বিশাখা পাল: ‘আ ওয়েনসডে’ মুক্তি পাওয়ার পর সবাই মনে করেছিল, “সত্যিই। কমন ম্যান কীই না করতে পারে!” ‘বর্ণপরিচয়’ দেখার পরও দর্শকের মনে ঠিক কথাটাই ফিরে আসতে বাধ্য। তবে এখানে পৌনে দু’ঘণ্টা জুড়ে রয়েছে রহস্যের বাতাবরণ। একজন একের পর এক খুন করছে, আর পরের খুনের জন্য ক্রাইম সিনে রেখে আসছে সূত্র। এমন ঘটনা গল্পের বইয়ে বহুবার আমরা পড়েছি। ‘বর্ণপরিচয়’ সেইসব গল্পের গল্প যেন পর্দায় প্রতিফলিত করেছে।
[ আরও পড়ুন: বাঁধুনিতেই দুর্বলতা ‘সিতারা’র, ছবি তেমন উপভোগ্য হল কই? ]
গল্পের প্লটের জন্য মৈনাক ভৌমিককে বাহবা দিতেই হবে। নিজের গড়পড়তা ইমেজ তিনি নিজেই অনেকদিন আগে ভেঙেছেন। তবে তিনি চ্যালেঞ্জ নিতে সক্ষম তা প্রমাণ করছেন পরিচালক। ছকভাঙা সিনেমা ‘বর্ণপরিচয়’ নয়। কিন্তু রহস্য, পুলিশ, ধাঁধাঁর পাশাপাশি মধ্যবিত্ত বাঙালিকে জড়িয়ে পরিচালক চিত্রনাট্য বেঁধেছেন ভালই। শেষ কয়েকঘণ্টা পর্যন্ত টানটান উত্তেজনা ধরে রাখতে তিনি সম্পূর্ণ সফল। ছবির শেষের আধঘণ্টা আগেও দর্শক বুঝে উঠতে পারবে না খুনির মোটিভ। তবে পর্দার এপারে থাকার দৌলতে খুনি দর্শকের প্রথম থেকেই পরিচিত।
‘বর্ণপরিচয়’ দেখার পর মনে হয়েছে নেগেটিভ চরিত্রে আবিরকে এবার সত্যিই ভাবতে পারেন পরিচালকরা। ‘রাজকাহিনী’ ছবিতে আবিরের চরিত্রটি প্রতিশোধপরায়ণ শিক্ষকের ছিল। অবশ্যই সেটি নেতিবাচক। কিন্তু এখানে আবির আরও পরিণত। প্রতিশোধস্পৃহা তাঁর এক্সপ্রেশনে ফুটে উঠেছে শেষের টাগ-অফ-ওয়ারের সময়। আর বাকি ছবিতে ঠান্ডা মাথার খুনি হিসেবে তিনি ফুল মার্কস পেয়ে পাশ করেছেন। তবে এখানে একটা কথা বলতেই হয়। আবির তবু ভাল অভিনয়ের জন্য চিত্রনাট্যের খানিকটা সহায়তা পেয়েছেন। কিন্তু যিশু তা পাননি। কিন্তু মদ্যপ প্রাক্তন পুলিশ অফিসারের চরিত্রটি তিনি অসাধারণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
[ আরও পড়ুন: ফিরল সিম্বা, দেখা হল সেই নস্ট্যালজিয়ার সঙ্গে ]
পুলিশ অফিসার ধনঞ্জয় একজন খুনির পিছনে ধাওয়া করতে করতে ক্লান্ত। ব্যর্থতা ঢাকতে অ্যালকোহলে ডুব দিয়েছে সে। স্ত্রী-সন্তান এই কারণেই তার থেকে দূরে সরে গিয়েছে। এমন একটি চরিত্রে যিশুর অভিনয় অত্যন্ত সাবলীল। ধনঞ্জয় এমন এক পুলিশ অফিসার যে কবিতা ভালবাসে। তাই খুনি তাকে কবিতার মাধ্যমেই পাঠায় প্রথম ক্লু। রহস্যের খাসমহলের সিংহদ্বার এখানেই। একটার পর একটা খুন, পরের খুনের ক্লু, পুলিশের ধাঁধাঁর সমাধান, সব মিলিয়ে বলা যেতে পারে বাংলা ছবিতে এমন থ্রিলার বেশ কিছুদিন অনুপস্থিত ছিল। ছবির মাঝখানে বোঝা যায় সিরিয়াল কিলার আবির আদতে একদন শিক্ষক। এমন একটি পেশার মানুষ কীভাবে খুনি হতে পারে তা জানতে ছবির শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। বিশেষত তাঁর খুনের প্যাটার্নের সঙ্গে ‘পঞ্চভূত’-এর সম্পর্ক বেশ ইন্টারেস্টিং।
থ্রিলার যে বাঙালির অন্যতম প্রিয় ঘরানা, মৈনাক আবার সেকথা মনে করিয়ে দিলেন। তার উপর যিশু আর আবিরের অভিনয় অসাধারণ। প্রিয়াঙ্কা সরকার তাল রেখে অভিনয় করে গিয়েছেন। মিঠু চক্রবর্তী আর সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বেশি কিছু করার ছিল না। সব মিলিয়ে ‘বর্ণপরিচয়’ দশে দশ না পেলেও ভাল মার্কস নিয়েই পাশ করবে বলে মনে হচ্ছে।
The post শুরু থেকে শেষ টানটান উত্তেজনা, সাসপেন্সেই বাজিমাত ‘বর্ণপরিচয়’-এর appeared first on Sangbad Pratidin.