shono
Advertisement

মহাকাব্য থেকে ধর্মবিশ্বাস, জানুন কৃষ্ণ জন্মকথার অন্তর কাহিনি

জেনে নিন পৌরাণিক গল্পগাথা। The post মহাকাব্য থেকে ধর্মবিশ্বাস, জানুন কৃষ্ণ জন্মকথার অন্তর কাহিনি appeared first on Sangbad Pratidin.
Posted: 03:35 PM Aug 24, 2019Updated: 03:36 PM Aug 24, 2019

বৈষ্ণব মতে জন্মাষ্টমী পালিত হবে আজ। পুরাণকথা শোনাচ্ছেন সুমন গুপ্ত

Advertisement

দৈত্য-দানবের অত্যাচারে ধরিত্রী মাতার তখন দুঃসহ অবস্থা। তিনি কষ্ট সহ্য করতে না পেরে প্রজাপতি ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন। ক্ষীরসমুদ্রে ভগবান বিষ্ণু তখন অনন্ত শয়ানে। ব্রহ্মা ধরিত্রী মাতার সঙ্গে সেখানে উপস্থিত হলেন। সেখানে মহাদেব, দেবরাজ ইন্দ্র এবং আরও কয়েকজন দেবতা রয়েছেন। ইতিপূর্বে বিষ্ণু বরাহ অবতার রূপে পৃথিবীকে রক্ষা করেছিলেন। একাগ্রচিত্তে পুরুষসূক্ত স্তব উচ্চারণ করে শ্রীহরির আরাধনা শুরু করলেন ব্রহ্মা।

বিষ্ণু প্রসন্ন হলেন ব্রহ্মার স্তবে। বিষ্ণু ব্রহ্মাকে আশ্বস্ত করলেন ধরাধামে অবতীর্ণ হয়ে লীলা করবেন। ধরিত্রীকে রক্ষা করবেন। ঋগবেদ সংহিতায় আয়ু এক ঐতিহাসিক রাজা হিসাবে স্বীকৃত। আয়ুর পুত্র নহুষ। নহুষের পুত্র যযাতি। যযাতির পাঁচ পুত্র। জ্যেষ্ঠ যদু, কনিষ্ঠ পুরু। অন্য তিনজনের নাম যথাক্রমে তুর্ব্বসু, দ্রুহু্য এবং অণু। প্রথম চার পুত্র তাঁর আজ্ঞা পালন না করায় যযাতি কনিষ্ঠ পুত্রকে রাজ্যাভিষিক্ত করেন। যুধিষ্ঠির, দুর্যোধন এঁরা পুরুর বংশ। কৃষ্ণ প্রমুখ যাদবরা যদুর বংশ। যযাতিপুত্র যদু থেকে মথুরাবাসী যাদবদের উৎপত্তি।

[ আরও পড়ুন: পুণ্যার্জন করতে চান? জন্মাষ্টমীতে এই নিয়মগুলি অবশ্যই মেনে চলুন ]

কৃষ্ণ যে যদুবংশে জন্মগ্রহণ করেন, ওই বংশে মধু, সত্ত্বত, বৃষ্ণি, অন্ধক প্রমুখ রাজা জন্মগ্রহণ করেছিলেন। কৃষ্ণ বৃষ্ণিবংশীয়। কংস এবং দেবকী ভোজবংশীয়। কংসের পিতা উগ্রসেন যাদবদের নেতৃস্থানীয় ছিলেন। উগ্রসেনের ভাই দেবকের কন্যা দেবকী। যদুবংশীয় রাজা শূরসেনের পুত্র বসুদেব দেবকীকে বিবাহ করে মথুরার উদ্দেশে রওনা হলেন। কংস ভগিনীকে খুশি করার জন্য নিজেই সেই সুবর্ণমণ্ডিত রথের সারথি হলেন। পিতৃগৃহ থেকে বিদায় নেওয়ার সময় বসুদেব ও দেবকীর সম্মানার্থে শঙ্খ, তূর্য, মৃদঙ্গ, দুন্দুভি ইত্যাদি মঙ্গলবাদ্য বাজতে লাগল। কিন্তু তাতে হঠাৎ ছন্দপতন ঘটল। এমন সময় দৈববাণী হল, ‘রে অবোধ যাহাকে তুমি রথে করিয়া পতিগৃহে লইয়া যাইতেছ, সেই দেবকীর অষ্টমগর্ভের সন্তান তোমার প্রাণনাশ করিবে।’

এরকম ভীতিপ্রদ এক দৈববাণী শুনে কংস একহাতে দেবকীর কেশ আকর্ষণ করে অসির সাহায্যে তাঁকে বধ করতে উদ্যত হলেন। নব বিবাহিতা পত্নীকে মৃত্যুর মুখোমুখি হতে দেখে কয়েক মুহূর্ত কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে রইলেন বসুদেব। তারপর সাহস সঞ্চয় করে নানাভাবে বুঝিয়ে কংসকে নিরস্ত করলেন। বললেন, “দেবকী আপনার ছোট বোন। ওর দিক থেকে আপনার কোনও ভয় নেই। ভয় ওর পুত্রদের নিয়ে। আমি প্রতিজ্ঞা করছি দেবকীর গর্ভজাত পুত্রদের আপনার হাতে সমর্পণ করব।” দেবকী ও বসুদেবকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করে কারাগারে নিক্ষেপ করলেন কংস। তাঁদের প্রথম ও পরে ছয় সন্তানকে একে একে হত্যা করলেন।

সন্তানের মৃত্যুতে দেবকী ভেঙে পড়েছেন। এরকম অবস্থায় ভগবান শ্রীশেষজি এলেন দেবকীর গর্ভে। পুনরায় মা হওয়ার আনন্দে দেবকী দিন গুনছেন। কিন্তু কংসের ভয়ে তাঁর শোক বাড়ল। এদিকে বিষ্ণুর আদেশে দেবী যোগমায়া পৃথিবীতে এসে বসুদেবের আর এক পত্নী রোহিণীর গর্ভে দেবকীর গর্ভস্থ সন্তানকে সংস্থাপন করলেন। মথুরাবাসী দেবকীর গর্ভ নষ্ট হয়েছে বলে জল্পনা করতে লাগল। ওদিকে গোকুলের ঘোষপল্লির এক সুরম্য আলয়ে রোহিণী এক পুত্রসন্তানের জন্ম দেন। এই পুত্র বলভদ্র বা বলরাম। সময় গড়ায়। শুদ্ধসত্ত্বময়ী দেবকী বিষ্ণু ভগবানকে পরিপূর্ণভাবে হৃদয়ে ধারণ করলেন। ভগিনীকে দেখে কংসের কেন জানি না মনে হল, এবার নিশ্চয়ই বিষ্ণু গর্ভে এসেছেন। কারণ, প্রায়শই দেবকীর অঙ্গচ্ছটায় কারাগৃহ উদ্ভাসিত হয়ে উঠত। কংস কারাগারে পাহারা আরও বাড়িয়ে দিলেন।

কৃষ্ণাবতারের রূপ পরিগ্রহ করে পৃথিবীকে রক্ষা করার জন্য প্রকট হবেন বিষ্ণু। দেবতারা দেবকীকে দর্শনদান করে বললেন, ‘অত্যন্ত আনন্দের কথা, আপনার অষ্টম গর্ভে সর্বলোকের কল্যাণকারী ভগবান পুরুষোত্তম বিরাজমান। দুর্মতি কংস কয়েকদিনের অতিথিমাত্র। আপনার পুত্র যদুবংশকে রক্ষা করবেন।’ যথাসময়ে বিষ্ণু পৃথিবীতে আবির্ভূত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন। ভাদ্রমাসের মধ্যরাত। যে মুহূর্তে শ্রীকৃষ্ণরূপী ভগবান বিষ্ণু কংসের কারাগারে জন্মগ্রহণ করলেন তখনকার অবস্থা বর্ণিত হয়েছে শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণের দ্বিতীয় খণ্ডে। কিন্নর ও গন্ধর্বরা মধুর স্বরে গেয়ে উঠলেন। অপ্সরাগণ নাচতে লাগলেন। জগৎপালক বিষ্ণুর মঙ্গলময় গুণাবলির স্তুতি করতে লাগলেন চারণদল। দেবতা এবং ঋষি-মুনিরা ঐনন্দে পুষ্পবৃষ্টি করতে লাগলেন।

[ আরও পড়ুন: অদ্বৈতভূমি নদিয়ার শান্তিপুরে ‘মানুষ ঝুলন’! আজও জমে পর্যটকদের ভিড় ]

চারদিকে ঘন অন্ধকার। বিষ্ণু দেবকীর গর্ভ থেকে প্রকট হলেন। তৎক্ষণাৎ যেন পূর্ব দিগন্তে ষোলোকলা পূর্ণ চাঁদের উদয় হল। বসুদেব অভিভূত হয়ে দেখলেন তাঁর সামনে বিচিত্রদর্শন এক শিশু! দু’নয়ন কমলের ন্যায় এবং বিশাল। চতুর্ভুজ। শঙ্খ-চক্র-গদা-পদ্মধারী। বক্ষস্থলে শ্রীবৎস চিহ্ন। কণ্ঠে কৌস্ত্তভমণি। শ্রীঅঙ্গে মনোহর পীতাম্বর বস্ত্র। নানা আভূষণ সুশোভিত দেবশিশুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে অপূর্ব জ্যোতি ঠিকরে বেরোচ্ছে।

নবজাতকের এহেন রূপ দেখে বসুদেব নির্বাক! নবজাতকের দর্শন মাত্র বসুদেবের কংসভয় দূর হল। দেবকী এবং বসুদেব স্তব করতে লাগলেন। বিষ্ণু তাঁর পূর্ণ স্বরূপ প্রকাশ করলেন। আপন যোগমায়ায় এক সাধারণ শিশুর রূপ ধারণ করলেন। বুধবার কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে রোহিণী নক্ষত্রযোগে শ্রীকৃষ্ণের পুণ্য আবির্ভাবে মথুরার মাটি পবিত্র হল। ঠিক সেই মুহূর্তে আকাশ মেঘযুক্ত। মুহুর্মুহু মেঘগর্জন। যে মুহূর্তে কৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করেন যশোদার এক কন্যাসন্তান ভূমিষ্ঠ হল। পুরাণে কথিত এই সন্তানই যোগমায়া বা বৈষ্ণবী শক্তি যোগনিদ্রা। তাঁর প্রভাবে যশোদা অর্ধসচেতন হয়ে রইলেন। সন্তান জন্মগ্রহণ করেছে জানতে পারলেও সেটি পুত্র না কন্যা বুঝতে পারেননি নন্দপত্নী।

যোগমায়ার আবির্ভাবের পর তাঁর প্রভাবে কংসের কারাগারের প্রহরীবৃন্দ ও মথুরাবাসীগণ নিদ্রায় সংজ্ঞাশূন্য হয়ে পড়ল। কৃষ্ণকে কোলে নিয়ে বসুদেব আসতেই কারাগারের বৃহৎ লৌহকপাট ও লোহার শেকলযুক্ত দ্বার একে একে উন্মুক্ত হল। বসুদেব কারাগারের বাইরে বেরিয়ে আসতেই মেঘগর্জন ও তুমুল বৃষ্টিপাত শুরু হল। অনন্তনাগ সহস্র ফণা বিস্তার করে বৃষ্টি নিবারণের জন্য বসুদেবের মাথার উপর আচ্ছাদন হয়ে পিছন পিছন যেতে লাগলেন। প্রবল বৃষ্টির কারণে স্রোতস্বিনী যমুনার তখন ভয়ংকর চেহারা। যমুনা পথ দেখালেন বসুদেবকে। বসুদেব নন্দালয়ে উপস্থিত হয়ে দেখলেন ব্রজবাসী সকলেই যোগনিদ্রায় মগ্ন। তখন তিনি সূতিকাগারে যশোদার শয্যায় নিজপুত্রকে রেখে যশোদার নবজাতিকাকে সঙ্গে নিয়ে কংসের কারাগারে ফিরে গেলেন। দেবকীর শয্যায় তাকে রাখতেই কারাগারের লৌহকপাটগুলি বন্ধ হয়ে গেল।

এদিকে কংস খবর পেয়ে সূতিকাগৃহে এসে দেখলেন নবজাতক নয়, এক নবজাতিকা আপনমনে খেলা করছে। এরপর শিশুটিকে শিলায় আছাড় মারার চেষ্টা করতেই সে কংসের হাত পিছলে আকাশে উঠে পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে দৈববাণী হল- ‘হে দুরাচার কংস, তোমাকে যে হত্যা করবে সে ইতিমধ্যেই জন্মগ্রহণ করেছে। তোমাকে বধিবে যে গোকুলে বাড়িছে সে।’

শ্রীকৃষ্ণের জন্ম পাঁচ হাজার দুশো পঁয়তাল্লিশ বছর পূর্বে। তিনি অপ্রকট হন খ্রিষ্টপূর্ব তিন হাজার একশো এক বছর পূর্বে শুক্রবার মাঘী পূর্ণিমায়। সেই থেকে কলিযুগের শুরু। এই ধরাধামে লীলা করেন একশো পঁচিশ বছর।

The post মহাকাব্য থেকে ধর্মবিশ্বাস, জানুন কৃষ্ণ জন্মকথার অন্তর কাহিনি appeared first on Sangbad Pratidin.

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement
toolbarHome ই পেপার toolbarup রাজধানী এক্সপ্রেস toolbarvideo ISL10 toolbarshorts রোববার