সন্দীপ চক্রবর্তী: নেতাজি (Subhas Chandra Bose) অন্তর্ধান রহস্যে নাটকীয় মোড়! সুভাষচন্দ্র বসুর অন্তর্ধান রহস্যের পূর্ণাঙ্গ নিরপেক্ষ তদন্ত চেয়ে এবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে (PM Modi) চিঠি দিলেন শরৎচন্দ্র বসুর বড় ছেলে অশোকনাথ বসুর সন্তানরা। সম্প্রতি চন্দ্রকুমার বসু রেনকোজি মন্দিরের চিতাভস্ম ফিরিয়ে আনার যে দাবি তুলেছেন, তারও সম্পূর্ণ বিরোধিতা করা হয়েছে। শনিবারই এই চিঠি পাঠিয়েছেন শরৎ বসুর বড় নাতনি জয়ন্তী বসু রক্ষিত, নাতনি তপতী ঘোষ ও নাতি আর্যকুমার বসু। এবার প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপের অপেক্ষায় আপামর বাঙালি বা ভারতবাসীর মতোই বসু পরিবারের এই সদস্যরাও।
চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীকে স্পষ্ট আবেদন করা হয়েছে, গুমনামী বাবা প্রসঙ্গ মানুষের মনে যে সাড়া ফেলেছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। উড়িয়েও দেওয়া যায় না। এই প্রেক্ষিতে নেতাজি সম্পর্কিত দুই বিশিষ্ট গবেষক চন্দ্রচূড় ঘোষ ও অনুজ ধর বিভিন্ন প্রত্যক্ষদর্শী ও ফরেনসিক প্রমাণ সংগ্রহ করে জনসমক্ষে এনেছেন। বিচারপতি মনোজ মুখোপাধ্যায়ও নিজেই বলেছিলেন যে গুমনামী বাবা ছিলেন নেতাজি। কেন সরকার বিষয়টিতে আমল দেয়নি, আমরা আশ্চর্য হয়েছি।
[আরও পড়ুন: অনুমতি মিলল প্রশাসনের, দ্রুত খুলে যেতে পারে দেশের সর্ববৃহৎ ‘স্বর্ণভাণ্ডার’, রাতারাতি কমবে সোনার দাম]
বসু পরিবারের বরিষ্ঠ জীবিত সদস্যরা আর্জি রেখেছেন, ১৯৪৫ সালের আগস্টে তাইহোকুতে বিমান দুর্ঘটনা তত্ত্ব সাধারণ মানুষও মানেন না। নেতাজির স্ত্রী এমিলি শেঙ্কল ও তাঁর দাদা শরৎচন্দ্র বসু, সুরেশচন্দ্র বসুও যুক্তিগ্রাহ্য নয় বলেই ওই তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছিলেন। এমনকী তৎকালীন নামী আইনজীবী শরৎ বসু প্রধান প্রত্যক্ষদর্শীকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদও করেন। শেঙ্কল বিদেশের তথ্যও জোগাড় করেছিলেন।
নেতাজির ‘অবশেষ’ হিসাবে দেখিয়ে রেনকোজি মন্দিরের চিতাভস্ম দেশে আনার কোনও পদক্ষেপ করাই উচিত নয়। নিরপেক্ষ নজরদারি কমিটির সতর্ক তত্ত্বাবধানে আমেরিকা ও ইউরোপের নামী ল্যাবে অবশেষের বিজ্ঞানসম্মত পরীক্ষা করানো যেতে পারে। মুখার্জি কমিশন সেই ভস্ম জাপানি সরকারি ল্যাবরেটরিতে ডিএনএ টেস্টের গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা। চিঠিতে চন্দ্রচূড় ঘোষ ও অনুজ ধরের লেখা বইয়েরও উল্লেখ করা হয়েছে।
[আরও পড়ুন: ‘কেউ কেউ তল্পিবাহকের মতো কাজ করছেন’, বিচারব্যবস্থার দিকে আঙুল তুললেন অভিষেক]
চিঠির শেষে, মাল্টি ডিসিপ্লিনারি বিশেষ তদন্তদলের অধীনে নতুনভাবে নেতাজি অন্তর্ধান রহস্যের তদন্তের অনুরোধ করেছেন বসু পরিবারের তিন প্রবীণ—প্রবীণা। এ ব্যাপারে উত্তরপ্রদেশে গঠিত সহায় কমিশনের রিপোর্টের লোকদেখানো ‘নোট’ও পাঠাবেন তাঁরা। এই বন্দিত দেশনায়কের অন্তর্ধান রহস্যের নিষ্পত্তিই তাঁর জন্মের ১২৫ বছর ও স্বাধীনতার ৭৫ বছরে দেশবাসীকে সেরা উপহার হতে পারে।
গবেষক ও ইতিহাসবিদ চন্দ্রচূড়ও দাবি তুলেছিলেন, সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের অর্থাৎ মাল্টি ডিসিপ্লিনারি স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম গঠন করতে হবে। এই দলের মাথায় থাকুন বিচার ব্যবস্থার শীর্ষকর্তা বা অবসরপ্রাপ্ত কোনও বিচারপতি। সেই দলে থাকুন কোনও আর্কাইভিস্ট বা মহাফেজখানার সংরক্ষক যাঁর অভিজ্ঞতা রয়েছে, ইতিহাসবিদ, সমাজের বিশিষ্ট মানুষেরা। সেই দলকে সুপ্রিম কোর্ট বা হাই কোর্টকে নিয়মিতভাবে রিপোর্ট দিতে হবে। পুলিশ, ইন্টেলিজেন্সি বা র’এর অফিসারদের তদন্তে ডাকতে হবে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, বিশেষ অর্ডার করাতে হবে যাতে তাঁরা নির্দ্বিধায় স্পেশাল টিমকে সবটা জানাতে পারেন।