গৌতম ব্রহ্ম: রোগীর দিকে তাকানো যাচ্ছিল না। এত ভয়ংকর হয়ে গিয়েছিল চেহারা। নাক, মুখ ও চোখের নিচের অংশ বিচ্ছিরিভাবে খুবলে নিয়েছিল হিংস্র কুকুরের দল (Stray Dog)। অস্ত্রোপচার করে সেই খুবলে নেওয়া অংশ জোড়া লাগাল প্রত্যন্ত জেলার এক সরকারি হাসপাতালের সার্জনরা। বুঝিয়ে দিল, স্বাস্থ্যক্ষেত্রে উন্নয়ন শুধু কলকাতায় আটকে নেই। ছড়িয়ে পড়েছে পুরুলিয়ার মতো প্রত্যন্ত জেলাতেও। পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিক্যাল কলেজ। নতুন এই মেডিক্যাল কলেজের ইএনটি বিভাগই অসাধ্যসাধন করেছে।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, রোগীর নাম মহাদেব গোপ। বাড়ি পুরুলিয়ার নাদিয়ারায়। বছর পঞ্চাশের মহাদেববাবু দুপুরবেলা পুকুরে স্নান করতে যাচ্ছিলেন। তখন তাঁকে কয়েকটি কুকুরে তাড়া করে। পালিয়ে লাভ নেই। উলটে কয়েকটি কুকুর তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাঁর মুখ, ঠোঁট, গাল, নাক খুবলে নেয়। আশেপাশের কয়েকজন মহাদেববাবুকে উদ্ধার করেন। পুরুলিয়া দেবেন মাহাতো গভর্নমেন্ট মেডিকেল কলেজে নিয়ে যাওয়া হয়। রোগীকে ভরতি করা হয় সার্জারি বিভাগে। সেখান থেকে রোগীকে পাঠানো হয় নাক, কান, গলা বিভাগে। ডা. মনোজ খান এবং ডা. বুবাই মণ্ডলকে নিয়ে দ্রুত সার্জিক্যাল টিম তৈরি করেন বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক অতীশ হালদার।
[আরও পড়ুন: ৮ মাস ধরে ৮০ জন মিলে গণধর্ষণ ১৩ বছরের কিশোরীকে! চাঞ্চল্য অন্ধ্রপ্রদেশে]
অতীশবাবু জানালেন, “রোগীর অবস্থা এতই খারাপ ছিল যে অজ্ঞান করা খুবই দুরুহ ছিল। প্রোটোকল মেনে প্রথমে রোগীকে জলাতঙ্কের ইঞ্জেকশন ও ক্ষতস্থানে ইমিউনোগ্লোবিউলিন দেওয়া হয়। এরপর খুবলে নেওয়া অংশে ইনজেকশন দিয়ে অবশ করে রোগীর ক্ষত মেরামত করা হয়। সমস্যা অবশ্য হয়েছে। প্রোটোকল অনুযায়ী, কুকুরে কামড়ালে সেলাই করতে নেই। তবু রোগীর প্রাণ বাঁচাতে, রক্তপাত ঠেকাতে সেলাই জরুরি ছিল। অতীশবাবু জানালেন, “রোগী ভয়ংকরভাবে জখম হয়েছিলেন। একদিকের নাক পুরোটা খুবলে নিয়েছিল সারমেয়র দল। ক্ষতিগ্রস্ত হয় চোখের নিচে ডানদিকের অংশ, গালের ভিতর পর্যন্ত অংশ, ঠোঁট, গালের ভেতরের অংশ, নাকের ভেতরের অংশ। ক্ষতস্থান সেলাই না করলে রক্তপাত হয়ে প্রাণহানির আশঙ্কা ছিল।”
রাজ্যের স্বাস্থ্য অধিকর্তা ডা. অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, “দক্ষতা এবং দায়বদ্ধতায় সাধারণ মানুষকে পরিষেবা দিতে মেডিক্যাল কলেজগুলো এগিয়ে এসেছে। যে অস্ত্রোপচার তারা করেছেন সেটা শুধু কঠিন নয়। অবিশ্বাস্যও বটে। পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো সরকারি মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকদের অজস্র অভিনন্দন।” কলকাতার হাসপাতালগুলির চাপ কমাতে জেলার সরকারি হাসপাতালে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ অনেকদিন ধরেই চলছে। মহাদেববাবুর অস্ত্রোপচার যেন তারই প্রমাণ। তবে এই প্রথম নয়। এর আগেও এই হাসপাতালের সার্জনরা অসাধ্যসাধন করেছেন। ২০১৫ সালের ২৬ আগস্ট সার্জন চিকিৎসক পবন মণ্ডল ডাস্টবিন থেকে কুড়িয়ে আনা একটি আঙুলের টুকরো জোড়া লাগিয়েছিলেন। ২০২১ সালের ৭ নভেম্বরও প্রায় একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়। ঝালদা থেকে আসা দুর্ঘটনাগ্রস্ত রোগীর কাটা আঙুল জুড়ে দেন পবন। তাও প্রায় শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার ৬ ঘণ্টা পর। এবার সাফল্য এল ইএনটি বিভাগের হাত ধরে।