লোন এগেনস্ট সিকিউরিটিজ তথা ল্যাস সম্পর্কে জানেন তো? হালে বেশ জনপ্রিয় এটি। ওভারড্রাফটের সঙ্গে মিলও রয়েছে। ঋণ নিতে হলে, সিকিউরিটিজ প্লেজ করে, তাকে কোল্যাটারাল হিসাবে রেখে নিতে হবে। এই নিয়ে বিস্তারিত তথ্য সংকলনে নীলাঞ্জন দে
বাজারে লোন প্রকল্পের অভাব নেই, তবে অনেক ধরনের ঋণ নেওয়ার সুবিধা থাকলেও ব্যতিক্রমগুলি হাতেগোনা। ‘লোন এগেনস্ট সিকিউরিটিজ’ (Loan Against Securities বা সংক্ষেপে ল্যাস) ইদানীং বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। বিভিন্ন ব্রোকিং এবং ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস সংস্থা LAS-এর (ল্যাস) ব্যাপারে ক্লায়েন্টদের উৎসাহ দিয়ে থাকে। সেই নিয়েই এই লেখা।
লগ্নিকারীদের বলে রাখি যে ল্যাস প্রায় ওভারড্রাফটের সমতুল্য হিসাবে গণ্য করা যায়। সিকিউরিটিজ প্লেজ করে, সেগুলিকে কোল্যাটেরাল হিসাবে রেখে, ঋণ নিতে পারেন। সেই সমস্ত সিকিউরিটিজ বিক্রি করে ঘরে টাকা তুলে আনার তাই দরকার পড়ে না, কেবলমাত্র লেভারেজ করেই সাময়িকভাবে টাকার সংস্থান করে নেওয়া সম্ভব হয়। ক্ষেত্রবিশেষে ৬০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত লোন পাওয়া যেতে পারে, বেশি হওয়াও অসম্ভব নয় (শর্তসাপেক্ষ)। কী শ্রেণির ফাইন্যান্সিয়াল প্রোডাক্ট কোল্যাটেরাল-স্বরূপ আনছেন, তা এখানে অন্যতম বিবেচ্য। ‘ইন্সট্যান্ট লিকুইডিটি’ হাতের মুঠোয় চলে আসে সব কিছু ঠিক থাকলে।
[আরও পড়ুন: কোন শ্রেণির অ্যাসেটে ঠিক কতখানি বিনিয়োগ, জেনে নিন লগ্নির গূঢ়কথা]
বিনিয়োগকারী তথা সিকিউরিটিজ হোল্ডার এক্ষেত্রে কয়েকটি কথা মনে রাখুন–
l প্লেজ করা অ্যাসেট (যেমন স্টক বা ফান্ড) আপনারই থাকবে, মালিকানার হস্তান্তর হবে না।
l লোনের উপর সুদ দিতে হবে শুধু ব্যবহৃত অংশটুকুর জন্যে।
l সাধারণত কোন ফোরক্লোজার চার্জ হয় না, তবে সার্ভিস চার্জ থাকলেও থাকতে পারে।
এখন প্রশ্ন, কোন ধরনের অ্যাসেট ‘বাঁধা’ রাখা যেতে পারে? শেয়ার, ডেবেঞ্চার, বন্ড তো সাধারণ উদাহরণ হিসাবে বলা যায়। এছাড়াও সরকারি ঋণপত্র বা স্মল সেভিংস ইন্সট্রুমেন্ট (যেমন ন্যাশনাল সেভিংস সার্টিফিকেট বা কিষাণ বিকাশ পত্র) সহায় করে এগিয়ে যাওয়া সম্ভব। এ সমস্ত প্লেজ করলে যে সুবিধাগুলি পাবেন সেগুলির মধ্যে প্রধানটি হল তাৎক্ষণিকভাবে টাকা পাওয়ার সুযোগ। রিপেমেন্ট আপনি নিজস্ব সময়সূচী অনুযায়ী করতে পারেন। যদিও সংস্থার সঙ্গে সম্পর্ক এবং অবশ্যই ঋণদাতা সংস্থার নিয়মকানুন এখানে প্রধান বিবেচ্য, তাহলেও বলা চলে যে ৮ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশ সুদের হার হতে পারে। তবে সাধারণভাবে এই লোনের টার্ম এক বছরের জন্য হয়। কারণ যে ‘এলিজিবিলিটি’ শর্তাবলী থাকে সেগুলি সোজাসাপ্টা, বিশেষ কোনও কড়া নিয়ম থাকে না। যখন ‘রিপেমেন্ট’ করবেন, মানে বকেয়া টাকা ফেরত দেবেন, তখন সেই টাকা নির্দিষ্টভাবে দিয়ে দিতে হবে। তারপরই আপনার বাঁধা রাখা অ্যাসেট ‘ফ্রি’ বা মুক্ত হয়ে যাবে, আপনি সুবিধামতো তা বিক্রি করতেও পারবেন যদি প্রয়োজন হয়।
উদাহরণ হিসাবে টাটা ক্যাপিটালের লোন প্রকল্পের কথা বলা যায়, কোনও ধরনের পক্ষপাত ছাড়াই। কাস্টমারদের ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন দিতে পারে বলে সংস্থাটি জানাচ্ছে। তাঁরা নিজেদের শেয়ার প্লেজ করতে পারেন এই জন্য। অবশ্য লোনের পরিমাণ নির্ভর করে শেয়ার ভ্যালুর উপর। পদ্ধতি সম্পূর্ণভাবে ‘পেপারলেস’ হতে পারে। কেওয়াইসি থেকে প্লেজ, সবটাই হতে পারে অনলাইন।
বাজাজ ফিনসার্ভের মতে বেশ কিছু ‘অ্যাপ্রুভড’ সিকিউরিটিজ আছে, যেগুলি প্লেজ করা রীতিমতো সহজ। সংস্থাটি ১০ কোটি টাকা পর্যন্ত লোন দিতে পারে, এবং সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ফি বা অন্যান্য চার্জ যথেষ্ট সুবিধাজনক।
সঞ্চয়-এর বক্তব্য
বিভিন্ন ব্যাংক, ফাইন্যান্স কোম্পানি ল্যাস নিতে সাহায্য করে। রেটের তারতম্য থাকলেও তা প্রবল নয়। সুদ দিতে হবে ব্যবহৃত অংশের উপর, পুরো লোনের জন্য নয়। তাই এই সুবিধা নেওয়া যেতেই পারে। স্টক বা বন্ড বা অন্য কিছু (যা-ই প্লেজ করা হোক না কেন) একেবারেই মালিকেরই থাকবে, আর সেজন্য হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার ভয় প্রথমেই থাকে না। তাৎক্ষণিক উপকারিতার কথা মাথায় রেখে ল্যাস নেওয়া যেতে পারে, তবে প্লেজ করা অ্যাসেটের ভ্যালু যদি ঘন ঘন বদলায়, তাহলে হিসাব গুলিয়ে যেতে বেশিক্ষণ লাগবে না। ইনভেস্টর যেন এ ব্যাপারে সতর্ক থাকেন, ইন্টারেস্ট জমতে না দেন, সময়মতো পেমেন্ট করে যাওয়াই সমীচিন। লোন নিয়ে, বাঁধা রাখার পর, ঠিক কী করবেন, সে ব্যাপারে যেন স্পষ্ট ধারণা থাকে, না থাকলেই মুশকিল।