স্টাফ রিপোর্টার: সারাদিন ধরে ফোন বেজে চলেছে, বিরাম নেই। ধরলেই ও প্রান্ত থেকে আবদার- ‘স্যর প্লিজ, টেট (Primary TET) নেবেন না।’ কেউ আবার সরাসরি ফোনে মেসেজ করে মানসিক অবসাদের কথা জানিয়ে আত্মহত্যার হুমকি দিচ্ছেন। শনিবার সকাল থেকেই ফোনে চাকরিপ্রার্থীদের একাংশের ‘অন্যায় আবদার’ ও হুমকি শুনতে শুনতে বিরক্তির চরমসীমায় পৌঁছে গিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের নবনিযুক্ত সভাপতি গৌতম পাল। উষ্মা প্রকাশ করে তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, এমন চলতে থাকলে ব্যাপারটা তিনি প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ে জানাবেন। নেবেন কঠোর ব্যবস্থা।
শিক্ষক নিয়োগের জন্য নতুন করে টেট (টিচার্স এলিজিবিলিটি টেস্ট) নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ। ইতিমধ্যে পর্ষদের তরফে প্রতিটি জেলা থেকে জরুরি ভিত্তিতে পরীক্ষাকেন্দ্রের তালিকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে, যা পরবর্তী টেট আয়োজনের ইঙ্গিতবাহী। পরবর্তী তথা নতুন প্রাথমিক টেট পরীক্ষা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হতে পারে আগামী সপ্তাহেই। প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ সূত্রে খবর, ৯ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার পর্ষদের নবনির্মিত ১১ সদস্যের অ্যাড-হক কমিটির প্রথম বৈঠক হতে চলেছে। সেখানেই পরবর্তী টেট নিয়ে আলোচনা ও তার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হতে পারে। পর্ষদ সূত্রে খবর, পুজোর পরেই টেট পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সম্ভবত অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে। যা আশার আলো দেখাচ্ছে ২০১৭ সালের পরে শিক্ষক প্রশিক্ষণের কোর্স সম্পূর্ণ করা প্রার্থীদের।
[আরও পড়ুন: ‘আমরা খেলছি, আগামিদিনে আরও ভাল খেলা হবে’, দিলীপের গলায় তৃণমূলের স্লোগান]
বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শনিবার সকাল থেকে উৎপাত শুরু, গৌতমবাবুকে ফোনের বন্যা। “কেউ নিজেদের ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী বলে পরিচয় দিচ্ছেন। কেউ বলছেন, স্যর শুনলাম আপনি টেট নিচ্ছেন! কেন নিচ্ছেন? আগে আমাদের নিয়োগের ব্যবস্থা করুন।” জানাচ্ছেন পর্ষদ সভাপতি। কারও নিপাট আবদার, “স্যর প্লিজ, টেট নেবেন না।” এখানেই শেষ নয়। গৌতমবাবুর দাবি, আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে মেসেজ এসেছে তাঁর ফোনে। তাঁর কথায়, “একটি ছেলে মেসেজ করেছে, আমি খুব মানসিক অবসাদে রয়েছি। যদি আমি আত্মহত্যা করি, তার দায় কিন্তু আপনার এবং রাজ্য সরকারের।”
প্রথমদিকে প্রায় কুড়ি-পঁচিশটি ফোন তুলে সকলকে বোঝানোর, আশ্বস্ত করার চেষ্টা করেছিলেন পর্ষদ সভাপতি। কিন্তু কাজ হয়নি। উলটে পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছয় যে, অচেনা নম্বর থেকে আসা ফোন ধরা বন্ধ করে দেন। গৌতমবাবু বলেন, “মুহুর্মুহু ফোন আসছিল। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ফোন ধরেছি পরপর। আমি ওদের বলেছি, আমায় সবার স্বার্থ দেখতে হবে। তোমাদের দিকটাও দেখব। তবু ফোন আসা থামেনি। আর অচেনা নম্বরের ফোন ধরিনি। তারপরেও সারাদিন ধরে অনবরত ফোন করে যাচ্ছে। আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে মেসেজ আসছে।”
[আরও পড়ুন: ‘কলা চোর সিপিএম’, বর্ধমানের ভাইরাল ভিডিও লুট হওয়া ফলের দোকান সাজিয়ে দিল তৃণমূল]
জানা গিয়েছে, আত্মহত্যার হুমকি দিয়ে পর্ষদ সভাপতিকে মেসেজটি করেছেন ২০১৭ সালের প্রাথমিক টেট উত্তীর্ণ প্রার্থী আবিদ হাসান। ফোনে যোগাযোগ করা হলে আবিদ বলেন, “আমি এই মুহূর্তে প্রচুর মানসিক অবসাদে আছি। খবরটা শোনার পর থেকে মাথা ঘুরছে। আমাদের ব্যাপারে তো কিছু বলছে না! আমার উপর গোটা সংসারের দায়িত্ব। আমি ভিতর থেকে পুরো মরে গিয়েছি, ভেঙে পড়েছি। এ রকম চলতে থাকলে বাধ্য হয়ে আত্মহত্যা করতে হবে। স্যরের সঙ্গে ফোনে কথা বলতে পারিনি। বলতে পারলে হয়তো আশ্বস্ত হতে পারতাম।” আবিদের দাবি, শুধু তিনি নন, নতুন টেটের সংবাদে ভেঙে পড়েছেন ২০১৭ সালের টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীদের অধিকাংশই।
পর্ষদ সভাপতি যদিও বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না। তাঁর বক্তব্য, “এরকম মেসেজ দেওয়াটা ঠিক নয়। আর ওরা স্পষ্ট বলছে, টেট বন্ধ করুন! ওরা বললে তো টেট বন্ধ হবে না। আমায় সবার স্বার্থে কাজ করতে হবে। তাও ওরা উত্যক্ত করছে। হুমকি দিচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে আমি কঠোর হতে এবং ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে। প্রশাসনকেও জানাব।”