নিজেকে লাকি মনে করেন, ছোটপর্দার জনপ্রিয় মুখ ইন্দ্রজিৎ বসু। ১০-১২টা সিনেমার প্রস্তাব ছাড়ার জন্য কোনও আক্ষেপ নেই স্পষ্ট বললেন। শুনলেন শম্পালী মৌলিক।
টিআরপি তালিকায় প্রায় প্রতি সপ্তাহে শীর্ষে 'পরশুরাম: আজকের নায়ক’। টানা এতদিন ধরে চলছে। সাফল্যের ম্যাজিক কোথায়?
... টেলিভিশন বলো বা সিনেমা বলো, আল্টিমেট হল স্ক্রিপ্ট আর গল্প। চিত্রনাট্য আর গল্পই আসল হিরো। স্নেহাশিসদার (চক্রবর্তী, ব্লুজ-এর কর্ণধার) যে কোনও ধারাবাহিকই বলো, উনি যেন ছোটপর্দায় সিনেমা নিয়ে আসেন। টেলিভিশনের দৃশ্য, কাহিনি, সংলাপের থেকে আলাদা হয় ওঁর কাজ। আমি ওঁর হাউসে কাজ করেছি বলে বলছি না। কমার্শিয়াল সিনেমার সিটি পড়ার যে সংলাপগুলো পেতাম, সেই প্যাটার্নের। এটাই প্রধান কারণ মনে হয়। যে কোনও সিনেমা-সিরিয়াল হিট হওয়ার মেজর কারণ হল গল্প, আমি তাই মনে করি।
দর্শক সাধারণ লোককে সুপারহিরোর মতো দেখতে চায়।
... এটা একটা অদ্ভুত ভাবনা উনি এনেছেন অথচ সহজ। বলে না, সিম্পল ইজ ভেরি বিউটিফুল বাট পিপল ফরগেট হাউ টু থিঙ্ক সিম্পলি। সহজ-সাধারণভাবে ভাবলেই সবচেয়ে সুন্দর হয়। কিন্তু মানুষ সাধারণভাবে ভাবতেই ভুলে গেছে। আমরা সাধারণ মানুষরাই মেট্রোয়, গাড়িতে বা ক্যাবে করে প্রত্যেকদিন বাড়ি ফিরতে ফিরতে নিজেদের ভিতরে ভিতরে হিরো ভাবি। অথচ আমাদের কারওরই গিফটেড কোনও ক্ষমতা নেই, কাউকে মেরে ফাটিয়ে দিতে পারব না বা হুট করে সুপারম্যানের মতো উড়েও যেতে পারব না। অদৃশ্যও হতে পারব না। প্রত্যেক সাধারণ মানুষের অবচেতনে বা কল্পনায় কোথাও সুপারহিরো আছে। সেটার সঙ্গে মানুষ রিলেট করছে। দর্শক যা হতে চায় সেটাই পর্দায় দেখতে পাচ্ছে।
পুরুষচরিত্র কেন্দ্রিক ধারাবাহিক খুব একটা হয় না। সে ক্ষেত্রে আপনি লাকি। প্রথম ধারাবাহিকেও তেমন ঘটেছিল....
... আমার প্রথম সিরিয়াল ছিল ‘প্রভু আমার’। ‘মহা প্রভু’-র ‘পার্ট টু’ ই-টিভির জন্য। দেবাংশুদা ছিলেন পরিচালক। রংগন চক্রবর্তী ছিলেন প্রোডিউসার।
এমন সিরিয়াল আবার পেয়ে ফাটিয়ে দিলেন...
... অনেস্টলি বলছি, আমার কাছে পুরুষকেন্দ্রিক বা নারীকেন্দ্রিক ওরকম কিছু নেই। সবারই ভূমিকা থাকে।
অর্থাৎ বলছেন তৃণা সাহা ইকুয়ালি ভালো...
... হ্যাঁ। আমার এর আগের সব থেকে বড় হিটগুলোর ক্ষেত্রেও তেমনই মনে করি। তোমাদের আশীর্বাদে নাইন্টি নাইন পার্সেন্ট প্রোজেক্ট বড় হিট। ‘রাশি’, ‘গোয়েন্দা গিন্নি’, ‘সাথী’, ‘ধ্রুবতারা’ এগুলো যদি সেই অর্থে বলো, নারীকেন্দ্রিক। কিন্তু যতটা জনপ্রিয়তা একজন হিরোইন পেয়েছেন ততটাই জনপ্রিয়তা আমিও পেয়েছি। দিনের শেষে পারফরম্যান্স শেষ কথা।
টেলিভিশন ইন্ডাস্ট্রিতে প্রায় ১৬ বছর হয়ে গেল আপনার। টানা টিআরপি-র চাপ সবাই নিতে পারে না। আপনি নিচ্ছেন কীভাবে?
... হ্যাঁ, ১৬ বছর অ্যাজ আ হিরো। পজিটিভ বলে তাই পারছি। আমি টিআরপি-র নেগেটিভিটি ফেস করিনি বলতে পারো। আমাকে আজ অবধি একটা কাজ থেকে আরেকটা কাজের জন্য বসতে হয়নি। আমি খুব সৌভাগ্যবান, ভগবান হয়তো আশীর্বাদ করেছেন কঠোর পরিশ্রমের জন্য। তাই জন্য আমাকে আজ পর্যন্ত কাউকে ফোন করে বলতে হয়নি, যে আমার একটা কাজ চাই। কাজ শেষ হওয়ার আগেই আমার কাছে বেশ কিছু কাজ সবসময় থাকে।
টেলিভিশন করলে সময় ম্যানেজ করাটা ভয়ংকর হয়ে দাঁড়ায়। বাড়িতে সময় দেওয়াও চাপ হয়। আপনার পরিবারের সাপোর্ট সিস্টেম নিশ্চয়ই খুব ভালো?
... খুব ভালো। যে কোনও মানুষ যখন স্যানিটির সঙ্গে বছরের পর বছর কাজ করেছে জানবে তার কাছের মানুষ বা পাশের মানুষ খুব সাপোর্টিভ না হলে সে পারবে না। বাড়িতে মা-বাবা আর দুই ভাই আছেন (হাসি)।
এখনও বিশেষ মানুষকে বাড়িতে আনার পরিকল্পনা নেই!
... বিশেষ মানুষ জীবনে আছে তবে বৈবাহিক সূত্রে এখনও আসেনি (হাসি)।
টিভি-তে তো আপনি এখন মোস্ট ওয়ান্টেড।
... না গো। আমাকে মেয়েরা খুব একটা পাত্তা টাত্তা দেয় না। খুব একটা পছন্দ করে না মনে হয়। বিয়ে নিশ্চয়ই করব, হোয়েন এভার শি ওয়ান্টস টু গেট ম্যারেজ। তার হাতেই বিষয়টা ছাড়লাম।
‘চালচিত্র’ ছবিটা যখন করলেন, তখন ‘সাথী’ ধারাবাহিকটা করছিলেন। এবার তেমন কোনও ছবির প্রস্তাব আসছে?
... আসতে থাকে। প্রায় খান দশ-বারো ছবি আমি ছেড়েছি। এমনকী, ‘গয়নার বাক্স’-র মতো ছবিও হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল, শুধুমাত্র আমার ডেটের অভাবে। তার আমার কোথাও আক্ষেপ নেই। টিভি, সিনেমা, যাত্রা– কোনওটা আলাদা চোখে দেখি না। অভিনয়ের আলাদা মাধ্যম এটুকুই। সবেতেই শেষ পর্যন্ত দর্শককে এন্টারটেন করতে হবে। অনেক মানুষ কত স্ট্রাগল করছে। আমার থেকে অনেক বেশি ট্যালেন্টেড, হার্ডওয়ার্কিং, গুড লুকিং মানুষও আছে। তারা হয়তো সেই সুযোগটাই পাচ্ছে না। আমার কোনও অনুযোগ, আক্ষেপ নেই।
