shono
Advertisement

নেতা-নেত্রীর প্রতি ভক্তি? আত্মহত্যার সংখ্যা দিয়ে যায় চেনা

মনোবিদদের একাংশ বলছেন, অতিরিক্ত আবেগের জন্যই এই ধরনের ঘটনায় আত্মহননের পথ বেছে নেন বহু মানুষ৷ The post নেতা-নেত্রীর প্রতি ভক্তি? আত্মহত্যার সংখ্যা দিয়ে যায় চেনা appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 04:47 PM Oct 21, 2016Updated: 12:12 PM Oct 21, 2016

শংকর ভট্টাচার্য: দক্ষিণের মানুষ কেন কথায় কথায় নিজের জীবন শেষ করে দেন? রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু তো বটেই, রাজ্য ভাগ, কৃষি ঋণের দায় থেকে রাজনৈতিক দলের পরাজয় বা খেলায় ভারতের হারেও দক্ষিণের রাজ্যগুলি থেকে আত্মহত্যার খবর আসে৷ কিন্তু কেন?

Advertisement

মনোবিদদের একাংশ বলছেন, অতিরিক্ত আবেগের জন্যই এই ধরনের ঘটনায় আত্মহননের পথ বেছে নেন বহু মানুষ৷ কিন্ত তা বলে প্রিয় নেতা বা নেত্রীর অসুস্থতাতেও? এই তালিকায় তামিলনাড়ু, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা বা কর্নাটক এগিয়ে৷ আবার কেরলে আত্মহত্যা ঘটছে মূলত জীবন-যুদ্ধে আশাভঙ্গের কারণে৷ কেরলে উচচশিক্ষার সঙ্গে কেরিয়ারের মেলবন্ধন না ঘটার ফলে হতাশা তৈরি হচ্ছে৷ তার থেকেই বহু মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেন৷ এই নিয়ে বহু গবেষণাও হয়েছে৷ আমাদের এই আলোচনায় কেরল বাদ থাকছে৷ কারণ রাজনৈতিক মতাদর্শগত কারণে আত্মহত্যার ঘটনা কেরলে তেমন শোনা যায়নি৷ দক্ষিণে আত্মহত্যার তালিকা দিয়ে নেতার জনপ্রিয়তা যাচাই করা হয়৷

ঐক্যবদ্ধ অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ওয়াই এস রাজশেখর রেড্ডি ২০০৯ সালের ২ সেপ্টেম্বর হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ তার এক সপ্তাহের মধ্যে কম করেও ১২২ জন আত্মহত্যা করেছিলেন৷ পরে এই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পায়৷ ১৯৮৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর তামিল সুপারস্টার এম জি রামচন্দ্রন মারা যান৷ তাঁর মৃত্যুর পর ৩০ জন আত্মহত্যা করেছিলেন৷ আবার ১৯৯৬ সালের ১৮ জানুয়ারি মারা যান তেলুগু সুপারস্টার এন টি রামারাও৷ তাঁর মৃত্যুর পরেও ১৯ জন আত্মঘাতী হয়েছিলেন৷ বাদ যায়নি কর্নাটকও৷ বিখ্যাত কন্নড় নায়ক ডাঃ রাজকুমার মারা গিয়েছিলেন ২০০৬ সালের ১২ এপ্রিল৷ তাঁর মৃত্যুর পর আগুন জ্বলেছিল রাজ্যজুড়ে৷ একাধিক ‘ভক্ত’ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন৷ বহু মানুষ মারাও যান৷ তবে এই সব ছাড়িয়ে এখনও পর্যন্ত রেকর্ড করেছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা৷ ২০১৪ সালে তাঁর গ্রেফতারের পর প্রাণ হারান মোট ১৫৪ জন৷ এঁদের মধ্যে হার্ট আ্যটাক হয় ১১৩ জনের আর আত্মঘাতী হন ৪১ জন৷ আম্মা কেবল জেলে যেতেই এই আত্মহত্যা! এর পর? প্রশ্ন তামিলনাড়ুর পুলিশ ও প্রশাসনের সর্বস্তরে৷ এক কথায় নেতা-নেত্রীর প্রতি ভালবাসার মাপকাঠি যদি হয় আত্মহত্যা, তবে জীবিত অবস্থাতেই সব থেকে এগিয়ে জয়ললিতা!

তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতা জয়রাম অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি গত ২২ সেপ্টেম্বর থেকে৷ দেখতে দেখতে প্রায় মাস গড়াতে চলল৷ কিন্তু এখনও কেউ সঠিকভাবে বলতে পারছেন না তাঁর কী হয়েছে? তবে বৃহস্পতিবার থেকে বলা শুরু হয়েছে, আম্মা ভাল হয়ে উঠছেন৷ এটা নাকি ‘পজিটিভ রিউমার’ বা সদর্থক গুজব৷ দলীয় সমর্থকদের আশ্বস্ত করতেই এই কৌশল৷ এই বিষয়ে কেউ আলোচনা করলেই পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করছে৷ একেবারে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা তামিলনাড়ুতে৷ তবে সব থেকে খারাপ অবস্থা বোধহয় সংবাদমাধমের৷ বেসরকারি হাসপাতালের মেডিক্যাল বুলেটিন ছাড়া আর কোনও ‘খবর’ নেই আম্মার স্বাস্হ্য সম্পর্কে৷ কোনও নেতা বা মন্ত্রীও কোনও কিছু খোলসা করে বলতে সাহস পাচ্ছেন না৷ ওরে বাবা, কোথা থেকে যে কী হয়ে যায়! ফেসবুকে এই নিয়ে বক্তব্য পোস্ট করায় গ্রেফতারের সংখ্যা ৫০ ছাড়িয়েছে৷ কেবল তাই নয়, আলোচনা করলেও জেল হাজত হয়ে যাচ্ছে৷ বাংলায় বসে পরিস্থিতিটা পুরোপুরি বোঝা সম্ভব নয়৷ আসলে ওই রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এই কঠোর পদক্ষেপ নাকি করতে হচ্ছে কেবল আত্মহত্যার মতো ঘটনা থামাতেই৷ অসুস্থতার খবর বেশি প্রচারে এলে নাকি আম্মা ভক্তদের মধ্যে হতাশার মাত্রা বৃদ্ধি পাবে৷ দক্ষিণের আত্মহত্যার তালিকায় জীবিত অবস্থাতেই এগিয়ে ‘আম্মা’ জয়ললিতা৷ এই আত্মহত্যার মাপকাঠিতেই দক্ষিণে মাপা হয় জনপ্রিয়তাও৷ তা আপনার বা আমার যতই খারাপ লাগুক না কেন৷ এই আবেগ আর অশ্রুর উপর ভর করেই তো সেই সব রাজনৈতিক দল ভোট বাড়াবে৷ তাই সাধারণ মানুষের এই আবেগ তৈরির জন্য বছরভর চলে নিরন্তর প্রয়াসও৷

The post নেতা-নেত্রীর প্রতি ভক্তি? আত্মহত্যার সংখ্যা দিয়ে যায় চেনা appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement