারীরিক পরীক্ষা, মেডিক্যাল, ইন্টারভিউ থেকে এনডিওরেন্স টেস্ট, সবেতেই উত্তীর্ণ হন পিন্টু। এরপর জানুয়ারিতে বাছাইপর্ব এলে সিউড়ি সদর মহকুমা শাসকের ইস্যু করা ‘ওবিসি’ শংসাপত্র জমা দেন পিন্টু।
কিন্তু সিআরপিএফ কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেয়, রাজ্যের ইস্যু করা ওই সার্টিফিকেট এক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য নয়। তাঁকে কেন্দ্র নির্ধারিত প্রোফর্মা অনুযায়ী সার্টিফিকেট জমা দিতে বলা হয়। এজন্য তাঁকে দু’সপ্তাহ সময় দেয় তারা। এরপর বাধ্য হয়ে ফের এসডিও’র দ্বারস্থ হন ওই তিনি। কিন্তু অভিযোগ, কেন্দ্র নির্ধারিত প্রোফর্মা অনুযায়ী সার্টিফিকেট ইস্যু করতে অস্বীকার করেন এসডিও।
[আরও পড়ুন: ভিড়ের আড়ালে মাস্কে মুখ ঢাকা দুষ্কৃতীদের গুলিতে নিহত মণীশ, তদন্তে মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য]
শেষমেশ কলকাতা হাই কোর্টের (Calcutta High Court) দ্বারস্থ হন ওই যুবক। বিচারপতি শেখর ববি শরাফের এজলাসে মামলাটি উঠলে সমস্ত বৃত্তান্ত জানিয়ে SDO-কে পুনরায় কেন্দ্রীয় প্রোফর্মা অনুযায়ী ওবিসি সার্টিফিকেট ইস্যুর দাবি তোলেন পিন্টুর আইনজীবী দেবব্রত দাশগুপ্ত। রাজ্যের তরফে উপস্থিত কৌঁসুলি শান্তনুকুমার মিত্র জানান, কেন্দ্র নির্ধারিত ওই প্রোফর্মা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সার্টিফিকেট ইস্যু করার এক্তিয়ার এসডিও-র নেই। সিআরপিএফ তথা কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে উপস্থিত আইনজীবী বি ঝা জানিয়ে দেন, কেন্দ্র নির্ধারিত সার্টিফিকেট না পেলে সংরক্ষিত আসনে চাকরি দেওয়া সম্ভব নয়। এরপর বিচারপতি সরাফ জানিয়ে দেন, কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে এই সংক্রান্ত সুবিধা পেতে আবেদনকারীর কাছে অবশ্যই ‘ন্যাশনাল কমিশন ফর ব্যাকওয়ার্ড ক্লাসেস’ বা NCBC–র ফরম্যাট নির্ধারিত শংসাপত্র থাকা বাধ্যতামূলক। এরপরই মামলাটি তিনি খারিজ করে দেন।
[আরও পড়ুন: ‘উত্তরপ্রদেশের মতো মাফিয়ারাজ চলছে বাংলায়’, তৃণমূলকে দুষতে গিয়ে বেঁফাস দিলীপ]
আসলে ২০১৮ সালের ২৮ জুনের সংশোধিত বিল অনুযায়ী এ রাজ্যে মোট ৯৭টি শ্রেণিকে ওবিসি তালিকায় রাখা হয়েছে। সেই ৯৭টি শ্রেণির সবক’টি এনসিবিসির ফরম্যাটের অন্তর্ভুক্ত নয়। তাছাড়া প্রতিটি রাজ্যের জন্য এনসিবিসির পৃথক তালিকা রয়েছে। সেই অনুযায়ী কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে প্রতিটি রাজ্যের ওবিসি তালিকাভুক্তরা সুবিধা পেয়ে থাকেন। যদিও বিষয়টি নিয়ে উচ্চতর বেঞ্চে যাওয়া হবে বলে জানিয়েছেন পিন্টুর আইনজীবী।