সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম-এর (Michaung) প্রভাবে কার্যত ছারখার চেন্নাই। জলমগ্ন শহরের অধিকাংশ এলাকা। ব্যাহত পরিবহণ, চরম জেরবার জন-সাধারণ। কিন্তু একা চেন্নাই নয়। জলবায়ু সংক্রান্ত যে কোনও বিপর্যয়, যেমন সাইক্লোন বা টানা বৃষ্টিতে বন্যা–দেখা দিলেই বার বার প্রকাশ্যে আসে দেশের উপকূলীয় শহরগুলির দৈন্যদশা।
প্রাকৃতিক প্রতিকূলতার মুখে পড়লে এখনও দেশের একাধিক সমুদ্র উপকূলবর্তী শহর যে কত গভীর সমস্যায় জড়িয়ে পড়ে, মিউজাউমের প্রভাবে চেন্নাইয়ের সাম্প্রতিক ছবিটাই তার জ্বলন্ত প্রমাণ। উদ্বেগের বিষয় হল, বছর দুয়েক আগের এক সমীক্ষার ফল বলছে–জলবায়ু-গত বিপর্যয়ের ফলে ঝুঁকির মুখে রয়েছে দেশের অন্তত ১২টি উপকূলীয় শহর (Coastal City)। যেমন মুম্বই, কলকাতা, চেন্নাই, কোচি, বিশাখাপত্তনম প্রভৃতি। শুধু তাই নয়, ‘ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ’ (আইপিসিসি) শীর্ষক ওই সমীক্ষা-রিপোর্ট অনুযায়ী, যে দ্রুততার সঙ্গে এই সমস্ত শহরের সমুদ্রের জলতল ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে এই শতকের শেষে এই ১২টি শহরের সলিলসমাধি হতে পারে। মুম্বই-চেন্নাই-কোচি-বিশাখাপত্তনমের মতো কিছু শহর, সমুদ্রের তলায় অন্তত ৩ ফুট চলে যেতে পারে।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়, তা হল– এই ধরনের সমীক্ষা এক বার নয়। একাধিক বার হয়েছে। আইপিসিসি-র রিপোর্ট ছাড়াও এই বিষয়ে গবেষণা চালিয়েছে বিশ্ব ব্যাঙ্কের উদ্যোগে হওয়া পোস্টডাম ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট ইমপ্যাক্ট রিসার্চ অ্যান্ড ক্লাইমেট অ্যানালিটিক্স। তাদের গবেষণার ফলেও আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে ভারতের উপকূলবর্তী শহরগুলির ভবিষ্যৎ নিয়ে। যেহেতু উপকূল-স্থিত, তাই লবণাক্ত জলের প্রভাবে এই সমস্ত শহরে ভূমিক্ষয়-কৃষিজ ফসলের গুণমাণ হ্রাস এবং ভৌমজলে ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদানের পরিমাণ বৃদ্ধির মতো ঘটনা ঘটে চলেছে আকছার।
এর পাশাপাশি অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নগরায়নের কুপ্রভাব, উষ্ণায়নের জের, গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি, জলবায়ু পরিবর্তনের কুফল, এগুলি তো আছেই। মনে রাখতে হবে, দেশের উপকূলীয় শহরগুলিতে প্রচুর মানুষেরও বাস। কাজেই, পরিবেশগত বিপর্যয়ের সবচেয়ে বড় প্রভাব এঁদের উপরই পড়তে বাধ্য। আর চেন্নাইয়ের মতো ভারত মহাসাগরের নিকটবর্তী শহরে আগেও বন্যার জেরে ভয়াবহ বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে (২০১৫ সালে)। তবে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বিজ্ঞানীরা তঁাদের গবেষণা-রিপোর্টে আরও দাবি করেছেন যে, শুধু উপকূলীয় শহরই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কুফলের জেরে ক্ষতির মুখে পড়ছে দিল্লি-সহ বিহার, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ডের বেশ কিছু ‘ইনল্যান্ড’ তথা সমুদ্র থেকে দূরবর্তী, মূলত অভ্যন্তরীণ শহরও।
[আরও পড়ুন: লাডলিদের হাত ধরেই মধ্যপ্রদেশে গেরুয়া ঝড়, বেহনাদের পা ধোয়ালেন ‘ভাই’ শিবরাজ]
চলতি বছরেরই জুলাই মাসে দিল্লির বন্যার কথা এক্ষেত্রে না উল্লেখ করলেই নয়। টানা বৃষ্টিতে যমুনার জল এক ধাক্কায় বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২০৮.৪৮ মিটারে, যার জেরে রাজধানী শহরের নিচু এলাকাগুলি বেশ কিছু দিন ছিল জলের তলায়।